বিএনপির একমাত্র টার্গেট শেখ হাসিনা
২২ মে ২০২৩ ১৭:২৪
আবারো প্রকাশ্য জনসভায় আওয়ামীলীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে জেলা পর্যায়ের বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতা। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক এবং বিএনপি’র শীর্ষ দুই নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আবু সাঈদ চাদ রাজশাহীতে এক প্রকাশ্য জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন। একজন রাজনৈতিক দলের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা যখন প্রকাশ্যে জনসভায় দেশের প্রধানমন্ত্রী ও আরেকটি বিশাল রাজনৈতিক দলের প্রধানকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়, কবরে পাঠানোর কথা বলে তখন বিষয়টিকে আর হালকা করে দেখার কোন অবকাশ অবকাশ থাকে না। আর এই হুমকিদাতা ব্যক্তিটি যদি হয় সেই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ঘনিষ্ঠজন তাহলে সেটা আরো বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গত একুশ মে রাজশাহীতে বিএনপির এক জনসভায় এই হুমকি দেন বিএনপি নেতা চাঁদ।
শেখ হাসিনা যে শুধু বিএনপি’র প্রধান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সভাপতি তাই না; তিনি দেশের চার বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সর্বোপরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। যিনি তার জীবন যৌবনের প্রায় পুরোটা সময় দেশের জন্য লড়াই করেছেন সংগ্রাম করেছেন। সেই শিশু বয়স থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন নির্যাতন দেখেছেন। কিশোরী বয়সে দেখেছেন তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কিভাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নিগৃহিত করেছেন নির্যাতন করেছেন জেল জুলুম খাটিয়েছেন। আস্তে আস্তে যখন তিনি বড় হয়েছেন তখনও দেখেছেন এই নির্যাতনের পরিমাণ আরো বহুগুণ বেড়েছে বৈ কমেনি। ছাত্র জীবন থেকে যিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নিজে সন্তান সম্ভাবা অবস্থায় ওই পাকিস্তানি স্বৈরাচারের কারাগারে বা তাদের বন্দিশালায় যিনি বন্দী ছিলেন সেই শেখ হাসিনা আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী তো বটেই বরং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি আজ দেশকে কতটা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন দেশের যে আজকের এই অভাবনীয় উন্নতি সেটা শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে। তাই বার বার অপশক্তির টার্গেট হয়েছেন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাদের পরিবারের সকল সদস্যকে নির্মম নিশংস ভাবে হত্যা করার পর কপাল গুনে বেঁচে যাওয়া দুই বোনের অন্যতম শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছর তৎকালীন সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ে যখন চেপে বসেছিল তখন এই ছয় বছরের একদিনের জন্যও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি। তার পিতার কবর, মায়ের কবর আত্মীয়স্বজনের কবর পর্যন্ত জিয়ারত করার কোন সুযোগ দেয়নি। উপরন্ত শেখ হাসিনা যাতে তার নিজের দেশে আসতে না পারেন তার জন্য হেন কোন পন্থা নাই যা অবলম্বন করে নাই এই জিয়া। শেখ হাসিনা যাতে দেশে আসতে না পারেন তারজন্য শেখ হাসিনা প্রতিরোধ কমিটি পর্যন্ত করেছিল এই সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া এসব ইতিহাসই দেশবাসীর জানা। জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পরে আরেক জেনারেল এরশাদের ক্ষমতাগ্রহণ এবং তারও আগে জেনারেল জিয়ার দু:শাষনের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ সহ অপরাপর রাজনৈতিক দলের সংগ্রাম এবং এরশাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, গণতন্ত্রের সংগ্রাম, ভোট ভাতের অধিকারের সংগ্রাম চার দশকের বেশি সময়ের লড়াই সংগ্রাম সেই যে শুরু করেছিলেন শেখ হাসিনা তা একসময় সফল পরিনতি পায় এরশাদের পতনের মাধ্যমে। এই দীর্ঘ পথ চলায় শেখ হাসিনাকে প্রায় সব সরকারই বিভিন্ন পন্থায় হত্যার ষড়যন্ত্র করে। দেশ-বিদেশে জিয়া, খালেদা, এরশাদ কি সরকারে! কি বিরোধী দলে সব অবস্থায় হয় নিজেরা না হয় আতাতিয়র মাধ্যমে বা তাদের লেলিয়ে দেওয়া কোন পেটোয়া বাহিনীর মাধ্যমে অন্তত একুশ বার শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রত্যেক বারই আল্লাহর অশেষ রহমতে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেছেন।
বিএনপির শাসনামলে ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা তো দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যেই যে এই নারকীয় বোমা হামলা চালানো হয়েছিল এবং বিএনপি তখন ক্ষমতায়, তাদের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশেই যে এই বর্বর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এবং এই বর্বর গ্রেনেড হামলা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণে তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা তারেক রহমান সহ বেশ কয়েকজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়েছে। কারো কারো হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। তাই শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি এটা কোন নতুন বিষয় না, বিএনপি যখন কোন অবস্থাতেই শেখ হাসিনার সাথে, আওয়ামী লীগের সাথে বা সর্বোপরি দেশবাসীর সাথে পেড়ে ওঠছে না তখনই তারা এই হত্যার পথ অবলম্বন করেছে। বিএনপির প্রধান ও একমাত্র টার্গেটই শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে একেবারে প্রাণে মেরে ফেলতে পারলেই যেন তাদের খায়েশ মিটে যায়। বিএনপি’র প্রধান নেতা বা এই দলের আবিস্কারক জিয়াউর রহমানও ক্যান্টনমেন্টে বসে হত্যা লীলায় লিপ্ত থেকে ক্ষমতা প্রলম্বিত করেছিল। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বিমান বাহিনীর অসংখ্য অফিসারকে বিনা বিচারে বা বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে জেনারেল জিয়া তাদের হত্যা করেছিল। কর্নেল তাহেরসহ বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম খুনের প্রধান হোতা এই জিয়াউর রহমান। তার দল এবং তার সন্তান তারেক রহমানও একই পথ অবলম্বন করেছে বিদেশে বসে। তাদের কথাবার্তা শুনলেই এটা স্পষ্ট বোঝা যায় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামীলীগই তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ শুধু তাই না, শেখ হাসিনাই তাদের প্রধান টার্গেট এবং শেখ হাসিনাকে যে কোন প্রকারে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়াই তাদের প্রধান কর্ম।
তাই এবার তাদের জেলা পর্যায়ের এক শীর্ষ নেতা, যে নেতা বিএনপি’র প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রকাশ্য জনসভায় শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠানোর কথা বলার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। তার পেছনের খুটির জোরেই তিনি একথা বলেছে। এটা যে বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আস্কারা তাতে কোন সন্দেহ নাই। তা না হলে একটি জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা কিভাবে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিতে পারে এবং এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিএনপির কোন বক্তব্য দেশবাসীর চোখে পড়ে নাই। এর আগেও বিএনপির বিভিন্ন নেতা বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছে। ক্ষমতায় থাকতে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে আক্রমণ করেছে,ক্ষমতার বাইরে থাকতে নিজেরা বা ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে বারবার শেখ হাসিনার উপর আক্রমণ করা হয়েছে। তাই এবারের এই হুমকিকে একেবারে হালকা করে দেখার সুযোগ নাই। এই হুমকির পিছনে যে বিএনপি’র প্রধান নেতারা আছেন তা অত্যন্ত স্পষ্ট, কারণ এই বক্তব্যের কারণে বিএনপির ওই নেতার বিরুদ্ধে বিএনপি কোন ব্যবস্থাই নেয় নাই, দল থেকে এখনো বহিস্কার করে নাই এবং তারা এই অপকর্মের কারণে ওই হুমকি দাতানেতাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও এ পর্যন্ত তুলে দেয় নাই। এতেই বুঝা যায় এই নেতার এই হুমকির পিছনে ঠিকই বড় নেতাদের ছায়া আছে।
আশা করা যায় এই সন্ত্রাসী আবু সাঈদ চাঁদকে সরকার অতি দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করবে এবং হত্যার হুমকির পিছনের রহস্য খতিয়ে দেখবে। ক্ষমতা হারিয়ে বিএনপি ও তারেক রহমানরা যে পাগল হয়ে গিয়েছে তার বড় প্রমাণ নেতাদের দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া। ভয় পাইয়ে দেয়া। এইসব হুমকি-ধামকি দিয়ে যে কোনদিনও ক্ষমতায় যাওয়া যায় না সেটা হয়তো তারেক রহমান বা বিএনপি জানে না। কিন্তু তাদের পুরানো অভ্যাস বাঁকা পথে ক্ষমতায় যাওয়া এবং যেকোনো প্রকারের প্রধান প্রতিপক্ষকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া বা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এটা বিএনপির একটি জন্মগত অভ্যাস। তারেক রহমানরা এই অভ্যাসটা পেয়েছে তার পিতা জিয়ার কাছ থেকে। জেনারেল জিয়া অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে প্রহসনের বিচারের নামে সেনা অফিসারদেরকে এবং রাজনৈতিক কর্মীদেরকে হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকার অপচেস্টা করেছিল। ক্ষমতায় যেতে বিএনপিও এখন সেই পথ বেছে নিয়েছে। তাই বিষয়টিকে সরকারের হালকা করে দেখলে চলবে না। এই হুমকি দাতাকে অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে এবং এর পিছনের যে রহস্য তা বের করতে হবে এবং তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারণ একজন প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়ার পরও যদি সে বিচারের আওতায় না আসে তাহলে দেশবাসীর কিন্তু এই নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ আছে। বিএনপি এবং তাদের শীর্ষ নেতারা এই ধরনের অপতৎপরতা থেকে যদি নিজেদেরকে বিরত না রাখেন তাহলে তারাও ইতিহাসে আস্তাকুরে নিক্ষিপ্ত হবে। কারণ ইতিহাসে হত্যাকারীদের কোন জায়গা নাই তারা খুনি হিসেবে পরিচিত। বিএনপি সেই পথেই হাটছে।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/এসবিডিই
বিএনপির একমাত্র টার্গেট শেখ হাসিনা মুক্তমত মো. আসাদ উল্লাহ তুষার