মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ
৩০ মার্চ ২০২৩ ১৫:৫১
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ-একটি নাম, একটি ইতিহাস, একটি কিংবদন্তি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপ্তি মাত্র নয় মাস হলেও এর পেছনে অন্তর্নিহিত রয়েছে হাজার বছরের পরাধীনতার শেকলের ইতিহাস। যে শেকল থেকে বাঙালি মুক্তি পেয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর। তাই বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসের মূল অতলস্পর্শী।
সম্পদশালী এ বাংলার প্রতি বহির্বিশ্বের নজর ছিল প্রাচীনকাল থেকেই।তাই বহিরাগতদের শাসনের সাথে বাঙালির পরিচয় মোটেও নতুন নয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খলজি বাংলার মসনদের একচ্ছত্র অধিপতি হন,যার আধিপত্য ক্রমে যায় লোদি,মুঘল ও ব্রিটিশসহ একাধিক পরাশক্তির হাতে। সর্বশেষ ব্রিটিশরাজ বাংলা শাসন করে ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের মাটি ত্যাগ করে। সর্বস্ব লুট করে কয়েক কোটি মানুষ ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি বর্বর শাসকগোষ্ঠী। তারপরও খান্ত হয় না। প্রবাদ আছে, “আপনি যদি পুকুরে দুটি মাছকে মারামারি করতে দেখেন,তাহলে বুঝবেন পাশ দিয়ে কোনো ইংরেজের পদাঙ্ক বয়ে গেছে।” এই প্রবাদ যে কতটা সত্য তা হাড়ে হাড়ে আমরা বুঝেছি। মাটি, মানুষ ও সংস্কৃতি-কোনো কিছুর বিন্দুমাত্র সাদৃশ্য না থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে এক করা হলো পাকিস্তানের সাথে। তাই টিকে থাকার তাগিদে বঙ্গদেশ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু যতই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন, ‘স্বাধীনতা’ নামের পাখিটা যেন বাঙালিদের অধরাই থেকে যায়। প্রতিষ্ঠার পরই শাসকগোষ্ঠী ছোবল দেয় বাঙালির আবেগ ও পরিচয় তার মাতৃভাষা বাংলার উপর। এ ছোবলের আঘাত এত বেশি ছিল যে,ভাষার দাবি দেশের আনাচে-কানাচে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মুখের ভাষার প্রশ্নে উন্মাদ হয়ে ওঠে বীর বাঙালি। এর ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি,যে দিন ছিল বাংলার রাজপথ রঞ্জিত হওয়ার দিন। দিনটি পাকিস্তান স্বৈরশাসকদের রীতিমতো হতভম্ব করে দেয়, এজন্য বাধ্য হয়ে তারা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। পাকিস্তানের সংবিধানে শহীদগণ নিজ রক্ত দিয়ে রক্ষা করে ‘অ আ ক খ’ এর মর্যাদা। ধীরে ধীরে এদেশের মানুষ জাতীয়তাবাদকে আঁকড়ে ধরেন; ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই স্বাধীকারের প্রশ্নে সংগঠিত হতে থাকে, যার ভিত্তি ছিল ‘আমি বাঙালি, আমরা বাঙালি’। দিন যতই যায়, বাঙালিরা ততই বুঝতে পারে যে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা আর গৃহপালিত পশুর মর্যাদা এক সমান। যতক্ষণ তারা বাংলাদেশকে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যবহার করতে পারবে, ঠিক ততক্ষণই বাঙালিরা তাদের কাছে প্রিয়পাত্র। এজন্য নিয়ম রক্ষার তাগিদে পূর্ব পাকিস্তান যে বরাদ্দ পেত, পশ্চিম পাকিস্তান তার ২০-৩০ গুণ বেশি বরাদ্দ পেত। তাই এককালের সুজলা-সুফলা বাংলার সম্পদের ভাঁড়ে ছিল মা ভবানী। যে বাংলার প্রাচুর্যের জন্য এককালে বহির্বিশ্ব একে পাওয়ার জন্য মরিয়া ওঠে, সেই বাংলার সাত কোটি মানুষের জন্য কবির ঝলসানো রুটি যেন স্বপ্নের মতো হয়ে ওঠে। অথচ এ ঝলসানো রুটি কয়েক শ বছর আগেও শুধু স্বপ্ন হয়,দুঃস্বপ্ন ছিল। এক পর্যায়ে আর সহ্য না করতে পেরে বাঙালিরা প্রতিনিয়ত অধিকার আদায়ে জীবন বলি দিতে থাকে।
১৯৫২ সালের এক বিশেষ মাহাত্ম্য এই যে, এটি এদেশের খেটে খাওয়া মানুষকে তাদের ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ধর্ম দিয়ে আর যাইহোক দেশ শাসন করা যায় না-বিষয়টি পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠির কাছেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই ধর্মের অজুহাত ধীরে ধীরে পেশিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বাংলার উপর অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কষাঘাতের চাবুক যেন পিছু ছাড়েনা। তবুও বাঙালি থেমে থাকেনি। মজলুম জনগণের অধিকার রক্ষায় স্রষ্টা পাঠান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে, পাঠান শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের মতো মহামনীষীদের। শোষিতের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়নি, দিনের পর দিন জেলের ঘানি টেনেছেন বাংলা মায়ের মুখের হাসির জন্য। এজন্য জাতি শ্রদ্ধাভরে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, স্থান দেয় হৃদয়ের মণিকোঠায়। কিন্তু বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান যিনি, তিনি বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে ২৪ বছর তিনি আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন, জেলে বসে কাটিয়ে দেন জীবনের যৌবন এবং অসংখ্য উৎসব, পার্বণ, ঈদ। ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন-মোটকথা আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বাঙ্গনে এ মানুষটির ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। হাজার বছর ধরে শোষিত একটি জাতিকে দিকনির্দেশনা প্রদানের ক্ষেত্রে যে কয়জন মানুষের অবদান এককভাবে কোনো বিশেষণের সাহায্যে প্রকাশ করা সম্ভব নয়-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁদের প্রধানতম ব্যক্তি। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ ভালোবাসা। এমনকি তিনি দ্বিতীয়বার ফাঁসিকাষ্ঠে যেতেও কুণ্ঠিত বোধ করেন নি। জাতিকে তিনি দিয়েছেন নিজের ধৈর্য, ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল, আর জাতি তাঁকে দিয়েছে প্রাণ উজাড় করা শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা। এজন্যই ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ তিনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন- “আমি যা বলি তা মানতে হবে”, কারণ তিনি জানেন যে তিনি সাত কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর,কোনো প্রতিধ্বনি নয়।
যাইহোক,ক্রমেই স্বায়ত্তশাসনের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে রব ওঠে।এজন্য ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু লাহোরে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন,যা প্রকৃত পক্ষেই বাংলার মুক্তির সনদ।দাবিগুলো সম্পূর্ণরূপে ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও স্বৈরশাসক আইয়ূব খান একে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের’ আখ্যা দেন।ফলশ্রুতিতে বিনা বাক্যে এসব দাবিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।আবারও তুমুল আন্দোলনে বাঙালিরা জেগে ওঠে।শেখ মুজিবকে কারাগারে পাঠানো হয়।কিন্তু ততদিনে পানি বহুদূর গড়িয়ে গেছে,তাই কোনো প্রকার অশনি সংকেত দিয়েও মুক্তিপাগল বাঙালিদের দাবিয়ে রাখা যায়নি,আর কোনোদিন যাবেও না।মওলানা ভাসানী,বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন এবং বঙ্গবন্ধুর মতো ত্যাগী নেতাগণ তা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন।কিন্তু সর্বশেষ যে আঘাতের মাধ্যমে এ বিষয়টা সর্বসাধারণের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে,তা হলো ৭০ এর নির্বাচন।এ নির্বাচনের ফলাফল ছিল ছয় দফার পক্ষে গণরায় এবং বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের প্রতি আপামর জনতার মনোভাব।সাংবিধানিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে,কিন্তু এ ফলাফল ছিল পাক শাসকের বিরুদ্ধাচারী।তাই পাশা উল্টে দিতে এক মুহূর্তও দেরি করেনি তারা।প্রতিনিয়ত সাধারণ পরিষদের সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করা হতে থাকে।এর ফলাফল?এবার বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।এতদিন বিচ্ছিন্নতাবাদের অপবাদ দেওয়া হলেও বিচ্ছিন্ন না হয়ে যাওয়াটাই হয়েছে দোষের বিষয়।মার্চ মাসে সারা বাংলাদেশে তীব্রতম আন্দোলন হতে থাকে।উদ্দেশ্য একটাই-শান্তিপূর্ণভাবে মুক্তিলাভ।এ মার্চ মাসেই স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাস রচনা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।৭ই মার্চ তিনি বিশ্ববাসীর কাছে ৭ কোটি মানুষের তেইশ বছরের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন,তুলে ধরেন তেইশ বছর ধরে কীভাবে এ অঞ্চলের মানুষকে ব্যবহার করা হয়েছে।অতঃপর তিনি চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু তা সইতে পারেনি।এজন্য ২৫ শে মার্চ সংঘটিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা,যার থেকে শিশুও রেহাই পায়নি।২৫ শে মার্চ আবার প্রমাণ করে,পাকিস্তান একতা চায়নি,চেয়েছিল বাংলার সম্পদ।গণহত্যা থামানোর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হয়ে মৃত্যুপুরীতে যাত্রা করেন,কিন্ত রেখে যেতে ভোলেননি তাজউদ্দীন আহমেদের মতো ত্যাগী নেতাকে।মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস বাংলাদেশ চলতে থাকে তাজউদ্দীন আহমেদের বিচক্ষণ দিকনির্দেশনায়।রক্তে-মাংসে শতভাগ বাঙালি বলতে যা ছিল,তার সবটুকুই ছিলেন তাজউদ্দীন।মুক্তিযুদ্ধের সময় তাজউদ্দীনের পৈতৃক ভিটা পুড়িয়ে দেওয়া হলে লোকজন বলাবলি করে,”তাজ সাহেবতো নেতা মানুষ,যুদ্ধ শেষ হলেই তার ভিটে উঠে যাবে।”প্রত্যুত্তরে তাজউদ্দীন আহমেদ বলেন,”যতদিন না বাংলার প্রত্যেক মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই না হয়,ততদিন এ বাড়ি উঠবে না।”সে ভিটা আর কোনোদিন ওঠেনি।একজন সাধারণ নাগরিকের সাথে তার চালচলনের কোনো পার্থক্যই ছিল না।বস্তুত,বঙ্গবন্ধুর অনন্য অমূল্য সৃষ্টি ছিল তাজউদ্দীন আহমেদের মতো সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়া মানুষ,যাঁরা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেও দেশকে দেখেশুনে রাখতে পারবে।ক্ষমতা পেয়ে বঙ্গবন্ধু কোনো দিন তাঁর ধানমন্ডি ৩২-নম্বরের সাদামাটা বাড়িটি ত্যাগ করেন নি।তাজউদ্দীন সহ জাতীয় ৪ নেতা ও মওলানা ভাসানীও ছিলেন সমমনা প্রকৃতির।আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় হাজার বছরের ইতিহাসে জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন কী,তাহলে আমি নিঃসঙ্কোচে বলব,নেতা হিসেবে উনাদেরকে পাওয়া।
পুরো ৯ মাস সাত কোটি বাঙালি তাদের ঘুম হারাম করে লেগে পড়ে মাতৃভূমি স্বাধীন করতে।কত মানুষ যে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে সে হিসাব বোধ হয় পাওয়া যাবেনা।প্রতি মুহূর্তে অগণিত মানুষকে কঠিন ধৈর্য ধারণ করতে হয়েছে,নিজেকে রুখতে হয়েছে দ্বিধা-সন্দেহের বিরুদ্ধে।দৈহিক ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান আছে,কিন্তু মানসিক ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান নেই।তাই এ হিসাব শুধু ব্যক্তি ও স্রষ্টা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী এ দেশের মানুষের উপর পাশবিক অত্যাচার করে আত্মার শক্তিকে গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করে।কিন্তু তারা ভুলে যায়,বাঙালির মনোবল ততক্ষণে সকল প্রকার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।তাই বাঁশের লাঠি দিয়ে হলেও তারা স্বাধীনতা অর্জন করবেই।পাকিস্তানের অস্ত্রভান্ডার ছিল বেশুমার,আর তাদের পক্ষে ছিল আমেরিকার মতো পরাশক্তি।এজন্য অস্ত্রের যোগানসহ রসদ সংগ্রহের বিষয়ে পাকিস্তানকে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি।এছাড়া তাদের ছিল সুশৃঙ্খল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অজস্র সৈন্য-সামন্ত।কিন্তু ইট-পাটকেল-বাঁশ ছাড়া অস্ত্র বলতে আমাদের কিছুই ছিল না,শুধু ছিল আকাশচুম্বী মনোবল এবং এ মনোভাব-“রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব”।এ মনোবলের ভিত্তিতেই হিন্দু,মুসলমান,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান সব এক হয়,গড়ে তোলে সশস্ত্র প্রতিরোধ।যুদ্ধে আত্মনিয়োগ করতে গিয়ে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এমন অনেক নিদর্শন সৃষ্টি করেন যা সকল দেশের সকল মানুষের জন্য শিক্ষণীয়।কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আক্ষেপ করে বলেছিলেন,”সাত কোটি বাঙালির গর্বিত জননী,জন্মাইয়াছো মানুষ করে বাঙালি করোনি।”কিন্তু ১৯৭১ সাল প্রমাণ করে,মহৎ উদ্দেশ্যে বাঙালি জীবন দিতেও প্রস্তুত।সেসময় বাঙালি জাতি হিসেবে ছিল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি।ত্রিশ লক্ষ শহীদের তাজা রক্ত এ সাক্ষ্যই বহন করে।
অবশেষে দীর্ঘ ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বাঙালি গর্বের সঙ্গে স্বাধীনতা শব্দের প্রতি তার চিরায়ত অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।আমরা পাই আমাদের হাজার বছরের প্রত্যাশিত মাতৃভূমি,পতাকা এবং সার্বভৌমত্ব।সোনায় যে ব্যক্তি সোনা বানায় তার মহত্ত্ব নেই,কিন্তু রূপা দিয়ে যে ব্যক্তি সোনা বানায় সে ব্যক্তি মহত্ত্ব আকাশস্পর্শী।পৃথিবীর বহু দেশকে স্বাধীনতা রক্ষায় কখনো বেগ পেতে হয়নি,কিন্তু আমরা সেই জাতি যারা এর জন্য হাজার বছর সংগ্রাম করেছি।এজন্য বাঙালি জাতির জীবনে ২৬ শে মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বর নিতান্ত দিন নয়,বরং কত সহস্র আবেগের সমারোহ।২৬ শে মার্চ আমাদের পরাধীনতার শৃঙখল ভাঙার ইচ্ছা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায়।আর ১৬ই ডিসেম্বর আমরা অবশেষে মুক্তি লাভ করি,পেছনে ফেলে আসি আমাদের পূর্বপুরুষদের সহস্রাব্দব্যাপী কষ্টের ইতিহাসকে।
বহু কষ্টে স্বাধীনতার প্রতি আমরা কব্জা আনি।মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনার জন্য দেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষ এবং চার লক্ষ মা-বোন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন,সেই চেতনাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার সাথে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক কর্তব্য।মাঝে মাঝে দেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।সামান্য ভুল বোঝাবুঝি তথা অপশক্তির উস্কানিতে উন্মত্ত হয়ে ওঠে ধর্মের বিরুদ্ধে ধর্ম,মানুষের বিরুদ্ধে মানুষ এবং মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ।কিন্তু এ কথা আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে,এমন কিছু আমাদের অবশ্যই করা যাবেনা যেন মুক্তিযোদ্ধাগণ তাঁদের ত্যাগকে প্রশ্ন করেন।এমন কিছু করা যাবেনা যা ত্রিশ লক্ষ বাঙালির ত্যাগকে নিরর্থক করে তোলে।আর যখন আমরা এ ধরণের অপকর্ম থেকে বিরত থাকব ঠিক তখনই আমরা জাতি হিসেবে গর্ব করার স্বাধীনতা পাব।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ
সারাবাংলা/এসবিডিই