গৌরবময় ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কৃষকের পাশে ছাত্রলীগ
২ মে ২০২৩ ১৫:৪৯
পৃথিবীর দেশে দেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, সময়ের প্রয়োজনে জন্ম নিয়েছে অনেক সংগঠন। অতঃপর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে সময়কে। তেমনি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের জন্মের সঙ্গে মিশে আছে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-র শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-র ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক বিজয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি ও আন্দোলন সফল করায় তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের ভূমিকা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমৃদ্ধ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রাপ্তির ইতিহাস। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস জাতির মুক্তির স্বপ্ন, সাধনা এবং সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বলতেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস’।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধানকাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ একর জমির ধান কাটা হয়েছে বলে দাবি ছাত্রলীগের। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শীর্ষ নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘ধানকাটা’ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের ছেলেদের পাশাপাশি মাঠে নেমেছেন মেয়েরাও। নিজেরা ধান কেটে, আঁটি বেঁধে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। বিষয়টি নিশ্চয় ইতিবাচক এবং ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পেছনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন ছিল, সে স্বপ্নের প্রতিফলন বলা যায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্রলীগ সৃষ্টি করেছিলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসের প্রতিটি টার্নিং পয়েন্টে ছাত্রলীগ প্রমাণ করেছে জাতির পিতার আদর্শই তার চলার পথে মূল আলোকবর্তিকা, পিতার স্বপ্নই তার চলার পথে ধ্রুবতারা। জাতির পিতার নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম, স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলদেশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রামসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের আত্মাহুতিসহ এই সংগঠনের যুগান্তকারী অবদান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যখন সারা বিশ্ব করোনা মহামারি সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, বিশ্ব মানবতা যখন চরম সংকটাপন্ন ঠিক তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগ মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছে। বর্তমান সময়ে তারই ধারাবাহিকতায় সাংগঠনিক নেত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগ সারাদেশে কৃষকের জন্য ধান কাটতে শুরু করেছে, সে ধান তারা কাঁধে তুলে কৃষকের উঠানে পৌঁছে দিচ্ছে। কৃষককে তার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য সহায়তা করছে।
এদিকে হাওর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ধান কাটার ধুম পড়েছে। কোথাও কোথাও বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক ছাড়া ফসল ঘরে তুলতে পারায় এবং বিভিন্ন যায়গায় ছাত্রলীগের সহায়তা পেয়ে খুশি কৃষকরাও। ফলে তারুণ্যের জয়গানে মুখরিত ধরায় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সাহসী সিদ্ধান্ত নিশ্চয় অন্য তরুণদের জন্য অনুকরণীয়। দেশব্যাপী কৃষকের ধানকাটার কাজে সহযোগিতা করার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন এর ইঙ্গিত দিয়েছে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। এমন কাজের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নিশ্চয় প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আমাদের মনে রাখতে হবে অনুপ্রেরণা এবং সাহস যুগিয়ে পাশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রলীগ কৃষকদের পাশে থেকে তাদের সাহস এবং অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যে কাজটি করছে তা নিশ্চয় গুরুত্ব বহন করে। এটি একইসাথে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে মানবিক গুণাবলি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। সুতরাং সংকটে মানবিক কাজ করার প্রবণতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ধানকাটা কর্মসূচি তারুণ্যের মনে প্রভাব রাখবে বলে বিশ্বাস করি।
শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির পিতা, বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন, তার জীবন ও যৌবনের উত্তাপে শুদ্ধ সংগঠন, তার সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জন্মলগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের ছয় দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ তার গৌরবময় ইতিহাসের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে নিজেদের মানবিক কাজে যুক্ত করেছে। কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ সুতরাং কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষকের পাশে থাকার কাজটি নিশ্চয় গুরুত্ব বহন করে।
পরিশেষে বলতে চাই, ছাত্রলীগের কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি ইস্পাত কঠিন আনুগত্য রেখে জাতীয় রাজনীতির প্রতিটি স্তরে মেধার স্বাক্ষর রেখে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তাদের প্রতিটি কাজেই মেধা, মনন, প্রগতি আর দেশপ্রেমের ছোঁয়া থাকে। ‘ ছাত্রলীগের ইতিহাস, বাঙালীর ইতিহাস।’ এর অর্থ হচ্ছে, ছাত্রলীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যায় না। বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাসের সাথে ছাত্রলীগের নাম মিশে আছে। এই স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, যিনি বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন। এই ছাত্রলীগ তারই সৃষ্টি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মী রাজপথে সাহসী ভূমিকা রেখে চলছে যা প্রশংসনীয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ছাত্রলীগ শুধুমাত্র কৃষকের পাশে থাকবে এমন নয়, ছাত্রলীগ দেশের যে কোন সংকটে সম্মুখে থেকে সংগঠনের গৌরবময় অতীতের প্রতিফলন ঘটাবে।
লেখক: সাবেক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাবেক সহ-সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
সারাবাংলা/এসবিডিই
গৌরবময় ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কৃষকের পাশে ছাত্রলীগ মুক্তমত মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার