Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাধীনতার মাসে তোমাকে আমার মনে পড়েছে

রহমান মৃধা
১৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:৩৭

২০০০ বীর মুক্তিযোদ্ধার বয়স ৫০ বছর এবং স্বাধীনতারও বয়স ৫০ বছর। খবরটি গত দুই বছর আগে দেশের জাতীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়। তখন রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল বেতনভুক্ত কর্মকর্তা বলেছেন জাতীয় পরিচয়পত্রে হয়তো অনেকের বয়স ভুল লেখা হয়েছে। এটি সংশোধনের সুযোগ আছে। তবে অনিয়ম করে কারো নাম তালিকায় ঢুকেছে কি-না সেটি তদন্তের আগে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কেউ অনিয়ম করে থাকলে তার নামও বাদ যাবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

সে ব্যবস্থা কী এবং কবে নেওয়া হবে?

বহু বছর আগের কথা, সম্ভবত একজন ফিনিশ প্রেগন্যান্ট মহিলা আমেরিকার লং বিচ থেকে লস এঞ্জেলসে ড্রাইভ করার পথে কারপুল লেন ব্যবহার করে। কারপুল লেন রাইডে একের অধিক যাত্রী না হলে এই লেনে ড্রাইভ করা আইনত দন্ডনীয়।

ফিনিশ মহিলা নিয়ম লঙ্ঘন করায় দন্ডিত হওয়া সত্ত্বেও মহামান্য আদালতে দন্ডিত সাজার বেকসুর খালাস চেয়ে আপিল করে এই অর্থে যে মহিলা প্রেগন্যান্ট এবং তার পেটে একটি শিশু থাকায় মহিলা একের অধিক অর্থাৎ তারা দুইজনে কারপুল লেন ব্যবহার করেছে।

আইন যখন নির্দিষ্টভাবে অর্পিত না করা হয় তখনই আইনের মাঝে যে ফাঁক থেকে সেটাকে ব্যবহার করে অনেক সময় অপরাধী বেকসুর খালাস হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আইনকানুনেও কি এধরনের ফাঁক রয়েছে? তা না হলে কি করে সম্ভব যেখানে মন্ত্রণালয় বলছে, প্রায় দুই হাজার জনের বয়স ৫০ বছরের কম যেখানে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর? তারপরও তারা নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে শহীদের শরিক হয়ে জনগণের হক মেরে খাচ্ছে?

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের পরিপত্র অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধার (গেজেটভুক্ত) বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলা হয়েছে। সে হিসেবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হবে সাড়ে ৬১ বছর। তা সত্ত্বেও কোনো সংশোধন নেই তবে এটা জানার পর বলা হয়েছে তদন্ত করে দেখা হবে। অন্যদিকে এতজনের বয়সের তথ্য ভুল হওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ নির্বাচন কমিশন।

যারা সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা এটা কি তাদের জন্য গর্বের বিষয়, জানতে ইচ্ছে করে। আমার বয়স তখন দশ বছর মত হবে। I truly belong to the most juvenile and most strongly rooted in the principles of freedom and justice for all the rural people because যুদ্ধের প্রতিটি সময়, দিন এবং মাস হৃদয়ে ফুলের মালার মতো গাঁথা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে খুদে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করিনা শুধুমাত্র শহীদ ভাইদের অবমাননা করা হবে তাই ভেবে। কারণ যারা সত্যিকারার্থে যুদ্ধ করে দেশটি স্বাধীন করেছে আজ তাদের সারিতে দুর্নীতি করে যে জাতি তার নাম লিখে শহীদের রক্তকে অবমানা করে চলেছে এবং যে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এটাকে সাপোর্ট করছে সে দেশে আমার পদচারণ হবে ভাবতেও গা ঝিম ঝিম করছে।

বিজ্ঞাপন

এটা যেমন একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা তেমন আরেকটি হচ্ছে; দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে জাতীয় ভোটার দিবসে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন।

দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশি পৃথিবীর নানা দেশে কর্মরত। তা ছাড়া দেশের অনেক নাগরিক বিভিন্ন কারণে বিদেশে অবস্থান করেন কিংবা দ্বৈত নাগরিক হিসেবে দেশের বাইরে থাকেন। নির্বাচনী আইন ও ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতায় তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। এভাবে তাদের ভোটের বাইরে রাখা সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার শামিল।

দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট। এ সময়ে আমরা এনআরবি ও প্রবাসীর প্রেরিত অর্থের জন্য আহাজারি করি। কিন্তু প্রবাসীদের ভোটাধিকার সুরক্ষার ব্যাপারে উদাসীনতা ক্ষমার অযোগ্য। তারপরও ক্ষমা করা হচ্ছে কারণ জবাবদিহিতা করার জন্য যে জনগণের দরকার সে জনগণ ১৯৭১ এর যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। বাকি যারা আমরা আছি আমরা তো বসন্তের কোকিল, আমাদের আগমন হয়েছে নিতে, দিতে নয়। তা নাহলে এতসব অনীতি কীভাবে পাকাপোক্ত হয়ে নীতিতে পরিণত হয়? তারপরও আমার প্রশ্ন থেকে যায় যদি পরীক্ষার নকল বন্ধ করা সম্ভব তাহলে ভোটচুরি কেন বন্ধ করা যাবে না?

রাষ্ট্র যদি মনে করে জনগণের ভোটে সরকার গঠিত হবে তাহলে সেটার প্রতিফলন ঘটাতে হবে অথবা ভোট ছাড়া সরকার গঠন করতে হবে। লোক দেখানো ভোট কেন্দ্র তৈরি, প্রশাসন নিয়োগ এগুলো করার কি কোনো দরকার আছে?

যখন বাংলার জীবনে নেমে এসেছিল এক মহাপ্রলয়। দেশ কি পাকিস্তানের অধীনেই থাকবে নাকি স্বাধীন এক ভূখণ্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-সংগ্রাম-রক্তক্ষয় হয়েছে। বায়ান্ন বছর পরে আবার আরেক রক্তঝরা মার্চ আসুক, তা আজ আমরা কেউ চাই না। দেশের স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পরে কী হবে? এ নিয়ে সবাই চিন্তিত!

আমার জন্মের পর অতি অল্প বয়সে যে চেতনা ও অনুপ্রেরণা আমি পেয়েছি সে সারিতে বাবা মায়ের পাশাপাশি যারা ছিলেন তাদের মাঝে —জাতির পিতা, তোমার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে যখন সকাল, দুপুর, সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে এই গানটি সেই ১৯৭১ সালে গেয়েছি। বার বার গেয়েছি। আজও মনে পড়ে দূরপরবাসে সেই গানের কথাগুলো—

“মুজিব বাইয়া যাওরে
নির্যাতিত দেশের মাঝে
জনগণের নাওরে
মুজিব বাইয়া যাওরে।
মুজিব রে
ছলে কলে ২৪-বছর
রক্ত খাইল চুষি !
জাতি রে বাঁচাইতে যাইয়া
তুমি হইলা দোষী রে
মুজিব বাইয়া যাও রে।
মুজিব রে
খিদের জ্বালায় হৃদয় কালা
সপে থালা মুখে
কথায় কথায় চালায় গুলি
বাঙালিদের বুকে রে
মুজিব বাইয়া যাওরে..”।

তোমার নৌকা আছে, সে নৌকা বয়ে চলছে ঠিকই কিন্তু সে নৌকায় আজ তুমি নেই! তোমাকে আমার মনে পড়েছে।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

সারাবাংলা/এসবিডিই

মুক্তমত রহমান মৃধা স্বাধীনতার মাসে তোমাকে আমার মনে পড়েছে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর