প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার কবে হবে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৪
মায়ের ভাষা আমাদের অধিকার। সেই অধিকার আদায়ের পেছনে রয়েছে মহান আত্মত্যাগের ইতিহাস। ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে সেই ইতিহাসেরই স্মরণ করি, গর্ববোধ করি। বিদ্যালয়গুলোতে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারে ভাষার ইতিহাস। অথচ দেশের শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজও শহিদ মিনার গড়ে ওঠেনি। ভাষা বিজয়ের ৭১ বছরের পূর্ণতায় এ আমাদের ব্যর্থতার ছবি। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণের জন্য ২০২০ সালে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আর ২০১৬ সালে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছিল। গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২২ হাজার ৬২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ৪২ হার্জা ৯৪৩ বিদ্যালয়ে তা নেই। অর্থাৎ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। শিশু তার ভাষা শিক্ষার শুরু করে মায়ের মুখ থেকে শুনে এবং তার প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা শিক্ষা শুরু হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পর। বাড়িতে দীর্ঘদিন সে ভাষার নানা দিকের সাথে সে পরিচিত হয়। বর্ণমালার প্রাথমিক পরিচয় তার সম্পন্ন হয়। তারপর যখন সে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয় তখন তার শিখন প্রক্রিয়া শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। বর্ণের ব্যবহার, শব্দ তৈরি,শব্দ থেকে বাক্য তৈরি এবং বাংলা ভাষার মাধুর্যতার সাথে ক্রমেই তার পরিচিত ঘটতে থাকে। এভাবেই শিশু বড় হয়। এখান থেকেই শিশু ভাষার প্রতি দায়িত্ববোধ এবং মমত্ববোধ তৈরি হতে থাকে। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়। ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তাদের বাংলা ভাষার সেই গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসের সাথে পরিচয় ঘটতে থাকে। তারা ক্রমেই জানতে পারে যে এই ভাষা একদিন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এই ভাষার প্রতি যে দায়িত্ব রয়েছে তা তারা বুঝতে শেখে। আমাদের দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। এতে ছাত্রছাত্রীরা ভাষার পেছনের সঠিক ইতিহাস জানতে আগ্রহী হবে এবং জানতে পারবে। ভাষার প্রতি যে প্রেম থাকা প্রয়োজন তা অনুধাবন করতে পারবে। দেখা যায়, বাঁশ,কাঠ এমনকি কলাগাছ দিয়েও শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ফুল অর্পণ করে। তারা নিজ উদ্যোগে এই মহান কাজটি করে। অথচ আমরা তাদের জন্য তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তৈরি করতে পারতাম। কত কিছুই তো হচ্ছে। তাহলে শহীদ মিনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবে না কেন? ভাষার মাধ্যমেই আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকেই মা এবং আশেপাশের মানুষের মুখে নানা ভাষা শুনে শিশু ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেটাই তার মাতৃভাষা। সেই ভাষা চর্চার মধ্যে দিয়েই শিশু বড় হয়ে উঠতে থাকে। কোন দেশের জন্য, কোন জাতির জন্য ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার স্বাধীনতা থাকা আবশ্যক। আমারা সৌভাগ্যবান যে আমাদের সেই স্বাধীনতা রয়েছে। আমাদের দেশে সারা বছর বাংলা নিয়ে চর্চা হবে। সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করার চেষ্টা করা হবে। স্কুল কলেজগুলোতে বাংলা ভাষা নিয়ে প্রচুর কাজ হবে। আর সেটার শুরু হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার তৈরি করার মাধ্যমে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের সেই মহান আত্মত্যাগ, সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি এসব কিছুই বাংলাকে নিয়ে গর্ব করার মত যথেষ্ট। এছাড়াও এ ভাষা নিয়ে বুক ফুলিয়ে দাড়িয়ে বলার অনেক কিছু আছে। মাতৃভাষা অবহেলায় ফেলে বিদেশি ভাষা চর্চার গুরুত্বের আধিক্যের ফল শুভ হয় না।
নিজ ভাষাকে প্রথমে জানতে হবে,বুঝতে হবে ও আত্মস্থ করতে হবে। তারপর না বিদেশি ভাষা চর্চায় গতি আসবে। তাই তো কবিগুরুর সাথে সুর মিলিয়ে বলি, আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপর বিদেশি ভাষার পত্তন। শিশুকাল থেকেই সেই গাঁথুনি মজবুত করতে হবে। এজন্য চাই বাংলা ভাষার সেই ইতিহাস যা নিয়ে আমরা আজ গর্বিত, যে সংগ্রাম ও আতœত্যাগের কারণে আমরা বাংলা ভাষা নিজেদের করে পেয়েছি এবং যা পাকিস্থান শাসকগোষ্ঠাী জোর করে বদলে দিতে চেয়েছিল- সেই ইতিহাস তাদের জানাতে হবে, বোঝাতে হবে। আর সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার যা দেখে তারা শ্রদ্ধায় নত হয়ে আত্মপ্রত্যয়ী হতে পারে বাংলাকে সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করার। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি শহীদ মিনার থাকার অর্থ হলো শিক্ষার্থী প্রতিদিন তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শহীদ মিনার দেখবে এবং তার মনে দায়িত্ববোধের জন্ম নেবে। বাংলা ভাষাকে বিশে^র দরবারে আরও উঁচুতে পৌছে দিতে এ প্রজন্মই হাল ধরবে।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
অলোক আচার্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার কবে হবে মুক্তমত