বুলিং প্রতিরোধে চাই জনসচেতনতা
২৯ মার্চ ২০২৩ ১৯:২০
বিশ্বায়নের ছোঁয়ায় আমাদের জীবনে যুক্ত হয়েছে কিছু বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও হাতের মুঠোয় স্মার্টফোনের ছড়াছড়িতে যখন তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার ঠিক তখনই তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রকমের বিড়ম্বনা ও সাইবার বুলিংয়ের মতো বেদনাদায়ক আতঙ্ক ও অস্থিরতা। বর্তমানে অপরাধ জগতে এক নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এই সাইবার বুলিং। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজ করেছে এই ভয়ঙ্কর অপরাধ তথা সাইবার বুলিং। বর্তমানে বুলিং একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে।
সাধারণত “বুলিং” বলতে বুঝায়,কাউকে শারীরিক বা মানসিকভাবে হেনস্থা করা,হেয় অপদস্থ করে মজা করা,তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা এবং সেগুলো নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করা। বুলিং মূলত সচেতন বা অবচেতনভাবে এক ধরণের আক্রমণাত্মক আচরণ,কাউকে অপমান,অপদস্থ বা হেয় করা। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল আ্যন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর মতে, বুলিং হলো অপ্রত্যাশিত ও আক্রমণাত্মক আচরণ যা সাধারণত স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। আচরণের মাধ্যমে দুপক্ষের বাচ্চাদের মধ্যে ক্ষমতার অসামঞ্জস্যতা প্রকাশ পায়। এই আচরণের শিকার শিশু বা কিশোর থেকে শুরু করে যেকোন বয়সের ব্যক্তির ই হতে পারে।
মানুষ সাধারণত ৪ ধরণের বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকে। যেমন, শারীরিক, মৌখিক, সামাজিক এবং সাইবার। এদের মধ্যে সাইবার বুলিং খুবই ভয়ঙ্কর । ‘সাইবার বুলিং’ বলতে মূলত অনলাইন ব্যবহার করে বা অনলাইনের মাধ্যমে কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে হেয় অপদস্ত করা বা হেয় করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত বা জনসম্মুখে কটাক্ষ করা, কারো গোপন তথ্য,ব্যক্তিগত ফটো বা ভিডিও ধারণ করে তা প্রকাশ করা, আক্রমণাত্মক ব্যবহার ,অযথা ভয় দেখানো বা প্রাণনাশের হুমকি প্রদান ইত্যাদি। বতর্মান সময়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরী ও নারীরাই সবচেয়ে বেশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সাইবার বুলিংয়ের সর্বোচ্চ আক্রমণের শিকার হচ্ছেন নারীরা।
সাইবার বুলিংয়ের প্রভাব মাদকের মতোই ভয়াবহ। স্ট্যটিস্টা তথ্যমতে,বাংলাদেশের শতকরা ৭৬ শতাংশ নারী বিভিন্ন সময়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছে। পরিসংখ্যান মতে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ মানুষ কোন না কোনভাবে বুলিংয়ের শিকার। বুলিংয়ের ফলে ভিক্টিম হীনমন্যতায় ভোগে, আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে পারে না, নিজেকে অযোগ্য ভাবতে শুরু করে এমনকি বুলিং একটা তাজা প্রাণকে তিলে তিলে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে যায়। সাইবার বুলিং রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে ২০১২ সালের ১৭ জুন প্রথমবারের মতো ‘Stop cyber bullying day’ উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে এটা জুন মাসের তৃতীয় শুক্রবারে প্রতিবছর দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। সভ্য ও উন্নত দেশগুলো বুলিংয়ের ব্যপারে বেশ সোচ্চার ভুমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ সরকার সাইবার বুলিং প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(১) ক ধারায় প্রথমবার সাইবার বুলিংয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিনবছরের জেল বা তিনলাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়াও অনলাইনে সহিংসতা,হুমকি,হয়রানি সর্বোপরি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে আইনি সহায়তা পেতে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যশনাল ক্রাইম ইউনিট, সাইবার পুলিশ সেন্টার, হ্যলো সিটিআ্যপ, রিপোর্ট টু র্যাব আ্যপ এবং ৯৯৯ এ অভিযোগ করে জরুরি সহযোগিতা করা হচ্ছে। বুলিং প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি বুলিং সম্বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বাবা-মা,শিক্ষকসহ গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি সমাজের সর্বস্তরে বুলিং প্রতিরোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।
লেখক: সংগঠক ও লেখক
সারাবাংলা/এজেডএস