Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রমজান এলেই এদেশে বেড়ে যায় ভোগ্যপণ্যের দাম

আজহার মাহমুদ
২৯ মার্চ ২০২৩ ১৮:৫৭

জাতি হিসেবে দিন দিন আমাদের অবনতি হচ্ছে এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই অবনতি যে চরম মাত্রায় হচ্ছে সেটা অনেকেই ক্যালকুলেশন করি না। আমরা আধুনিক আসলে হচ্ছিটা কোথায় সেটা খুঁজে পাই না। আমাদের মননে, মানসিকতায়, নৈতিকতায়, সততায় নিয়মিত ভাটা পড়ছে। প্রতিবছরই একটু একটু করে আমাদের নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছি। দিন যত যাচ্ছে আমরা যেন ততই উলঙ্গ হয়ে যাচ্ছি। শরীরে কাপড় থাকলেই উলঙ্গ হওয়া থেকে বাঁচা যায় না। সত্যি বলতে, আমরা আমাদের কজেকর্মে নিয়মিত উলঙ্গ হচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

আমরা ধর্মকে নিয়ে কতই না বড়াই করি, আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানলে সাথে সাথে আমাদের রক্ত গরম হয়ে না-কি মাথায় উঠে আসে। কি চরম মাত্রার ধর্মীয় অনুভূতি আমাদের। বেশ ভালো বিষয়, ধর্মকে বাঁচাতে হবে, ধর্মের প্রতি টান, সম্মান, শ্রদ্ধা থাকতে হবে। কিন্তু ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করা, ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে মানুষকে বিপদে ফেলা, এককথায় মানুষ মারা এটা ধর্মের কোথায় আছে? ইসলামের কোথায় আছে? এই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কষ্টের বেলায় এইসব অসাধু মুসলমানদের রক্ত কোথায় উঠে? মাথায় তো উঠতে দেখি না, হাঁটু পর্যন্ত উঠে কি-না সেটা নিয়েই ভাবছি।

বিজ্ঞাপন

মাহে রমজান আমাদের মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র মাস। এই মাসে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা রোজা রাখেন। এটা ইসলাম ধর্মের একটি বিধান। প্রতিটি সুস্থ মুসলমানের জন্য এই রোজা রাখা ফরজ। সেই ফরজ কাজটি করার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষরা যখন প্রস্তুতি নেয় তখনই খায় বড় ধাক্কাটা।

এই রমজানকে কেন্দ্র করেই বাড়ানো হয় সমস্ত পণ্যের দাম। মধ্যবত্তিদের জন্য এই রমজান মাসটা হয়ে উঠে মারাত্বক কঠিন। অসহায়ত্ব নিয়ে সেহেরী আর ইফতার করতে যাওয়া মধ্যবিত্তরা না বলতে পারে দুঃখের কথা, না চাইতে পারে সহয়তা। এই সমাজ শুধু উচ্চবিত্তের আর নি¤œবিত্তের। উচ্চবিত্ত নিজেও খাবে দানও করবে। নি¤œবিত্তরা চেয়ে চেয়ে সেটা নিতে পারে। যদিও অনেক সময় নি¤œবিত্তরাও কষ্টে থাকে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি মানুষ মধ্যবিত্ত। এসব মানুষের দুঃখ যেন দেখার কেউ নেই।

রমজান আসলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ি চক্র প্রতিবছরই এই কাজটি করে থাকে। কিন্তু এর কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কোনো বছরই আমরা দেখতে পাই না। দু-চার কলম লেখা আর জনগনের মন্তব্য নেওয়া এতেই যেন প্রতিবছর এর দায় শোধ করে ফেলেন সকলে। অথচ নিয়ম মাফিক এই অপরাধ, অন্যায় চলছে। ভাবতে অবাক লাগে আমরাই নাকি আবার মুসলমান, ধর্মীয় অনুসাশন এবং ধর্মীয় নিয়ম-নীতিকে শ্রদ্ধা করি। কি হাস্যকর আমাদের অবস্থান।

প্রতিবছরই রমজান আসলে সিন্ডিকেটটা যেন আরও সক্রিয় হয়ে যায়। আমি গতবছরের সাথে এই বছরের ভোগ্যপণ্যের পর্থক্যটা শুধু তুলে ধরছি। গতবছর রমজানে ভোজ্য তেলের দাম ছিল ১৫৪ টাকা, এবার সেটা ১৯০ টাকা। ছোলার কেজি ছিল ৭০ টাকা, এবার সেটা ৯৫ টাকা। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৫০ টাকা, এবার সেটা ৮০০ টাকা। চিনির দাম ছিল ৮০ টাকা, এবার সেটা ১২০ টাকা। খোলা আটার দাম ছিল ৩৫ টাকা, এবার সেটা ৬০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ টাকা, এবার সেটা ৩০০ টাকা। এভাবে সবকিছুরই দাম এবছর বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দু-তিন মাস আগেও যেসব পণ্যের দাম ছিলো হাতের নাগালে এখন সেটা দ্বিগুণ হয়ে নাগালের বাইরে।

এই যখন অবস্থা তখন ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতি ঘৃণাটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না। মানুষ কতটা নোংরা হতে পারে সেটা এই রমজান মাস আসলেই উপলব্ধি করা যায়। আরও সহজ করে বলতে গেলে আমাদের ব্যবসায়ীদের কথা বলছি, সেসব ব্যবসায়ী যারা নিজেরাই আবার রোজা রাখবে। বেগুণের কেজি ১০০ টাকা, ছোলার কেজি ৯৫ টাকা এগুলো তো রমজানকে কেন্দ্র করেই বাড়ানো হয়। এই বাড়িয়ে দেওয়া লোকগুলোও আবার রোজা রেখে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চাইবে। কি অদ্ভুত জাতি!

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে প্রতি বছর এভাবেই শুরু হয় আমাদের রমজান। আমাদের দেশে রমজানের শুভেচ্ছা জানানো হয় এভাবে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে আমরা রমজান শুরু করি। অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই বিষয়ে আমাদের প্রশাসন, সরকারও কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে না। সরকারের দুর্বলতা আর জনগণের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এভাবেই চলতে থাকে আমাদের জীবন। সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

লেখক: শিক্ষার্থী ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

আজহার মাহমুদ ভোগ্যপণ্যের দাম রমজান

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর