ববিতে গাছ পোড়ানোর সংস্কৃতি বন্ধ হোক
১৩ মে ২০২৩ ১৫:০০
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘনঘন আগুন লাগিয়ে আবর্জনা পরিস্কারের নামে গাছ পোড়ানো হচ্ছে। বারবার দায়সারা বক্তব্য দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে প্রশাসন৷ আবর্জনা পরিস্কারের নামে বৃক্ষনিধন এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিনত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ সংস্কৃতি নতুন নয় ৷ পুরানো সংস্কৃতির চর্চার মাত্রা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে ৷ তাই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনের দায়সারা বক্তব্যে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক, এতো লুকোচুরি কেন?
সম্প্রতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের সামনে প্রীতিলতা চত্বরের পাশে আগুন লেগে পুরে যায় বড় কয়েকটি গাছ। এছাড়াও বিভিন্ন অংশের গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে যায় । দীর্ঘক্ষণ আগুন জ্বলে কালো বর্ণ ধারণ করে মাটি। গাছে আগুন লাগার ঘটনার বিষয়ে প্রক্টরের বক্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিকের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ প্রক্টরের বিরুদ্ধে। ফলে গাছ পোড়ানোর বিষয়টি সকলের সামনে আসে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয় বিষয়টি। কিন্তু কে বা কারা আগুন লাগায়, আগুনের সূত্রপাত কিভাবে এসবের গোমর এখনো খোলাসা করেনি কতৃপক্ষ।
২০২০ সালে ১ ফেব্রুয়ারী মাঠ পরিষ্কার কর্মসূচি নাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর মো. নুর ইসলামের নেতৃত্ব একদল কর্মচারী কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের এক কোনে আগুন দেয়। এতে শহীদ মিনারের আশে-পাশে ও মুক্তমঞ্চের পাশে লাগানো প্রায় অর্ধ-শতাধিক চারাগাছ পুড়ে যায় ৷ শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে লাগানো অনেক গাছই তখন পুরে ছাই হয়ে যায়৷তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কাজের পুনরাবৃত্তি করবে না বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে।
কিন্তু চলতি বছরের ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রিডিংরুমে পড়তে থাকা শিক্ষার্থীরা আগুনের বিষয়টি টের পেয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করে। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। সিগারেটের আগুন থেকে এর সূত্রপাত বলে ধারণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সিগারেটের আগুন থেকে আগুন লাগার বিষয়টি তখন প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়। এরপর গত ৫ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধু হলের সামনের আবর্জনা স্তুুপ পোড়ানোর নামে গাছ পোড়ানো হয় ৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তখন দাবি করে, সাপ তাড়ানোর জন্য আগুন দেওয়া হয়েছে ৷
শিক্ষার্থীদের জানান, আগুন লাগার ঘটনা নতুন কিছু না। এর আগেও কয়েকবার ঘাস পোড়ানো বা মাঠ পরিষ্কারের নামে গাছ পোড়ানো হয়েছে। অভিযোগ দিতে গেলে বিভিন্ন অযুহাত দেখানো হয়। কখনো কখনো বলা হয় যে সিগারেটের আগুন থেকে আগুন জ্বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রত্যেকবার ব্যবস্থা নিবে বললেও তারা একবারও কোনোরুপ ব্যবস্থা নেয় না। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার এভাবে ঘাস পোড়ানোর নামে গাছ পোড়ানো হবে। গাছ পোড়ানোয় পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগুন দিয়ে গাছ পুড়ানো পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ আগুন ধোঁয়া ও জীবজন্তুর জন্য হুমকিস্বরূপ ৷ তাছাড়া আগুন দিয়ে আবর্জনা পোড়ালে এতে কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষণ করে। মানুষের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ সৃষ্টি করে ৷
অধিকন্তু ক্যাম্পাসে প্রায়শই এমন আগুন লাগার ঘটনা ও গাছ পোড়ানোর ঘটনায় কখনো কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৷ ধুমপানমুক্ত ক্যাম্পাসে তাই আগুন লাগানোর দায়ভার বর্তায় সিগারেটের উপর।
এ নিয়ে কথা বলছেন নাহ উপাচার্যও। গত তিন মাসে চারবার আগুন লাগানোর বিষয়টি কি তাহলে তার কর্ণগোচর হই নি ৷ আমরা দেখেছি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সবুজায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও উদ্যোগ গ্রহন করে ৷ ক্যাম্পাসকে সবুজায়নের জন্য যেন তারা মরিয়া। কিন্তু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীতে। বরং যারা আগুন লাগিয়ে বৃক্ষনিধন করছে তারা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে।
এ নিয়ে তদন্তের হয় নাহ শেষ, দায়ভারের ধার ধারে নাহ কর্তাব্যক্তিরা। সবুজায়নের দিকে মন নাহ দিয়ে এভাবে বৃক্ষনিধন বা গাছ পোড়ানো শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে ৷ তাই প্রশাসনের উচিত গাছ পোড়ানো নিয়ে তাদের লুকোচুরি খোলাসা করা। পাশাপাশি তদন্ত করে এসব জঘন্য কাজের সাথে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনা।
লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই