Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বস্তি-অস্বস্তির ঈদ যাত্রা

অলোক আচার্য
১৬ এপ্রিল ২০২৩ ২১:২২

দুই ঈদের আগেই আলোচনায় থাকে নিরাপদে গ্রামে যাওয়া এবং ফিরে আসার বিষয়টি। কারণ সড়কে দুর্ঘটনা একটি নিত্য ঘটনা। ঈদে একসাথে প্রচুর সংখ্যক গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পায়, প্রচুর যাত্রী থাকে এবং এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার একটি সম্ভাবনা থাকে। কর্তৃপক্ষ সড়ক নিরাপদ রাখতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। কিছু নির্দেশনা থাকে। এবারও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এরই মধ্যে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবুও দুর্ঘটনা এড়ানো যায় না। কিন্তু মেনে চললে এবং সাবধানে চললে দুর্ঘটনার সংখ্যা কম হবে।

বিজ্ঞাপন

ঈদের পরে আহত-নিহতের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিত্য আলোচিত বিষয়। নিরাপদ সড়ক চাওয়া বহু বছরের পুরাতন হলেও তা আজও হয়নি। বিভিন্ন কারণেই হয়নি। তার দায় সবারই, কারও একার নয়। ঈদ এলেই যেন মহসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। সামনেই ঈদু-উল-ফিতর। যেসব পরিবারের সদস্যরা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হয় সেসব পরিবারের ঈদ আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। কোনোভাবেই যেন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এরপর আবার যোগ হয়েছে বাইক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় অংশ এখন বাইক দুর্ঘটনা। এবছর ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতুর বিকল্প হিসেবে মাওয়া ঘাটে ফেরির মাধ্যমে মোটরসাইকেল পারাপার করা হবে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী, গেল বছর দেশের ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ হাজার ৩৫৬ জন। এই সংখ্যা গত আট বছরের সর্বোচ্চ। এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটর সাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯ হাজার ৬১৬টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বাস, ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ড ভ্যান ও লরি, ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ২২ শতাংশ অটোরিকশা, ২৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক এবং ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা ও লেগুনার সাথে সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৫২ দশমিক ২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ ফিডার রোডে ঘটেছে।

প্রতিদিন এক থেকে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনার খবর পড়তে হয়। এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েই চলেছে। সেসব দুর্ঘটনায় একই পরিবারের একাধিক সদস্য মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। কোনোভাবেই যেন এই মৃত্যুর মিছিল রোধ করা যাচ্ছে না। সে হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনাও এক ধরনের মহামারী যা চাইলেও রোধ করা যাচ্ছে না। বছরের প্রথম ছয় মাসেই বহু মানুষ সড়কে প্রাণ হারিয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। পরিবহনগুলো বেপোরয়া গতি, ওভারটেকিং প্রবণতা, গাড়ি চালানোর সময় কানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা, পথচারীর অসতর্কতা,অদক্ষতাসহ বিভিন্ন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা যাচ্ছে না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মহাসড়কেও ফোর লেনসহ উন্নত হয়েছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা থামানো যাচ্ছে না। আমাদের দেশে যারা মহাসড়কে বা অন্যান্য সড়কে যানবাহন চালায় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অশিক্ষিত। গাড়ি চালানোর সঠিক সাইড, গতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়গুলো জানে না বললেই চলে। আবার জানলেও আইনের ফাঁক ফোকর খুঁজে তার মার প্যাঁচে ঠিক নিজেকে বের করে নেয়। চালকের ভুলেই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার হার বেশি থাকে। দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই! সড়ক দুর্ঘটনা শব্দটি বর্তমানে আমাদের এত বেশী শুনতে হয় যে বিষয়টা খুব বেশিক্ষণ মাথার মধ্যে থাকে না। দুর্ঘটনা শব্দটি দিয়েই প্রতিটি ঘটনাকে দাঁড় করানো হচ্ছে। কিন্তু কতদিন? এভাবে দায়িত্বে অবহেলাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। প্রতিদিন এবেলা ওবেলা যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনার কথা আমাদের কানে তাতে কোন দুর্ঘটনার কথা কতক্ষণ মনে থাকবে।

আমাদের অনুভূতিগুলো মনে হয় অনেকটাই ভোঁতা হয়ে গেছে। ইন্দ্রিয়গুলো এত সহজে আবেগে আক্রান্ত হয় না। কান্নার শক্তিও কমে গেছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বাস, ট্রাক, নসিমন-করিমন বা মটরসাইকেল বা কোন না কোন যানবাহন দুর্ঘটনায় পরবে। ইদানিং আবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপকহারে। কখনো আলাদা আলাদা পরিবারের সদস্যের মৃত্যুর খবর আসে আবার কখনো আসে একই পরিবারের সদস্যের মারা যাওয়ার খবর। ভোঁতা হয়ে যাওয়া অনুভূতিতে মানুষের মৃত্যু আর আগের মত ভাবায় না। শুধু সাময়িক এক ধরনের যন্ত্রণা দেয়। যে যন্ত্রণায় মিশে থাকে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুজে না পাওয়ার ব্যার্থতার কথা। বারবার বহু আলোচনা, যুক্তি,তর্ক, বহু লেখালেখি বহু টকশো হয়েছে এই সড়ক দুর্ঘটনার উপর। কাজের কাজ কতটুকু হয়েছে।

গাড়ির চাকায় পিষ্ট হচ্ছে মানুষ। এক্ষেত্রেও যে দোষ কেবল চালকের এমন নয়। আমরা যারা পথচারী তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। রাজধানীতে নিয়ম না মেনে চলার প্রবণতাই বেশি। নানাভাবে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এতকিছুর পরে সড়কে মড়ক থামছে না। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কে মারা যাচ্ছে মানুষ। কোন সংক্রামক রোগে নয় সড়কে দুর্ঘটনায় দেশে মড়ক লেগেছে। এর কোন প্রতিষেধক নেই। আমরা যদি একটু নিয়ম মেনে চলি এবং আইনের ব্যাবহার কার্যকর হয় তাহলে এই মড়ক আমরা অবশ্যই রোধ করতে পারবো। ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডিকেট অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০১১-২০২০ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে দক্ষ চালক প্রয়োজন। সড়কের আইন মেনে চলার অভ্যাস করা প্রয়োজন। আসন্ন ঈদুল আজহায় যেন সড়কে মর্মান্তিকভাবে কাউকে প্রাণ হারাতে না হয় এটাই থাকবে সবার প্রত্যাশা। আর সেজন্য সবার অর্থাৎ সবার মঙ্গলের জন্য আমাদের এই প্রাণহানি রোধে সব পক্ষকেই সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। তাহলেই একটি নিরাপদ সড়ক গড়ে উঠবে এবং ঈদের যাত্রা বিষাদে পরিণত হবে না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

অলোক আচার্য ঈদ যাত্রা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর