Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইতিহাস থেকে: ১৯৭১ এবং চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ

আজহার মাহমুদ
২৬ মার্চ ২০২৩ ১১:৩৫

বন্দর নগরী চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এটা এখন নয় তখন থেকেই ছিলো। হ্যাঁ আমি ১৯৭১ সালের কথা বলছি। পাক-বাহিনীরা তাদের প্রথম টার্গেট রেখেছিলো এই চট্টগ্রামকে। বন্দরের অবস্থানসহ কৌশলগত কারণে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে চট্টগ্রাম ছিলো গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তাই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রামে তাদের শক্তি সঞ্চার করেছিল বেশি।

মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। যার মধ্যে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী জেলার অংশবিশেষ (মুহুরী নদীর পূর্ব পাড় পর্যন্ত) নিয়ে ১ নম্বর সেক্টর গড়ে উঠেছিল। এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল পাঁচটি। সেক্টর ট্রুপস ছিলো ২১০০। সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ২০,০০০।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স মাঠে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানের হায়নারা যখন যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করছিলো চট্টগ্রামে তখনো যুদ্ধ চলছিল। পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে যুদ্ধ থেমে গেলেও ১ নম্বর সেক্টরে সেই যুদ্ধ থামে ১৭ ডিসেম্বর।

এ বিষয়ে ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের বিখ্যাত ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ বইয়ে লিখেছেন, ১৬ ডিসেম্বর, বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট। ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়ই যুদ্ধ থেমে গেছে। সুবেদার আজিজ তার কোম্পানিটি নিয়ে খুব সতর্কতার সাথে ছোট্ট একটি খাল অতিক্রম করছে। ৪টা ৩১ মিনিট। হয়তো ঠিক এ মুহূর্তেই নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করছেন ঢাকার রেসকোর্স মাঠে। ১৫০ মাইল দূরে ভাটিয়ারিতে সুবেদার আজিজের কোম্পানির মাঝখানে এসে পড়ল পাকিস্তানিদের নিক্ষিপ্ত কামানের গোলা। মারাত্মক আহত হন সুবেদার আজিজ। সঙ্গে ১৫ বছরের এক কিশোর মুক্তিসেনা। কিছুক্ষণ পরই মারা যান এই দুজন।

১৬ ডিসেম্বর বিকেলের ওই লড়াইয়ের কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানি এক মেজর সাদা পতাকা হাতে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসেন ভাটিয়ারীর ওই খালের পাড় পর্যন্ত। পাকিস্তানি ওই মেজর সাদা পতাকা হাতে এসে আমাকে জানালেন, নিয়াজী তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বলেছিলাম, কাল আনুষ্ঠানিকভাবে এই আত্মসমর্পণ হবে ক্যান্টনমেন্ট ও নেভাল বেইজে। এদিন চট্টগ্রামে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে বিজয় উল্লাস করেন মুক্তিকামী মানুষ।

তবে চট্টগ্রামে যুদ্ধ শুরু হয় ঠিক ২৫ মার্চ রাতেই। চট্টগ্রামের সেনা বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই বিদ্রোহে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের অফিসার ও সৈনিকবৃন্দ, চট্টগ্রাম শহর এলাকায় অবস্থিত ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার ও সৈনিকবৃন্দ এবং চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস-এর অফিসার ও সৈনিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করে।

এতো ত্যাগের বিনিময়ে চট্টগ্রামের স্বাধীনতা এসেছিলো একদিন পর। চট্টগ্রামের বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন চৌধুরী সেদিনের স্মৃতি থেকে বলেন, ‘সেদিন ছিল শীতের সকাল। মেঘমুক্ত নীল আকাশের নিচে সূর্যালোকে অলস ঢেউয়ের মতো দুলেছিল বাংলার লাল-সবুজ পতাকা। শহরের প্রতিটি প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, জনতার বাঁধভাঙা স্রোতের মতো ছুটে আসছিলেন সার্কিট হাউসের দিকে। তাদের কণ্ঠে ছিল বিজয়ের জয়ধ্বনি।

সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের স্মৃতিচারণ ছিলো এমন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম পতাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্যালুড করে আমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণের জন্য। ভুলে গেলাম আমার চারপাশের উত্তাল জনসমুদ্রের কথা।

এই যে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস এর অনেক কিছুই আমরা তরুণ সমাজ জানি না। যাদের কারণে আজ আমরা একটি সবুজ সুন্দর বন্দর নগরী চট্টগ্রাম পেয়েছি তাদের প্রতি যথাযাত সম্মানও প্রদর্শন করছি না আমরা। এছাড়াও আছে অনেক দুঃখ এবং ক্ষেভের কথা। এই যে ১ নম্বর সেক্টর, এই সেক্টরে যারা যুদ্ধ করেছিলো তারা ছাড়াও এখন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে চট্টগ্রামে। যেসকল মুক্তিযোদ্ধারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের মাধ্যমে পর্যালোচনা করে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের রেখে বাকিদের এই সম্মানীয় পদবী থেকে প্রত্যাহার করা হোক।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

আজহার মাহমুদ ইতিহাস থেকে: ১৯৭১ এবং চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ মুক্তমত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর