ভালোবাসুন সুন্দরবনকেও
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪৪
বাঘ কি মানুষ খায়? সুন্দরবনের বনজীবীরা বিশ্বাস করেন বাঘ নয়, বাঘের রূপ ধরে দক্ষিণ রায় মানুষ খায়। মানুষ কি বাঘ মারে? বনজীবীদের মতে মানুষ নয়, মানুষরূপী কোনো অবিবেচক অমানুষ কখনও কখনও বাঘ হত্যা করে। একক আয়তনে দুনিয়ার সবচে’ বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনে এভাবেই বাঘে-বনজীবীতে রচিত হয়েছে এক ঐতিহাসিক ‘সম্পর্কের বিজ্ঞান’।
সমস্যা হলো সুন্দরবনের এ সম্পর্কের বিজ্ঞান বারবার ক্ষতবিক্ষত ফালি-ফালি হয় বহিরাগত মারদাঙ্গা উন্নয়ন ও বাহাদুরির চাপে। তারপরও শতো-সহস্র উন্মত্ত তুফানের বিক্ষুব্ধ মাতব্বরি সয়ে সুন্দরবন টিকে আছে। নিজের শরীর রক্তাক্ত করে সুরক্ষা দিয়ে চলেছে বাংলাদেশের শরীরকে। বাঁচিয়ে রাখছে দুনিয়ার প্রাণসঞ্চারী ভিত। আজ সুন্দরবন দিবসে সুন্দরবন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনায় এই প্রচলিত কথনটিই মনে এলো।
‘বনবিবির কেরামতি’ অর্থাৎ ‘ধেনামৌলে ও দুঃখের পালা’ সুন্দরবন অঞ্চলে এক বহুল পঠিত পুঁথি। বনবিবির আখ্যান-মতে, দণ্ডবক্ষ ও রায়মণি নামে দেওজাত রাক্ষস ৩৭ কোটি পিশাচ সেপাই-লস্কর নিয়ে সুন্দরবন দখল করে। তারই পুত্র দক্ষিণ রায় পরে আরও অত্যাচারী হয়ে ওঠে। দক্ষিণ রায় বাঘের রূপ ধরে মানুষ খায়। এরপর বনজীবী মৌয়াল পরিবারের সন্তান দুঃখে বাদাবনের রক্ষাকারী বনবিবির আর্শীবাদে দক্ষিণ রায়কে পরাস্থ করেন। হাজার বছর ধরে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ বিশ্বাস করে মা বনবিবিই সুন্দরবনের রক্ষাকবচ।
কিন্তু নয়া-উদারবাদী বাহাদুরি সুন্দরবনের এ ‘সম্পর্কের বিজ্ঞান’কে মানতে নারাজ। এরই ধারাবাহিকতায় সুন্দরবনের ৫ ও ৭ নম্বর ব্লকে বহুজাতিক শেল ও কেয়ার্ণকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমতি দেয় রাষ্ট্র। যদিও গণআন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে তা বাতিল হয়। ১৯৯৯ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক ৭ বছরের জন্য ‘সুন্দরবন প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্প’ হাতে নেয়, সেটিও পরবর্তীতে স্থানীয়দের আন্দোলনে স্থগিত হয়ে যায়।
সুন্দরবন এক ঐতিহাসিক বিজ্ঞান
ঐতিহাসিক শ্রী সতীশ চন্দ্র মিত্র’র দুইখণ্ডে রচিত ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’-এর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে। ১৯২৩ সনের ১৩ মার্চ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বইটি সম্পর্কে সতীশ চন্দ্র মিত্রকে জানান, আপনি ঐতিহাসিক, আপনাকে একথা বলাবাহুল্য যে, ইতিহাস দেশের গৌরব ঘোষণার জন্য নহে, সত্য প্রকাশের জন্য।
সতীশ চন্দ্র মিত্র তার যশোহর খুলনার ইতিহাসে সুন্দরবনের সেই সত্যকেই প্রকাশ করেছেন, দুনিয়ার বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে এর দেশীয় গৌরব তুলে ধরেননি। প্রথম খণ্ডের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ থেকে দ্বাদশ পরিচ্ছেদ জুড়েই সুন্দরবনঃ সুন্দরবনের উত্থান-পতন, জনবসতি, প্রাণবৈচিত্র্য, শিকার কাহিনী, জঙ্গলের ভাষা, আরও কতো কী! ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে লেখক সুন্দরবন নামের উৎপত্তি সম্পর্কিত নানান কাহিনী উল্লেখ করে বলেছেন, নাম যাহাই থাকুক সুন্দরবন চিরকাল আছে। হয়ত ইহা পূর্বে যেখানে ছিল এখন সেখানে নাই, কিন্তু ইহা চিরকাল আছে। গঙ্গা বহু শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হইয়া যেখানে সমুদ্রে পতিত হইয়াছিলেন সেই স্থানেই বেলাভূমির উপরিভাগ জঙ্গলাকীর্ণ হইয়া সুন্দরবনে পরিণত হয়।
উক্ত পরিচ্ছেদে তিনি আরো জানান, বঙ্গদেশের দক্ষিণ-সীমায় অবস্থিত সমুদ্র-কূলবর্ত্তী জঙ্গলাকীর্ণ ভূভাগকে সুন্দরবন বলে। পূর্ব-পশ্চিমে সুন্দরবনের দৈর্ঘ্য ১৬০ মাইল এবং উত্তর-দক্ষিণে ইহার প্রস্থ পশ্চিমদিকে ৭০ মাইল হইতে পূর্ব্বদিকে ৩০ মাইল। গড়ে বিস্তৃতি ৫০ মাইল ধরিলে, সুন্দরবনের পরিমাণফল ৮০০০ বর্গমাইল হয়। তন্মধ্যে খুলনা জেলার মধ্যে ২২৯৭ বর্গমাইল রক্ষিত বন বা কাঁচা বাদা, উহাতে লোকের বসতি নাই। তবুও নদীপথে নৌকায় সর্বদা ৪/৫ হাজার লোক থাকে। এই বসতিশূণ্য রক্ষিত বন খুলনার অন্তর্গত দাকোপ, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা এ কয়েকটি থানার অধীন (পৃ.৫৯)। সতীশ চন্দ্র মিত্র তার যশোহর খুলনার ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, সুন্দরবন চিরকালই সমতট বা গাঙ্গেয়দ্বীপের বর্ম্মস্বরূপ। শতমুখী গঙ্গা ভ’মিগঠন করিতে করিতে উপদ্বীপ সীমা যতই দক্ষিণদিকে সরাইয়া লইতেছেন, সুন্দরবনও তত দক্ষিণে সরয়িা যাইতেছে। কতই পরিবর্ত্তন হইতেছে, কিন্তু সুন্দরবনের দেশরক্ষা কার্য্যের পরিবর্ত্তন হয় নাই। দেশের জলবায়ু এবং ক্ষেত্রের উর্ব্বরতার উপর বনভাগের বিশেষ আধিপত্য আছে (পৃ.৬২)।
সুন্দরবন আসলেই এক ঐতিহাসিক সত্য। বাঘ-কুমীর-হরিণ-পতঙ্গ-পাখি-সরীসৃপ-ম্যানগ্রোভ বৃক্ষসহ প্রাণবৈচিত্র্যের সমাহার, বননির্ভর মৌয়াল-বাওয়ালি-জেলে-মাঝি-চুনারি-মুন্ডা-মাহাতো-বাগদী সমাজ আর সকলের জটিল সম্পর্কের ভেতর দিয়েই সুন্দরবনের ম্যানেগ্রাভ আখ্যান।
ম্যানগ্রোভ বিজ্ঞানকে অস্বীকার
প্রতি বছর ২২মে বিশ্বব্যাপি পালিত হয় ‘আন্তজার্তিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস’। প্রতিবছরের জন্যই এ দিবসের একটি প্রতিপাদ্য থাকে। ২০১১ সনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বনপ্রাণবৈচিত্র্য’। নিদারুণভাবে সেবছরই প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের পরের দিন ২৩ মে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার ৪ কি.মি. দূরত্বে ‘১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প’ নির্মাণের জন্য ‘এলাকার ছাড়পত্র’ অনুমোদন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ জানুয়ারী ২০১০ ভারত সফরে গেলে যেসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় তার মধ্যে এ বিদ্যুৎপ্রকল্পটি একটি অন্যতম বিষয় ছিল। ২০ এপ্রিল ২০১৩ বাংলাদেশ-ভারত উক্ত প্রকল্পের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত, খুলনার বটিয়াঘাটার লবনচর থেকে বাতিল করে প্রকল্পটি শেষমেষ ৫২২তম বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন অঞ্চলে অনুমোদন করে রাষ্ট্র। বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’ ২০১৩ সনের জানুয়ারিতে উক্ত প্রকল্পের জন্য ‘পরিবেশগত প্রভাব যাচাই প্রতিবেদন (ইআইএ)’ প্রকাশ করে।
ইআইএ প্রতিবেদনের কোথাও ‘বন’, ম্যানগ্রোভ বন, সুন্দরবন ও ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থানের কোনো কার্যকরী সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। ইআইএ প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে, বিদ্যুৎপ্রকল্পটি সুন্দরবন থেকে ১৪ কি.মি., সুন্দরবন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হতে ৪ কি.মি., সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট থেকে ৯৭ কি.মি. এবং সুন্দরবন বিশ্ব-ঐতিহ্য অঞ্চল থেকে ৭০ কি.মি. দূরে অবস্থিত। ইআইএ প্রতিবেদন ‘সুন্দরবন’ বলতে কী বুঝতে চেয়েছে বা তা স্পষ্ট করতে পারেনি।
সুন্দরবন এক জটিল ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থান। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকাটি চার ধরণের জৈব-প্রতিবেশীয় অঞ্চল ও তিন ধরণের ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুসংস্থানের অর্ন্তগত। এটি দেশের বৃহৎ কৃষি-প্রতিবেশ অঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধানের এক আদি জাত ‘রায়েন্দা’ ধানের জন্মভূমি এ অঞ্চল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম হাইড্রলজিক্যাল অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জলপ্রবাহ পশুর (আইডি নং-১৭৯) এবং মাইদারা প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় প্রবাহমান।
বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৪.২ ভাগ এবং দেশের মোট বনভূমির ৪৪ ভাগ জুড়েই সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ বনের বিশেষ চরিত্রের কারণেই সুন্দরবন অঞ্চলে এর নাম হয়েছে বাদাবন, জোয়ারভাটা বন কি প্যারাবন। বলেশ্বর, পশুর-সহ প্রায় ৪৫০টি ছোটো-বড়ো নদ-নদীর প্লাবনভূমিতে গড়ে ওঠা এ-বনের ৬০১৭ বর্গকি.মি এলাকায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৩৭৫ প্রজাতির প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২১০ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির ঝিনুক-সহ অগনিত প্রাণবৈচিত্র্যের সাথে বনজীবী জনগণ গড়ে তুলেছে এক বাদানির্ভর ঐতিহাসিকতা। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুণা জেলার ১৭টি উপজেলার প্রায় ৬ লাখ স্থানীয় বাওয়ালী-মৌয়াল-মাঝি-জেলে-চুনরি-মুন্ডা-মাহাতোর জীবনপ্রবাহ সরাসরি সুন্দরবনকে আগলে আছে। এছাড়াও আরও প্রায় ২৫ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল।
জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন তহবিল ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ণে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাঘশুমারি ২০০৪’ সুন্দরবনে ৪১৯টি বাঘের সন্ধান পেয়েছে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার চাঁদপাই রেঞ্জে মোট ৬৩টি বাঘ আছে। একটি বাঘের জন্য ১৪ বর্গ কি.মি. বিচরণ-অঞ্চল প্রয়োজন। একটি একক বনে বাঘের সংখ্যা ঘনত্ব বর্তমান বিশ্বে সুন্দরবনেই সবচেয়ে বেশি। সুন্দরবন হচ্ছে বিশ্বে ইরাবতী ডলফিনের সবচেয়ে বড় বিচরণ-অঞ্চল।
সমুদ্র উপক’লীয় দেশগুলিতে ম্যানগ্রোভ বন থাকলেও, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বৈচিত্র্য বেশি। জরায়ুজ অংকুরোদগম, শ্বাসমূলের উপস্থিতি, খাড়া লম্বা ঠেসমূল, লবনগ্রন্থি, রসালো পাতা, পাতায় পানি সংরক্ষণ কলার উপস্থিতি এরকম নানান ‘হ্যালোফাইটিক’ বৈশিষ্ট্য ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদসমূহকে লবণাক্ত বাস্তুসংস্থানে বেঁচে থাকার শক্তি তৈরী করেছে। ম্যানগ্রোভ অরণ্য স্থলজ বনের চেয়ে ভিন্নতর কারণ এখানে বনের পুষ্টির প্রাথমিক উৎসস্থল থাকে বনের বাইরে চারধার জুড়ে। ম্যানগ্রোভ বন সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের অন্যতম খাদ্য উৎস।
সুন্দরবন কি তার আশেপাশে কোনো উন্নয়ন কর্মসূচির আগে ম্যানগ্রোভ বিজ্ঞান ও এর ঐতিহাসিক বিকাশমানতাকে বোঝা জরুরি। প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বিজ্ঞানকে অস্বীকার করছে। এর জটিল খাদ্যশৃংখল ও স্পর্শকাতর বাস্তুসংস্থানকে গুরুত্ব না দিয়ে কয়লা দিয়ে পুড়িয়ে বিশ্বের সবচে’ বড় ম্যানগ্রোভ বনটিকে খুনের পাঁয়তারা চলছে। সুন্দরবনে একটি প্রাণের সাথে আরেক প্রাণের এমন গভীর জটিল সম্পর্ক যে, একটির ক্ষতি হলে পুরো বনকেই তা সামাল দিতে হবে। যার করুণ পরিণতি ভবিষ্যতে সরাসরি বাংলাদেশকে এবং বিশ্বকেও টানতে হবে।
বিশ্ব ঐতিহ্য ও বৈশ্বিক দায়বোধ
বাংলাদেশ ২১ মে ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে দেশের প্রথম রামসার এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। সুন্দরবনের ৬০১,৭০০ হেক্টর বনভূমি এই আন্তজার্তিক সনদের সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত। ১৯৭২ সনে গৃহীত হয় ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষা সনদ’। উল্লিখিত সনদের ৪নং ধারায় উল্লেখ আছে, সকল রাষ্ট্রপক্ষ তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করবে যাতে ভবিষ্যতে এ থেকে বিশ্ববাসী বঞ্চিত না হয়। পাশপাশি ৫নং ধারায় বলা হয়েছে, একাধিক রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে ঐ স্থানসমূহ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রাযুক্তিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
উল্লিখিত সনদের আলোকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য পর্ষদের একুশতম সভায় ১৯৯৭ সনের ৬ ডিসেম্বর সুন্দরবনকে ৫২২তম ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সনের ৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের নীলকমলে বিশ্বঐতিহ্য ফলক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। পরিবেশ ও বনমন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সনে সুন্দরবনের আশেপাশের ১০ কি.মি. এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১২ সনের ২৯ জানুয়ারি ডলফিন সুরক্ষায় সুন্দরবন অঞ্চলে ডলফিন অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। গত কয়েকবছর ধরে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সুন্দরবনকে ‘প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের’ তালিকায় যুক্ত করতে তুলকালাম করেছে চারদিক।
অথচ আজ এই বনের কী করুণ দশা! বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ কার্বণ-শোষণাগার হিসেবে বৈশ্বিক জলবায়ু সুরক্ষায় জান জীবন ক্ষয় করেও সুন্দরবনকে আজ অন্যায় মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে দাঁড়াতে হয়েছে। ২০১১ সনের ২৯ সেপ্টেম্বর বন অধিদপ্তর পরিবেশ ও বনমন্ত্রণালয়কে এ প্রকল্প সম্পর্কে চিঠিতে জানায়, কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের রয়েলবেঙ্গল টাইগার তথা সমগ্র জীববৈচিত্র্য হুমকীর সম্মুখীন হবে। কি হবে তাহলে ছিঁচকাঁদুনে পরিবেশ আইন আর ‘জলবায়ু পরিবর্তন দেনদরবারের বৈশ্বিক ন্যাকামি’ দিয়ে। দুনিয়ার সবচে বড় ম্যানগ্রোভ বনকেই যখন পাত্তা দেয়া হচ্ছে না, তখন আবার কীসের সুরক্ষা সনদ আর জলবায়ু জিজ্ঞাসা? আমাদের ভেতর কি ন্যূনতম দায়বোধ কি কৃতজ্ঞতা জাগবে না? সুন্দরবনের সুরক্ষা কিন্তু কোনোভাবেই কোনো স্থানীয় কি জাতীয় দায়িত্ব নয়, এ আমাদের বৈশ্বিক দায় ও বিশ্বজনীন নৈতিকতা। কোনোভাবেই কোনোঅর্থেই ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎপ্রকল্প সুন্দরবনের চেয়ে বড় হতে পারে না। কারণ সুন্দরবন কেবল বাংলাদেশ বা ভারত নয়, বিশ্বসভ্যতা টিকে থাকার শর্ত ও কারিগরিকেও প্রভাবিত করে।
ইআইএ বিতর্ক
বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’ ২০১৩ সনের জানুয়ারিতে প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ‘পরিবেশগত প্রভাব যাচাই প্রতিবেদন (ইআইএ)’ প্রকাশ করে। কোনো সুনির্দিষ্ট ইআইএ ছাড়াই কেন এ প্রকল্পের কাজ ও চুক্তির দরবার শুরু হল এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। বিতর্ক ওঠেছে ইআইএ প্রতিবেদন ঘিরে।
ইআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার ১০ কি.মি ব্যাসার্ধের ভেতর রয়েছে ৭৫ শংতাংশ কৃষিজমি, যেখানে বছরে ৬২,৩৫৩ টন ধান ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৬১ টন অন্যান্য শস্য উৎপাদিত হয়। সুন্দরবন সংলগ্ন নদী ও খালপ্রবাহে বছরে ৫,২১৮.৬৬ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য বছরে ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হবে। প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী এ থেকে ৭৯ লাখ টন কার্বন-ডাই-অক্সাউড উৎপন্ন হবে। প্রতিদিন ১৪২ টন সালফার ডাই অক্সাইড ও ৮৫ টন নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৭ অনুযায়ী, পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকায় বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু ইআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি মানে শীতকালে হবে ৫৪ মাইক্রোগ্রাম। ইআইএ প্রতিবেদনে প্রকল্প এলাকাকে ‘আবাসিক ও গ্রাম এলাকা’ দেখিয়ে এ অগ্রহণযোগ্য ঘনমাত্রাকে বৈধ করা হয়েছে।
ইআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘোরানো ও শীতলীকরণসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৯,১৫০ ঘনমিটার পানি প্রত্যহার করে ব্যবহারের পর পানি পরিশোধন করে ঘন্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে নদীতে চেড়ে দেয়া হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে প্রকল্প এলাকার ধান, মাছ ও গৃহপালিত প্রাণিসম্পদ ধ্বংস হবে। বিভিন্ন ধরণের নির্মানকাজ, ড্রেজিং, বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক ও তৈল নিঃসরনের ফলে পশুর ও মাইদারা নদী, সংযোগ খাল, জোয়ারভাটার প্লাবনভূমি ইত্যাদি মাছের চলাচল ও প্রাণবৈচিত্র্য হুমকীর সম্মুখীন হবে (ইআইএ প্রতিবেদন ২৬৬, ২৬৭)। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পুড়িয়ে ৭ লাখ ৫০ হাজার টন ‘ফ্লাই অ্যাশ’ ও ২ লাখ টন ‘বটম অ্যাশ’ উৎপন্ন করবে। এ বিষাক্ত ছাই পরিবেশে নির্গত হলে মারাত্মক দূষণ ঘটাবে (পৃ.২৮৭)। আবার একই প্রতিবদনে অন্যত্র এ বিষাক্ত ছাই সম্পর্কে বলা হয়েছে, নির্গত ছাই দিয়ে ১৮৩৪ একর জমির ভেতর ১৪১৪ একর জমি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হবে (পৃ.২৬৩)।
‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ কোল পাওয়ার কোম্পানি (প্রাঃ) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) রামপাল উপজেলা মিলনায়তনে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব আবদুল ওয়াহাব খান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, সুন্দরবনের উপর এ প্রকল্পের কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। বনায়ন বাড়িয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ মোকাবেলা করা হবে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে গেলেও এই কথা রাখা হয়নি।
সুন্দরবনের মৌয়ালদের মৌবিজ্ঞান মতে, একটি মৌমাছি এক ফোঁটা মধুর জন্য ৮০টি ফুলে যায়। একটি বাঘের বিচরণঅঞ্চল ১৪ বর্গ কি.মি.। ইআইএ প্রতিবেদন নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে, কারণ এখানে ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থানকে স্থলজ বন ও সমতল অঞ্চলের কৃষিজমিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তারপরও ইআইএ প্রতিবেদন মতে, বিদ্যুৎপ্রকল্প এলাকাটি থেকে সুন্দরবনের যে দূরত্ব নানানভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা খুবই উদ্বেগজনক।
কারণ ইআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ীও যদি বিদ্যুৎ প্রকল্পটি স্থাপিত হয়, তা নৃশংস কায়দায় সুন্দরবনের অগণিত প্রাণসত্তার বিচরণঅঞ্চলকে বিনাশ করবে এবং সুন্দরবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। খুব দায়সারাভাবে হলেও ইআইএ প্রতিবেদনের এক জায়গায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, পশুর ও মাইদারা নদী হচ্ছে গাঙ্গেয় ও ইরাবতী ডলফিন এবং কুমিরের আবাসস্থল। রামপাল বিদ্যুৎপ্রকল্পের জন্য কয়লা পরিবহন ও তেল নিঃসরনের ফলে এসব মহাবিপন্ন জলজ প্রাণীদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে (পৃ.২০৭ ও পৃ.২০৯)।
ইআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘোরানো ও শীতলীকরণসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৯,১৫০ ঘনমিটার পানি প্রত্যহার করে ব্যবহারের পর পানি পরিশোধন করে ঘন্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে নদীতে ছেড়ে দেয়া হবে। ১৯৭৯ সনে আমেরিকার টেক্সাসে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বছরে ৩০ হাজার টন সালফার-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয় বলে আশেপাশের উদ্ভিদবৈচিত্র্য নিশ্চিহ্ন হতে থাকে। এটি বন্ধ করতে এখন সোচ্চার হয়েছে জনগণ (সূত্র: টাইম সাময়িকী, যুক্তরাষ্ট্র, ২৬/৯/২০১৩/ http://world.time.com)।
ইআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী রামপাল বিদ্যুৎপ্রকল্প থেকে বছরে ৫২ হাজার টন সালফার-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হবে। সরকার বারবার বলছে এসব বর্জ্য ও রাসায়নিকে সুন্দরবনের কোনো সমস্যা হবে না, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কি এমন ‘আধুনিক প্রযুক্তি’ যা কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিশ্বের কোথাও ব্যবহৃত হয়নি, কিন্তু বাংলাদেশে ব্যবহৃত হবে? যা সুন্দরবনের মতো একটি ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থানের সুরক্ষা দিতে পারবে।
সুন্দরবন সুরক্ষায় জনসংগ্রাম
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৯৬২ সাল থেকেই জান ও যৌবন দিয়ে আসছে বাংলাদেশের বনভূমি। উদ্বাস্তু হয়েছে কৃষি, জীবিকা ও জীবনধারা। ১৯৬২ সালে রাঙ্গামাটির কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদুৎ উৎপন্ন করতে গিয়ে রাষ্ট্র ডুবিয়ে দিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম, জঙ্গলের পর জঙ্গল, জীবনের পর জীবন। পরবর্তীতে রাষ্ট্র যখন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়াতে ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম কয়লানির্ভর তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলে তখনও রাষ্ট্র জীবন, মাটি, পরিবেশ ও জনজীবনের আহাজারিকে পাত্তা দেয়নি। ভূ-প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরবন অঞ্চলের গঠন নবীন। এখানকার প্রতিবেশ ও বাস্তুসংস্থান খুবই স্পর্শকাতর।
চোখের সামনেই দেশের আরেক ম্যানগ্রোভ অরণ্য চকোরিয়া-সুন্দরবন বাণিজ্যিক উন্নয়নের কারণে আজ নিহত হয়েছে। ১৯০৩ সনের ১৯ ডিসেম্বর কক্সবাজারের চকোরিয়ার ২১,০২০.৪৫ একর এলাকাকে ম্যানগ্রোভের বন হিসেবে চকরিয়া রেঞ্জ ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৭৮ সন থেকেই এ বনের উপর চিংড়ি বাণিজ্যের নির্যাতন শুরু হয়। ১৯৭৮ সন থেকে বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘেরের কারণে আমাদের চোখের সামনে খুন হয়ে যায় চকোরিয়া সুন্দরবন। রাষ্ট্রের বনবিভাগ ও বহুপাক্ষিক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সকলেই এই বিনাশের অন্যতম সহচর হিসেবে কাজ করে।
সুন্দরবনের মতো উপকূলীয় বনাঞ্চলগুলো খুবই নাজুক থাকে। তাই এসব এলাকায় যেকোনো ধরণের বাণিজ্যিক উন্নয়ন উন্মাদনা ধ্বংসই ডেকে আনে। নাইজেরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে ১৯৬০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তেল-গ্যাস খনিজনিত দূর্ঘটনা ও নিঃসরণ সেখানকার উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থানকে উল্টেপাল্টে দেয়। বাংলাদেশেও জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভর উন্নয়ন উন্মাদনায় জান দিতে হয়েছে একের পর এক বনভূমি-বাস্তুসংস্থানকে। ১৯৫৫ সনে হরিপুর, ১৯৬০ সালে সামুতাং, ১৯৯৭ সনে মাগুরছড়া, ২০০৫ সনে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণ ঘটে।
১৯০৩ সনে ডেভিস প্রেইন সুন্দরবন মানচিত্রের যে বর্ণনা দেন সেখান থেকে দেখা যায় সুন্দরবনের বিস্তৃতি গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে হুগলীর পশ্চিমপ্রান্ত এবং গঙ্গার পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত। অবিভক্ত বাংলার দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, খুলনা ও বাখেরগঞ্জ নিয়ে ছিল সুন্দরবনের বিস্তৃতি। সুন্দরবনের সেই ব্যাপ্তি ও কারিগরি বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বনজীবীসহ ম্যানগ্রোভ প্রাণবৈচিত্র্যের দেনদরবার আর যাপিতজীবনের সম্পর্কের ভেতর দিয়েই সুরক্ষিত হোক সুন্দরবনের ঐতিহাসিক পরিবর্তনশীলতা। যে বন নিজের জীবন রক্তাক্ত কওে হাজার বছর ধরে আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে, আমরা নিজেদের বিদ্যুৎবিলাসিতার কারণে তার নির্মম মরণ মানতে পারি না।
আসুন বাদাবনের জোয়ারভাটার মতো ছলকে ওঠি। রামপাল তাপবিদ্যুৎ মারদাঙ্গা নয়, সুন্দরবনই সত্য। আসুন ইতিহাসের এ ব্যাকরণ আবারো সত্য প্রমাণিত করি। বিশ্বের এক অন্যতম কার্বন-শোষণাগার সুন্দরবন কেবলমাত্র বাংলাদেশ নয় বিশ্বের ঐতিহ্য। এটি কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ সরকার বা বিএনপি সরকারের উন্নয়ন-এজেণ্ডা নয়। সুন্দরবন সকলের অস্তিত্ব ও বিকাশের এজেণ্ডা।
লেখক: পরিবেশবিষয়ক লেখক
সারাবাংলা/এসবিডিই