ইসরাইল কিভাবে স্টার্টআপ জগতের শীর্ষে পৌঁছেছে
২২ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:০৭
ইসরাইলের হাজার হাজার উদ্যোক্তা গত ৩০ বছর যাবৎ ইসরাইলকে বৈশ্বিক প্রযুক্তির সুপার পাওয়ার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় মাথাপিছু বেশি স্টার্টআপ তৈরি করেছে। ফায়ারওয়াল, ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ, ভিওআইপি প্রোটোকল, ভয়েস কল, ফেস আইডির মতো নানা উদ্ভাবনগুলিতে অবদান রেখেছে।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে গড়ে ওঠে ‘চেক পয়েন্ট সফটওয়্যার টেকনোলজিস’, যা বিশ্বের প্রথম সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি এবং নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি বিভাগে অগ্রগামী ছিল। তখন ইসরায়েলে কার্যত কোনো স্টার্টআপ তহবিল পাবার উপায় ছিল না। তহবিল জোগাড় করতে এবং চেক পয়েন্টের পণ্য বিকাশের জন্য তখন বাণিজ্যিকভাবে ছাড়া হয় ফায়ারওয়াল। বেশিরভাগ সময়ে তারা তখন নিজেদেরকে আমেরিকান কোম্পানি হিসেবে পরিচয় দিত এবং ইংরেজি উচ্চারণে যথাসম্ভব হিব্রু ভাষার টান পরিহার করে চলত। অনেক ক্ষেত্রেই ইসরাইলি কোম্পানিগুলোকে তখন যুক্তরাষ্ট্রের সিইও নিয়োগ করতে হত।
ইসরাইলিরা প্রযুক্তিগতভাবে খুব দক্ষ হলেও বাজারে যাওয়ার কৌশল, বাণিজ্যিকীকরণ এবং কোম্পানি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো সম্পর্কে তাদের খুব কম জ্ঞান ছিল। ইসরাইলে তখন খুব কম সংখ্যক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট থাকার কারণে, অনেকেই বাধ্য হয়ে তাদের ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করেন এবং সেখানেই সমস্ত মেধা সম্পত্তির নিবন্ধন করতেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর সাবসিডিয়ারি হিসেবেও কাজ করতেন। ফলে সেই সময় ইসরাইল স্টার্টআপ সম্প্রদায় থেকে খুব কম সুবিধা পেত।
আমূল পরিবর্তন আসা শুরু করে কয়েক দশক পর থেকে। যেমন ২০১৫ সালে গঠিত ‘কেটো নেটওয়ার্কস’ তার সদর দফতর ইসরাইলে প্রতিষ্ঠা করে এবং সমস্ত কর্মী ইসরাইলিদের থেকেই নেওয়া হয়। ইসরাইলিরা এখন বিশ্বাস করা শুরু করেছে সারা বিশ্ব তাদেরকে চেনে, তাই তাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই এবং তারা এটাও জানে যে বিশ্ববাসী তাদের প্রযুক্তির উপর নির্ভর করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী পেতেও পরবর্তীতে তাদের বেগ পেতে হয়নি, কারণ তাদের কঠিন পরিশ্রম ও দক্ষতার সঙ্গে সরকারের আইনি ব্যবস্থা, কর কাঠামো এবং স্থিতিশীলতার উপর সবার আস্থা জন্মেছিল। ফলে ২০২২ সালে ইসরাইল স্টার্টআপ বিনিয়োগে ১৭ বিলিয়ন ডলার লাভ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্যে ও ভারতের পরে পঞ্চম সেরা অবস্থানে উঠে এসেছিল। শুধু কি তাই কেবলমাত্র তেল আবিব ভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩৪০ বিলিয়ন ডলারের উপরে।
তবে বর্তমানে ইসরাইলি স্টার্টআপ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে রয়েছে যেহেতু সরকার বিচার ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে চাচ্ছে। অনেকেই বলছেন এতে করে গত ৩০ বছরের সাফল্য কয়েক মাসের মধ্যেই বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যেতে পারে।
২০২২ সাল পর্যন্ত ইসরাইলের ৮৫টি স্টার্টআপের মূল্যমান ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের ওপর (যাদেরকে ইউনিকর্ন বলে আখ্যা দেওয়া হয় – আর আমাদের দেশের স্টার্টআপ জগতে একমাত্র ইউনিকর্ন হল সবেধন নীলমণি ‘বিকাশ’)। কিন্তু ২০২৩ সালে খুব কম সংখ্যক ইসরাইলি স্টার্টআপের ইউনিকর্ন হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ টাইগার গ্লোবাল এবং সফট ব্যাংকের মতো বিনিয়োগকারী ২০২২ সালে ইসরাইলে কোন বিনিয়োগ করেনি ফলে অনেক কোম্পানির মূল্যমান কমে যাচ্ছে এবং বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
সারাবাংলা/ইআ