Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রমজানে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে ইসলামের বিধান

রায়হান উদ্দিন
২৯ মার্চ ২০২৩ ১৮:১৩

আল্লাহ পাক বলেন- রোজা আমার জন্য আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। চলে আসল মহিমান্বিত মাস রমজান মাস। বিশ্বের মুসলমানরা পরিশুদ্ধিতে মশগুল হয় এ পবিত্র মাসে। রমজান মাস আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক প্রশিক্ষণের মাস। এ পবিত্র মাসে ঈমানদাররা ইবাদত বন্দেগি করে সময় পার করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাই মুসলমানরা।

এ মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ী তাদের সুবিধা হাছিল করার চেষ্টা করে। রমজান এলেই দ্রব্যমূল্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যায়। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে দ্রব্যের দাম। নিত্য দ্রব্যগুলোর মধ্যে সাধারণত পেঁয়াজ, মরিচ, ডাল, গরম মসলা, চিনি সহ যাবতীয় সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। এমনকি যে সব কিছু রমজানে বেশি খাওয়া হয় শাকসবজি ও তরিতরকারি এগুলো দাম বৃদ্ধি হয়ে যায়। এতে করে রোজাদার ঈমানদারদের মধ্যে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে ক্রয় করার। রমজানে দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির জন্য কষ্ট ও দুর্ভোগ চরমভাবে বেড়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা বলেন- “হে মুমিনরা, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।” [সুরা বাকারা: ১৮৮]। এছাড়াও হাদীসের মধ্যে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসেবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত।” (তিরমিজি: ১২১০)

বিজ্ঞাপন

রমজানুল মোবারকে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে সাহরী ও ইফতার করতে গিয়ে বিশেষ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রোজাদারদের। রমজানে যেসব জিনিসে বেশি প্রয়োজন, সেগুলোর দাম বৃদ্ধি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা সুখ উপচে পড়ে। যা কাম্য নয়। এতে রোজাদারদের কষ্টের সীমা থাকে না। অথচ বিশ্বের বিভিন্নে রাষ্টে চোখ দিলে দেখা যায়, তারা পবিত্র দিবসগুলোতে দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে দেই। সবকিছুতেই সহজলভ্য করে দেই। প্রতি বছর রমজান এলেই এই যেন নিত্য সমস্যা। প্রতি বছরই দ্রব্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি। এই চিত্র প্রতিবছর রমজানে দেখতে হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও এরকম বিভিন্ন সময় উপলক্ষ করে তারা কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করে। অথচ মহান রাব্বুল আলামিন এ ব্যবসা কে হালাল করেছেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বলেছেন ব্যবসার কথা। অনেক সাহাবী ব্যবসা করতেন। কিন্তু কিছু মানুষ বেশি মুনাফার আশায় কিছু কিছু কার্যকলাপে এই ব্যবসা কে হারামে পরিণত করে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি জনসাধারণের জীবন নাকাল করে তোলে। সে জন্যই ইসলামের মধ্যে খাদ্য মজুদের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

হযরত মামার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ফাজালা (রা.) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, “পাপাচারী ছাড়া অন্য কেউ মজুদদারি করে না৷” [তিরমিজি] অন্য হাদিসে আছে, “যে ব্যক্তি ৪০ রাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ রাখে, তার সঙ্গে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকে না।” মজুদদার ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে হাদিসে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে এদের পাপী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে আছে “পণ্যদ্রব্য মজুদ করে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী।” [মিশকাত]

ইসলামি শরিয়তে মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো:

মজুতদারি: বাজারে পণ্য সংকট থাকার পরও কিছু ব্যক্তি মুনাফার জন্য পণ্য গুদামজাত করে রাখে। যা ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষত তা যদি খাদ্যশস্য হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি মুসলমানের খাদ্যশস্য মজুত রাখে, আল্লাহ তার ওপর দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন।” [সুনানে আবি দাউদ: ৫৫]

বাজার সিন্ডিকেট: বাজার দর নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। ইসলামের নির্দেশনা হলো- পণ্য উৎপাদনের পর তা স্বাধীনভাবে বাজারে প্রবেশ করবে। বাজার মূল্য বৃদ্ধির জন্য তা আটকে রাখবে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার রাখে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে বেরিয়ে যায়।” [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২০৩৯৬]

কালোবাজারি: কালোবাজারির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেই। কালোবাজারি সরাসরি প্রতারণা, জুলুম ও আর্থিক অসততার শামিল।

মধ্যস্বত্বভোগী: মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ভোক্তা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারে না। ইসলাম পণ্য উৎপাদনের পর তা বাজারজাতকরণ পর্যন্ত মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছে। আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, “আমরা ব্যবসায়ী দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের কাছ থেকে খাদ্য ক্রয় করতাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- খাদ্যের বাজারে পৌঁছানোর আগে আমাদের তা ক্রয় করতে নিষেধ করলেন।” [সহিহ বুখারি: ২১৬৬]

কৃষির প্রতি অমনোযোগ:- কৃষিতে অমনোযোগের কারণে সমস্যার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- তোমরা জমিনের পরতে পরতে জীবিকা অন্বেষণ করো।

লেখক: শিক্ষার্থী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা

সারাবাংলা/এজেডএস

ইসলামের বিধান রমজানে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি রায়হান উদ্দিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর