ভালোবাসা দিবসে বসন্তের আগমন
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪৬
শীতের শুষ্কতায় প্রকৃতিকে সজীব করে তুলতে, মানুষের মনে সজীবতা এনে দিতে বসন্তের প্রয়োজন পড়ে। আজকের সূর্য উঠেছে একটু মিষ্টি হেসে, হিমেল বাতাস হয়েছে কিছুটা পাগলাটে। আধার রাত পেরিয়ে ভেসে আসছে কোকিলের কুহু কুহু কলতান। এখন বাংলা বছরের ফাল্গুন মাস। শিমুল ফুল নিয়ে এসেছে লাল গালিচা অভ্যর্থনা। ফাগুনে ভালোবাসা নিয়ে প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্ত। আর বসন্ত উৎসব রাঙিয়ে দিতে তাকে অনুসরণ করে আগমন করেছে ভালোবাসা দিবসও। বসন্তকে ঋতুর রাজা বলা হয়। এসময় প্রকৃতিতে ফুটে নাম না জানা শত ফুল। তবে উল্লেখযোগ্য ফুল হচ্ছে অশোক, আকআড়কাঁটা, হিমঝুরি, ইউক্যালিপটাস, রক্তকাঞ্চন, কুরচি, কুসুম, গাব, গামারি, গ্লিরিসিডিয়া, ঘোড়ানিম, জংলীবাদাম, জ্যাকারান্ডা, দেবদারু, নাগেশ্বর, পলকজুঁই , পলাশ, পাখিফুল , পালাম, বুদ্ধনারিকেল, মণিমালা, মহুয়া, মাদার, মুচকুন্দ, রুদ্রপলাশ, শাল, শিমুল, স্বর্ণশিমূল, ক্যামেলিয়া ইত্যাদি। এসব ফুলের মধ্যে শিমুল ফুল প্রকৃতিকে অপরুপ উৎসবে সাজিয়ে রাখে।
প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সজীবতার সঙ্গে নতুন দিনের প্রত্যাশা আসে । জীবনানন্দ দাশের কবিতায়ও বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিলো, ‘ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে- বসন্তের রাতে। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দেয় সৌন্দর্যের সব শাখা-প্রশাখা। শোভা-সৌন্দর্যের রেশ ধরে শীতের চাদর সরিয়ে ঘন গৌরবে নবযৌবনে আসে বসন্ত। থোকায় থোকায় কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া জানান দেয়, বসন্ত এসে জুড়ে গেছে প্রকৃতির প্রতিটি কোণে কোণে। মেঠোপথ থেকে নিয়ে রাজপথ-সর্বত্র যেন ফাগুনের আগুন জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে।
বসন্তের মৃদু বাতাসে মানুষের জীবনে নিয়ে আসে প্রেম আর ভালোবাসার বার্তা। তাই হয়তো ফাল্গুনের প্রথম দিনটিই ভালোবাসার অনুভূতি জাগে বারংবার। মানুষের সাথে প্রকৃতির প্রতিও বেশ উদার বসন্ত। নিজের সবটুকু উজাড় করে প্রকৃতিকে সাজায় সে। নতুন চারা গাছ জন্ম নেয় এই ঋতুতে। অনেক বৃক্ষের পুরান পাতা পড়ে, নতুন পাতা গজায়। চারিদিকে শুধু বসন্তের হাওয়া বয়ে যায়। বসন্তে প্রকৃতিতে নেমে আসে উষ্ণ। শীতের কুয়াশার চাদর ছাড়িয়ে নবপল্লবে মেতে ওঠে সবুজ গাছপালা। পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে রঙিন হয়ে ওঠে চির সবুজ প্রকৃতি। চারিদিকে ছড়িয়ে যেন হাজারো রঙের দৃশ্য। খুব সকালে গ্রামীণ জনপদের বাড়ির আঙিনায় মাটির ওপর পা ফেলার সাথে সাথে শরীর সতেজ হয় । পরিত্যক্ত জলাশয়ের বুকেও কলমি ফুল উঁকি দিয়ে জানান দেয়, প্রকৃতিকে সাজাতে পিছিয়ে নেই তারাও। ঋতুরাজ বসন্তের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নিযুক্ত থাকে মধুর সুরের পাখি কোকিল। প্রতিদিন ভোরে সবচেয়ে বেশি শোনা যায় কোকিলের কলতান। উঁচু গাছের মগডালে বসে, নিজেকে আড়াল করে সারাদিন কুহু কুহু রবে গেয়ে যায় সে। কোকিলের সেই গানে ছোট্ট শিশুরা মুখ ভেংচিয়ে কুহু কুহু বলত।
কবি সাহিত্যিকদের মনে কাব্যিক প্রেম জাগে। হৃদয়ে উঁকি দেয় কাব্যিক ছন্দ আর সাহিত্য প্রেম। প্রিয়তমার প্রেমে পড়ার উপযুক্ত ফাল্গুন। বসন্তের শাড়ি পাঞ্জাবি পরে হারিয়ে যেতে মন চায় দূর অজানায়। কারণ বেশ কিছু বছর বসন্তের সাথে ভালবাসা দিবসের আগমন হয়। ফলে প্রেমিক প্রেমিকা যুগল একসাথে দুটি উৎসব পালন করে। বসন্ত ভালোবাসার ঋতু, নতুন কবিতা লেখার ঋতু, প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার ঋতু। এই ঋতু শূন্য হৃদয় ভরিয়ে দেয় নানা রঙে। প্রকৃতিকে যারা ভালোবাসেন তাদের পছন্দের ঋতুর তালিকায় তাই বসন্তের অবস্থান একটু আলাদা।
লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এজেডএস