Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইতেকাফের উপকারিতা ও বর্জনীয়

মোহাম্মদ এনামুল হক
১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:১০

ইতেকাফ আরবি শব্দ। এর অর্থ অবস্থান করা, নিজেকে কোনো স্থানে আবদ্ধ করে রাখা। আর শরিয়তের পরিভাষায় কতগুলো বিশেষ শর্তসাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে একমাত্র তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন।

তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। ’ কাজেই মানবজাতির কর্তব্য হলো আল্লাহপাকের ইচ্ছাকে পূর্ণ করা– কাজকর্মে, আচার- ব্যবহারে, কথাবার্তায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে, দিনে-রাতে অর্থাৎ সর্বক্ষণ সর্বাবস্থায় আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল করা, তাঁর ইবাদতে মশগুল থাকা। ফরজ ইবাদত ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যেসব ইবাদত করা হয় তার মধ্যে ইতেকাফ একটি অন্যতম ইবাদত। আত্মার উৎকর্ষ সাধনের জন্য সব ধরনের কুপ্রবৃত্তি দমন করে যেমন– অনর্থক কাজ, অশ্লীল কথাবার্তা, সংসার, স্ত্রী, পুত্র, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সব ধরনের দুনিয়াদারির কাজকর্ম পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্য তাঁর দরবারে দিনরাত্রি পড়ে থাকাই ইতেকাফের মূল লক্ষ্য।

বিজ্ঞাপন

হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে সে দুটি ওমরাহ ও দুটি হজ আদায় করার সওয়াব পাবে।’

হজরত আয়েশা (রা.) আরো বলেন, ‘নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ পালন করতেন। তাঁর ওফাতের আগ পর্যন্ত তিনি ইতেকাফ পালন করে গেছেন। তারপর তাঁর পত্নীরাও তা পালন করেছেন। ’ হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ইতেকাফকারী নিজেকে পাপ থেকে মুক্ত রাখে এবং তাঁর জন্য পুণ্যসমূহ জারি রাখা হয়। (মিশকাত)

বিজ্ঞাপন

ইতেকাফের উপকারিতা:

রোজাদার ইতেকাফকারীর জন্য অনুমানের একটি বিষয় হলো- কোনো বান্দা যদি রমজানের শেষ দশদিনের মাসনুন ইতেকাফ যথাযথভাবে আদায় করে তবে আল্লাহ বান্দাকে কী পরিমাণ প্রতিদান দেবেন।

১. লাইলাতুল কদর পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম ইতেকাফ। হাদিসে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের মাঝের দশদিন ইতেকাফ করতেন। একবছর এভাবে ইতেকাফ শেষ করার পর যখন রমজানের ২১তম রাত আসল (অর্থাৎ যে রাত শেষে সকালে তিনি ইতেকাফ থেকে বের হলেন) তখন তিনি ঘোষণা করলেন-

‘যে ব্যক্তি আমার সাথে ইতেকাফ করেছে সে যেন শেষ দশক ইতেকাফ করে। কারণ, আমাকে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে অবগত করা হয়েছিল (যে তা শেষ দশকের ওমুক রাতে)। এরপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশকে খোঁজ কর।’ (বুখারি)

২. ইতেকাফকারীর অবসর সময়ে কোনো আমল না করলেও তার দিনরাত ইবাদত হিসেবেই গণ্য হয়।

৩. ইতেকাফের উসিলায় অনেক পাপাচার ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা যায়। কেননা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর ঘর যেন একটি প্রকৃত দুর্গ।

৪. ইতেকাফ দ্বারা দুনিয়ার সব ঝামেলা ও সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। ঝামেলা ও সমস্যামুক্ত সময়ে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহ তাআলার কাছে সঁপে দেয়া যায়। রোজার কারণে সারাদিন রোজা পালন ফেরেশতাদের সাথে মানুষের সামঞ্জস্য হয় এবং ফেরেশতাসূলভ আচরণের উপর অবিচল থাকার চমৎকার প্রশিক্ষণ হাসিল হয়।

৫. রোজার যাবতীয় আদব ও হক যথাযথভাবে আদায় করে পরিপূর্ণ রোজা আদায় করার জন্য ইতেকাফ অত্যন্ত কার্যকর।

৬. আল্লাহ তাআলার মেহমান হয়ে তার সঙ্গে মহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি করার অন্যতম মাধ্যম মসজিদে ইতেকাফ করা। সশ্রদ্ধভাবে একান্ত মনোবাসনা নিবেদনের জন্য ইতেকাফের বিকল্প ইবাদত দুনিয়াতে সত্যিই বিরল।

৭. সর্বোপরী ইতেকাফকারী ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করার ফলে স্বাভাবিক সময়ের যে সব আমল করতে অক্ষম, সেসব আমলেরও সওয়াব পায় ইতেকাফকারী। যেমন- জানাজায় শরিক হওয়া, অসুস্থদের সেবা করা ইত্যাদি আমল না করেও তার সওয়াবের অংশীদার হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে থাকে।

ইতেকাফকারীর বর্জনীয় কাজসমূহ:

*কাজে-কর্মে, কথা-বার্তায়, উঠা-বসায় অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারবে না। মসজিদ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

*কিছু কাজ আছে যা করা সর্বাবস্থায় হারাম। তবে ইতিকাফ অবস্থায় করা আরো মারাত্মক যেমন, পরনিন্দা, চোগলখুরি, মিথ্যা বলা, ঝগড়া করা, কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া, অন্যের দোষ-ত্রুটি তালাশ করা, কাউকে অপমানিত করা, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি। এসব কাজ পরিপূর্ণভাবে পরিহার করা।

* মনে রাখতে হবে যে, মসজিদে বিনা প্রয়োজনে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলার দ্বারা নেকি নষ্ট হয়ে যায়।

*ইতিকাফকারীর জন্য কোনো প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ডেকে দ্বীনি কথাবার্তা ছাড়া সাধারণ কথাবার্তা বলা মাকরূহ। আর আড্ডার মজলিস জমানো নাজায়েয।

*ইতিকাফ অবস্থায় রচনা উপন্যাস এবং নোংরা বই-পুস্তক পড়া অবশ্যই পরিহারযোগ্য। মোবাইলে ইন্টারনেটে গুনাহের উপকরণসমূহ থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকবে। ইতিকাফ ইবাদতের জন্য। ইবাদত বিনষ্টের জন্য নয়।

*মসজিদের ভেতরে বিনিময় নিয়ে কোনো কাজ করা জায়েয হবে না। এটা দ্বীনি কাজ হোক বা দুনিয়ার কাজ হোক।

*মালামাল উপস্থিত করে মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা করতে পারবে না, হ্যাঁ, প্রয়োজনে মালামাল উপস্থিত না করে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। পরিশেষে আমরা যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাই, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাই, লাইলাতুল কদরের সুমহান মর্যাদা লাভ করতে চাই, সর্বোপরি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চাই, তাদের জন্য উচিত হলো, রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এজেডএস

ইতেকাফের উপকারিতা ও বর্জনীয় মোহাম্মদ এনামুল হক

বিজ্ঞাপন

‘ফের ভয়াবহ বিপ্লব হতে পারে’
২৬ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর