Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রেন দুর্ঘটনার দায় কার!

আবুল বাশার মিরাজ
২১ মে ২০২৩ ১৫:২৯

ট্রেন ভ্রমণ মানেই নিরাপদ ভ্রমণ। দীর্ঘক্ষণ ট্রেন ভ্রমণ করার পরও আমাদের ক্লান্তি আসে না। দুর্ঘটনারও ঝুঁকি কম। কিন্তু ট্রেনের নিরাপদ ভ্রমণের এই গল্পগুলো আর কেউ বলছে না, লিখছে না। বর্তমানে ট্রেন ভ্রমণ নামটি একটি আতঙ্কের নাম হয়েছে। ত্রুটিমুক্ত রেললাইনের কারণে দুর্ঘটনা, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু, রেলক্রসিং পারাপারে মৃত্যু, বগি লাইনচূত, ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কারণে দুঘটনা, ট্রেনে ঢিলছোড়া, টিকেট সংকট, ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু, সময়মত ট্রেন গন্তব্যে না ফেরা প্রভৃতি এখন পত্র-পত্রিকার নিয়মিত শিরোনাম হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ট্রেন দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞদের দাবি, দেশে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে দুর্বল ইঞ্জিন এবং সংস্কারবিহীন নড়বড়ে রেলপথ। লোকোমোটিভ ইঞ্জিন যেটা আমদানি করা হয়েছে এগুলো আসলে নিম্নমানের ইঞ্জিন এবং এগুলো বেশ দুর্বল। পত্রিকার সর্বশেষ একটি তথ্য থেকে জানতে পারি, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রেল ইঞ্জিনের সংখ্যা ছিল ৪৪২টির মতো। আর বর্তমানে এই সংখ্যা আড়াইশটির মতো। এর মধ্যে আবার ৮৩% ইঞ্জিন মেয়াদোত্তীর্ণ।

বিজ্ঞাপন

যখন এ লেখাটি লিখছি (শনিবার, দুপুর ১টা) তখনও সিলেটের সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ আছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ট্রেনের সামনে গাছ পড়ে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত বুধবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকার উত্তরার কোর্টবাড়ী লেভেল ক্রসিং এলাকায় একটি হস্তীশাবক ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়। হস্তীশাবকের সঙ্গে মা হাতিও ছিল। দুর্ঘটনার পর হাতিটি রেললাইনের ওপর আটকে থাকে। পরে ক্রেনের সাহায্যে রেললাইন থেকে হাতিটি সরানো হয়। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। আসলে প্রশ্ন থেকে যায়, এ দুর্ঘটনার দায় কার? আবার এর দায়টায় বা কে নিবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ট্রেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা। এছাড়া অপারেশনের ঘাটতির কারণে একই লাইনে দুটো ট্রেন চলে আসতেও দেখা যায়। বাংলাদেশে রেল লাইনের ভিত্তি ঠিক থাকে না, ভিত্তির লেভেল ঠিক থাকে না, নিচে যে উপাদানগুলো থাকে সেগুলো ঠিক সময়ে পরিবর্তন করা হয় না, জোড়া তালি দিয়ে রাখা হয় এবং এ কারণেই দুর্ঘটনা হয়ে থাকে।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত গত ১ বছরের ট্রেন দুর্ঘটনার খবরগুলো পর্যালোচনা করে দেখতে পাই, কেবল চট্টগ্রামেই রেলক্রসিংয়ে অন্তত তিনটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ১৯ জন। এর মধ্যে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে নিয়ে যায় মহানগর প্রভাতী ট্রেন। এতে মাইক্রোবাসের ১৩ জন নিহত হন। সারাদেশে ট্রেনের বিভিন্ন দুর্ঘটনার খবর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু প্রায় শতাধিকের কাছাকাছি। আর আহতের সংখ্যা সহস্রাধিক ছাড়িয়ে যাবে।

বিভিন্ন দূর্ঘটনার পরই আমরা শুনি তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু সেসব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমাদের সামনে আসে না। কাউকে কোন রকম দৃশ্যমান শাস্তি/জরিমানা করা হয়েছে কিনা সেটাও আমাদের সামনে আসে না।

তবে এই ট্রেন দূর্ঘটনার পিছনে যে কেবল রেল কর্তৃপক্ষের দায়, সেটা কিন্তু এককভাবে বলা যাবে না। তবে তাদের এ বিষয়গুলোগুতে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। তাদের পক্ষ থেকে যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া উচিত সেগুলো যেন ঠিকঠাক মত নেওয়া হয় সেটি তাদের করা উচিত। পাশাপাশি আমরা যারা রেল ভ্রমণ করি কিংবা করি না, তাদের প্রত্যেকেই সচেতন হতে হবে। তবেই ট্রেন হবে নিরাপদ।

লেখক: কৃষিবিদ

সারাবাংলা/এসবিডিই

আবুল বাশার মিরাজ ট্রেন দুর্ঘটনার দায় কার! মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর