Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইবিএর এমবিএ প্রোগ্রাম — অসাধারণ বৈচিত্র্যের এক অপূর্ব সমাহার

ইসতিয়াক আহমেদ তাহের
১৪ মার্চ ২০২৩ ১৬:২১

প্রায় ২০ বছর আগে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’তে আমি আমার পেশাগত জীবনের দ্বিতীয় পর্বের নির্মাণকাজ শুরু করি। খুব সম্ভবত একুশে ফেব্রুয়ারির ছুটির পরদিন আইবিএ’তে আমাদের ৩৭ডি ব্যাচের এমবিএ ক্লাস শুরু হয়।

অনেকেই জানেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’তে রেগুলার এমবিএ প্রোগ্রামের দুটি ভাগ আছে । একটি হলো ইভিনিং আর অপরটি ডে| আমাদের সময় ডে’তে প্রায় ১২০ জন এবং ইভিনিংয়ে খুব সম্ভবত ৭০ – ৮০* জন ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়েছিল । যদিও ডিগ্রির কারিকুলাম বা গুণগত মানে কোনো পার্থক্য নেই, কিন্ত ছাত্রছাত্রীদের প্রকারভেদে ডে এবং ইভিনিংয় এমবিএর মধ্যে বেশ বড় রকমের পার্থক্য আছে।

বিজ্ঞাপন

বুঝতেই পারছেন ইভিনিং এমবিএর ক্লাস হয় সন্ধ্যার সময়। ছয় মাসের একটা সেমিস্টারে ৩টির বেশি কোর্স নেওয়া যায় না, তাই ৬০ ক্রেডিট (২০ টি কোর্স)-এর এই এমবিএ শেষ করতে অন্তত ৭টি সেমিস্টার বা সাড়ে তিন বছর সময় লাগে। অনেকেই এত লম্বা সময় ধৈর্য রাখতে পারেন না। তবে এই ইভিনিং এমবিএর ছাত্রছাত্রীদের বৈশিষ্ট হলো যে এরা প্রায় সবাই চাকরিরত অবস্থায় এমবিএ করে থাকেন । আইবিএ’তে এমবিএ’র মাধ্যমে তারা ক্যারিয়ারে ভ্যালুএড করতে বা ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে আগ্রহী। ইভিনিং এমবিএর ছাত্রছাত্রীরা যেহেতু সবাই চাকরিজীবী বা এন্ট্রেপ্রিনিউয়ার, তাই শিক্ষকগণ সাধারণত তাদের কিছুটা ফ্লেক্সিবিলিটি দিয়ে থাকেন । তবে প্রথমত লম্বা সময় ধরে পড়াশুনা, চাকরির বিভিন্ন ব্যস্ততা এবং ‘‘আমার তো জব আছেই’’ এমন বিভিন্ন কারণে অনেকেই এই এমবিএ’তে ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার মোটিভেশন হারিয়ে ফেলে ড্রপআউট হয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

এবার আসা যাক ডে এমবিএর বিষয়ে। ডে এমবিএর ছাত্রছাত্রীদের প্রথম তিনটি সেমিস্টার ক্লাস হয় দিনে এবং চতুর্থ বা শেষ সেমেস্টারটি হয় ইভিনিং এমবিএর সাথে সন্ধ্যায়। অপরদিকে, ডে এমবিএ র অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রত্ব এখনও শেষ হয়নি। অর্থাৎ প্রায় সবাই তাদের স্নাতক বা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি সম্পন্ন করে প্রায় সাথে সাথেই এমবিএ’তে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে আবার অনেকেই থাকেন যারা তাদের মাস্টারস শেষ করে এমবিএ’তে ভর্তি হয়েছেন। তবে ইভিনিং এমবিএর সাথে ডে এমবিএর মূল পার্থক্য দুই জায়গায়:

প্রথমত: যেহেতু এখানে প্রায় সবাই এখনও ছাত্র, তাই শিক্ষকগণ এখানে বিন্দুমাত্র ফ্লেক্সিবিলিটি দেখান না। একেবারে স্ট্রিক্ট ডিসিপ্লিনারি রেজিম এক্সিকিউট করেন। এই স্ট্রিক্টনেস এর কিছু নমুনা হলো, ডেডলাইনের পর এ্যাসাইনমেন্ট জমা না নেয়া, ক্লাসে এটেন্ডেন্সের প্রথম কলে জবাব না দিলে এটেন্ডেন্স না নেয়া, অহরহ কোনো পুর্ব নোটিস না দিয়ে পরীক্ষা নেয়া, সামান্য দেরিতে আসায় ক্লাসে যোগদানের অনুমতি না দেয়া, কোনো কোর্সে সর্বোচ্চ গ্রেড ‘বি’ দেয়া, যে বিষয়টি আজকে ক্লাসে পড়ানোর কথা সে বিষয়ে ক্লাস শুরুর সাথে সাথেই কুইজ নেয়া (কারণ বিষয়টি ক্লাসে আসার আগে পড়ে আসার কথা ছিল)। অনেক শিক্ষকের ক্লাসে স্ট্রিক্ট ড্রেসকোড মানতে হয়, কেয়ামত হয়ে গেলেও পরীক্ষা না পেছানো, প্রশ্নপত্রে প্রশ্নের সিরিয়াল অনুযায়ী একই সিরিয়ালে উত্তরপত্রে প্রশ্নের উত্তর লেখা আর অসংখ্য এসাইনমেন্ট এবং প্রেজেনটেশন যা বেশ বড় রকমের অত্যাচার হয়ে যায় । রাতের পর রাত নির্ঘুম থেকে পার করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ফিজিক্যাল বিষয়টি বাদ দিলে, শিক্ষার্থীদের জন্য আইবিএ’র লাইফস্টাইল অনেকটা সামরিক একাডেমিগুলোর ক্যাডেটদের লাইফস্টাইলের কাছাকাছি । এ কারণে অনেক ছাত্রছাত্রীদের জন্যই হঠাৎ করে এ ধরনের লাইফস্টাইলের সাথে মানিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না । ফলে ব্যাচ ভেদে ড্রপ আউটের হার ৩০% – ৫০% হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

দ্বিতীয়ত: ডে এমবিএর ছাত্রছাত্রীগণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস লাইফের পূর্ণ স্বাদ পায়, যা কি না ইভিনিং এমবিএর ছাত্রছাত্রীগণ খুব একটা পান না। বিশেষ করে আমি যেহেতু ক্যাডেট কলেজের হাফ মিলিটারি পরিবেশ থেকে সরাসরি নৌবাহিনীর ফুল মিলিটারি পরিবেশে চলে যাই, তাই আমার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস লাইফটা একটা বেশ নতুন এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা ছিল।

এবার আসা যাক ডে এমবিএর ছাত্রছাত্রীদের ব্যাকগ্রাউন্ড বা প্রোফাইলের বিষয়ে। আমার নিজের ব্যাচ (৩৭ডি) এবং আশে পাশের ব্যাচের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, আমার দৃষ্টিতে আইবিএর ডে এমবিএ’তে ছয় ক্যাটাগরির ছাত্রছাত্রী থাকে।

ক্যাটাগরি ১: এরা সবাই তুখোড় ছাত্রছাত্রী, যারা কিনা তাদের স্নাতক বা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বা মাস্টারস ডিগ্রি শেষ করে সরাসরি ভর্তি হয়েছে। এর মধ্য একটা বিরাট অংশ থাকে বুয়েট (আমার ব্যাচে প্রায় ৫০ জনের বেশি ছিল) , আইইউটি বা অন্যান্য পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে পডুয়া ইঞ্জিনিয়ার। এছাড়া থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইংরেজি, ফিজিক্স, এপ্লাইড ফিজিক্স বা অন্যান্য নন-বিজনেস বিষয়ের ছাত্রছাত্রী। কিন্ত এরা সবাই তাদের স্নাতক বা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বা মাস্টারস পর্যায়ে ভালো ফলাফল করলেও, যে কোন কারণেই হোক তারা তাদের নিজ নিজ বিষয়ে পেশাগত ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী নয়। আমাদের ব্যাচে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন ডাক্তারও ছিলেন যিনি কিনা ইন্টার্নশিপ করার পর বুঝতে পেরেছেন যে তার দ্বারা আর যাই হোক অন্তত ডাক্তারি হবে না। দুঃখের বিষয়, আইবিএ’তে প্রথম সেমিস্টার শেষ করার পর আবার তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তার দ্বারা এমবিএ করেও কোন লাভ হবে না! বর্তমানে তিনি একজন স্বনামধন্য রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত এবং বিভিন্ন সোশাল মিডিয়াতে তার সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

ক্যাটাগরি ২: এই ক্যাটাগরিতে সাধারণত বিশেষ কিছু ছাত্র থাকে যারা এইচএসসি পর্যন্ত দুর্দান্ত ছাত্র ছিল । কিন্ত এইচএসসির পর তারা মোটামুটি তাদের পরিবার থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। চূড়ান্ত স্বাধীনতা উপভোগ করে তারা তাদের ছাত্রজীবন প্রায় ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। কেউ অসৎসংগে পড়ে মাদাকাসক্ত হয়ে, কেউ এক বা একাধিক প্রেম করে ব্যর্থ হয়ে কিংবা বন্ধুবান্ধবীদের সাথে বাউন্ডুলে জীবনযাপন করে একেবারে বেহাল অবস্থায় আছে। তারা যেনতেনভাবে খুব খারাপ ফলাফল করে তাদের স্নাতক পর্যায়ের পড়াশুনা শেষ করেছে। হয় পরিবারের চেষ্টায় কিংবা হঠাৎ নিজের বোধদয়ের কারণে তারা তাদের সেই হারিয়ে যাওয়া ভালো ছাত্রত্বকে পুনরুদ্ধার করার শেষ চেষ্টা হিসেবে আইবিএ’র এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছে।

ক্যাটাগরি ৩: এই দলের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এরা হয় যথাযথ পারিবারিক গাইডেন্স বা তত্বাবধায়নের অভাবে কিংবা আর্থিক সচ্ছলতার অভাবে এইচএসসির পর ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়নি। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পছন্দের বাইরের কোন বিষয়ে পাস কোর্স বা অনার্স করে পরিবারের সাহায্যে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল। তবে এদের মানসিক দৃঢ়তা অত্যন্ত প্রবল। তাই আর্থিক অনটন কাটিয়ে বা নিজে যখন পেশাগত ক্যারিয়ারের বিষয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা পেয়েছে, তখন নিজ চেষ্টায় আইবিএ’র এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছে।

ক্যাটাগরি ৪: এরাও তুখোড় ছাত্রছাত্রী। এইচএসসির পর স্নাতক বা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পড়তে বিদেশে চলে গিয়েছিল। এখন নিজের বা পরিবারের ইচ্ছায় দেশে ফিরে ক্যারিয়ারের বিষয়ে বেশ কনফিউজড। তাদের লক্ষ্য হলো আইবিএ থেকে এমবিএ করে দেশে নিজের পেশাগত ক্যারিয়ার শুরু করা।

ক্যাটাগরি ৫: এরা বিভিন্ন পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছে। কিন্ত তাদের ধারনা, আইবিএ থেকে এমবিএ করে নিজের পেশাগত ক্যারিয়ার শুরু করতে পারলে তাদের ক্যারিয়ারের অগ্রগতি জোরদার হবে।

ক্যাটাগরি ৬: এরা সবাই অল্প বয়সে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। এরা সাধারণত প্রাক্তন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী বা মারচেন্ট নেভির (যে কিনা আর সমুদ্রে যেতে আগ্রহী নয়) অফিসার । স্বভাবতই এরা সিনিয়র সিটিজেন অব দা ক্লাস।

তবে এই ছয় ক্যাটাগরির ছাত্রছাত্রীর ক্ষেত্রেই দুটি বিষয়ে বিরাট মিল আছে:

১। এরা সকলেই মেধাবী, কিন্ত বর্তমানে ক্যারিয়ারের লক্ষ্য থেকে কিছুটা লাইনচ্যুত। এরা আইবিএ’তে এমবিএ করার মাধ্যমে নিজের পেশাগত ক্যারিয়ারকে যথাযথ লাইনে আনতে বদ্ধ পরিকর।

২। এদের প্রায় সবাই দেশে পেশাগত ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী। অন্তত শর্ট বা মিডিয়াম টার্মে তাদের বিদেশে যাবার তেমন কোন আগ্রহ নেই।

এ ছাড়া ভৌগলিকভাবেও এমবিএর ক্লাসগুলো সাধারণত বেশ ডাইভার্স এবং সেখানে বাংলাদেশের প্রায় সকল বিভাগের প্রতিনিধিত্ব থাকে। এছাড়া স্বাভাবিক নিয়মে যদিও বা মধ্যবিত্ত শ্রেনির আধিক্য থাকে, তবে সমাজের উচ্চবিত্ত ও নিম্ববিত্ত শ্রেনির ছাত্রছাত্রীরাও আইবিএর এমবিএ’তে অধ্যায়নের সুযোগ পান। তাই এই সকল বিচিত্র ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে সার্বিকভাবে শিক্ষার একটি চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়।

আইবিএর এমবিএ প্রোগ্রামে শিক্ষকদের কাছ থেকে তো বটেই ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা একে অপরের কাছ থেকেও শেখার যথেষ্ট সুযোগ পেয়ে যায়। বিশেষ করে গ্রুপ স্টাডি সেশনগুলো আইবিএতে সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রুপ স্টাডি সেশনগুলো পারস্পরিক জ্ঞান এবং ধ্যানধারনা বিনিময়ের এক সুবর্ণ সুযোগ। আমার ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কেননা প্রায় এক দশকেরও অধিক সময়ের পর আবার একাডেমিক ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়া আমার জন্য সহজ ছিল না। কিন্ত আমার ক্লাসমেটদের আন্তরিকতার কারণে আমার জন্য বিষয়টি বেশ সহজ হয়ে যায়। বিশেষ করে এতসব সুপার ট্যালেন্টড ক্লাসমেটদের বিভিন্ন রকমের ডিসিপ্লিনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ারিং বিষয়টি ছিল এক কথায় অসাধারণ। ফলে হঠাৎ পড়াশুনার এ চাপটি আমার কাছে তেমন আর কঠিন মনে হয়নি। সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হলো দীর্ঘ দুই বছরে আমাদের মধ্যে যে অসাধারণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা আজও অটুট এবং সাধারণ বন্ধুত্বের বাইরেও পেশাগত ক্ষেত্রে ও বিভিন্ন সময় এ সম্পর্ক এখনও প্রতিনিয়ত আমাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। তাই গত মাসে কোভিড পরবর্তী আমাদের ব্যাচের ক্লাস শুরু হওয়ার ২০ বছরপূর্তি রিইউনিয়নে অনেকের সাথে আবার অনেকদিন পর দেখা হলো এবং হাসি ঠাট্টা এবং স্মৃতিচারণে অনেক মধুর কিছু সময় কাটালাম।

এবার আইবিএর বিষয়ে কিছু বলার চেষ্টা করি। একটি উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ হিসেবে আইবিএর এই সাফল্যের পিছনে ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের অবদানের কথা না বললেই নয়। প্রথমেই বলতে হবে ভর্তি পরীক্ষার অতুলনীয়তার বিষয়টি। বাংলাদেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আইবিএর চেয়ে দক্ষ ও নিরপেক্ষ ভর্তি পরীক্ষা আর নেই, একথা খুব জোর গলাতেই বলা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে খুব সম্ভবত আইবিএতেই ভর্তির ক্ষেত্রে ফ্যাকাল্টি মেম্বার বা স্টাফদের পোষ্যদের জন্য কোন কোটা বরাদ্দ নেই। আমরা এমন গল্পও শুনেছি যে আইবিএর কোন এক ডাইরেক্টরের (প্রশাসনিক প্রধান) সন্তান ভগ্নাংশ পরিমাণ নম্বরের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি । কিন্ত তাকে পাশ করানোর জন্য সেই ডাইরেকটর কিংবা অন্য কোন ফ্যাকাল্টি মেম্বার বিন্দুমাত্রও চেষ্টা করেননি। এটা কোন আলোচনার বিষয়বস্ত হিসেবেই গণ্য হয়নি।

দ্বিতীয়ত বলতে হয়, আমার মতে, বাংলাদেশে আইবিএ উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা কিনা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তার শিক্ষার্থীদের আচার, আচরণ বা মানসিকতাকে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গঠন করার কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের আচরণ শিক্ষার্থীদের কাছে কিছুটা স্বেচ্ছাচারিতা মনে হলেও আমার মতে এটা একটা অত্যন্ত প্রয়োজনীর পদক্ষেপ। শিক্ষকগণ তাদের শিক্ষার্থীদের কর্পোরেট বা বিজনেস ওয়ার্ল্ডের বাস্তবতায় শুধু টিকে থাকা নয় বরং সফল হবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন যা কিনা বাংলাদেশের আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চেষ্টা করা তো দুরের কথা, এই কাজটি যে তাদের দায়িত্ব, তারা এটা মনেই করেন না। তাই আমার মতে, যতদিন আইবিএ নিষ্ঠার সাথে তার শিক্ষার্থীদের এই মানসিক শিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে, ততদিন অন্তত বিজনেস এডুকেশনের ক্ষেত্রে আইবিএর অবস্থান হবে বাকি সকলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর সবচেয়ে বড় গুণ হলো- যাদের পেশাগত ক্যারিয়ার, তারা যে কোন কারণেই হোক লাইনচ্যুত হয়েছে, তাদের এই ভুল বা দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য একটি সেকেন্ড চান্সের ব্যবস্থা করে দেয়। এসএসসি, এইচএসসি এবং স্নাতক পর্যায়ে (হোক তা ২ বছরের পাস কোর্স) আপনার তিনটি সেকেন্ড ক্লাস থাকলেই আপনি আইবিএতে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য হবেন। আমার মনে পড়ে, ২০০২ সালে যখন নৌবাহিনী থেকে ভলান্টারি রিটায়ারম্যান্ট এর পর আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছিলাম, তখন কোন এক তথাকথিত এলিট প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন অফিসার আমাকে সদম্ভে বলেছিল ‘‘আমাদের এখানে আমরা কোন দুই বছরের ডিগ্রিধারিকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্য মনে করি না।’’ আলহামদুলিল্লাহ, পরবর্তীতে আমার এ ধরনের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে এমবিএ এবং বিবিএ প্রোগ্রামে ক্লাস নেয়ার সুযোগ হয়েছে এবং এখনও ক্লাস নিয়ে চলেছি।

মূল কথা হলো আইবিএ আমাকে আমার পেশাগত জীবনটি পুনর্গঠনের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। একথা বলতে কোন দ্বিধা নেই যে, এদেশের আর কোন উচচশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই যোগ্যতা প্রর্দশনে সক্ষম হয়নি। মানুষের ভাঙা জীবনকে পুনর্গঠনের যে কাজ আইবিএর এমবিএ গত ছয় দশক ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠার করে যাচ্ছে, তা এক কথায় অতুলনীয়।

তাই আমি এবং আমার মতো আরও হাজারো পেশাজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট (আইবিএ) এর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আশাকরি ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের সুযোগ্য নেতৃত্বে আইবিএ ভবিষ্যতেও এদেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং প্রশাসনিক সেক্টরগুলোকে পরিচালনার জন্য সুদক্ষ এবং নেতৃত্বগুনসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠনে গুরুত্বপুর্ণ এবং কার্যকরী ভূমিকা রেখে যাবে।

*এই তথ্যগুলো আমার ব্যক্তিগত অনুমান নির্ভর । প্রকৃত তথ্য উপাত্ত ভিন্ন হতে পারে ।

লেখক: মানবসম্পদ পরামর্শক

সারাবাংলা/ইআ

মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

নতুন প্রেমে মালাইকা!
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২৭

আরো

সম্পর্কিত খবর