জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে দরকার সচেতনতা
২২ মে ২০২৩ ১৬:৫৩
আজ ২২ মে। দিনটি আন্তজার্তিক জীববৈচিত্র্য দিবস। মূলত ১৯৯২ সালের ২২ মে কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত জীববৈচিত্র্য বিষয়ক কনভেনশনে দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
শুরুতেই আসি জীববৈচিত্র্য বলতে আমরা আসলে কী বুঝি সে বিষয়ে। জীববিজ্ঞানীদের ভাষায় জীববৈচিত্র্য হলো, পৃথিবীতে জীবনের জৈবিক বৈচিত্র্য এবং বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনশীলতা। অধ্যাপক হ্যামিল্টনের মতে, পৃথিবীর মাটি, জল ও বায়ুতে বসবাসকারী সব উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীবদের মধ্যে যে জিনগত, প্রজাতিগত ও পরিবেশগত বৈচিত্র্য দেখা যায় তাকেই জীববৈচিত্র্য বলে।
এবার আসি জীববৈচিত্রের গুরুত্বের বিষয়ে, কেনই বা আমরা জীববৈচিত্র রক্ষাতে কাজ করবো। এককথায় যদি বলি তাহলে বলতেই হবে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেঁচে থাকার জন্য জীববৈচিত্র্য প্রয়োজন এবং নিজেদের টিকে থাকার জন্য হলেও এই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে।
তবে শুধু হাতে গোণা কয়েকটি প্রজাতি রক্ষা করলেই কিন্তু জীববৈচিত্র্য রক্ষা হয় না। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন সব প্রকারের জীব প্রজাতির ব্যাপারে সমান গুরুত্ব। পরিবেশ বিজ্ঞানের অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জীববৈচিত্র্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানব সমাজের উপকারে আসে। বিশ্বকে সব রাষ্ট্রের মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রতিপালন আবশ্যক। দেশের কৃষি অগ্রযাত্রাকে সুষ্ঠুভাবে ত্বরান্বিত করতে জীববৈচিত্র্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির জন্য দায়ী কে? একবাক্যে সবাই স্বীকার করে নিবেন যে, আমরাই দায়ী। অর্থাৎ স্বার্থলোভী মানুষই জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিটা করছে৷ আমরা অনেকে জৈব্যবৈচিত্র্য হ্রাসের ক্ষতিকর বিষয় জেনেও ক্ষতি করছি আবার আমাদের চোখের সামনেই অনেককে ক্ষতি করতে দিচ্ছি। তবে এ ক্ষতির কারণে যে আমরাই সবচেয়ে ক্ষতিতে পড়তেছি তা কিন্তু আমরা সবাই জেনে গেছি। জীববৈচিত্র্যের উপর আঘাত, সঠিক স্থানে তাদেরকে থাকতে না দেওয়ার কারণেই কিন্তু বিশ্বের এ যাবৎকালের সবচেয়ে ক্ষতিকর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় আমরা। এখনও আমরা এ ভাইরাস থেকে পুরোপুরি নিস্তার পাইনি। জীববৈচিত্র্য রক্ষা না করতে পারলে সামনে করোনার চেয়েও ভয়াবহ রোগের আক্রমণে পড়ার সম্ভাবনার কথা বলেছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।
কমবেশি সবাই জানি, মানবসৃষ্ট কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা না পাওয়ায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিলুপ্তি হয়েছে অনেক প্রাণী। যেসব প্রাণী টিকে আছে তাদের সংরক্ষণ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার করার জন্য আমাদের জীবের বাসস্থানে যাতে হাত না পড়ে সেদিকে খেয়াল করতে হবে৷ একটি দেশের মোট ভুমির কমপক্ষে ২৫% ভাগ বনাঞ্চল থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যা আছে তাও বিলীন হওয়ার পথে, কাজেই প্রাণীকূলও হারাচচ্ছে তাদের আশ্রয়স্থল। তারা চলে আসছে আমাদের লোকালয়ে, ছড়াচ্ছে না রোগব্যাধি।
এদিকে আবার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য কার্যকর আইন না থাকায় ও সেই সাথে জনসচেতনতার অভাবে জীববৈচিত্র্য আরো হুমকির মধ্যে পড়ছে। নির্ধারিত জীববৈচিত্র এলাকায় বা আশ্রয়স্থলে জনগণের অবৈধ প্রবেশ, সম্পদ আহরণ, গবেষণা ও মেধাসত্ত্ব লঙ্ঘনে শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এসব দেখভাল করার জন্য দেশে নেই কোনো সঠিক ব্যবস্থা।
জীববৈচিত্র রক্ষার্থে আমাদের করণীয় কী? করণীয়গুলো হচ্ছে: গাছ না কাটা এবং কোন কারণে কাটলেও পুনরায় প্রচুর গাছ লাগানো। পাহাড় কাটা বন্ধ করা। নদীর পানি দূষিত না করা। পাখি শিকার না করা। রাস্তা-ঘাটের কুকুর-বিড়াল না মারা। শখের বসে পাখি খাঁচায় আটকে না রাখা। প্লাস্টিক ব্যবহার কম করা ও তা পরিবেশে না ফেলা।
এটাই সত্য, আমরা সবাই পরিবেশের অংশ। নিজেকে, নিজের পরিবারকে যেমনভাবে ভালোবাসি, ঠিক তেমনি প্রকৃতির প্রত্যেকটি জিনিসকে নিজের মনে করে ভালোবাসতে হবে। আর এমন ভালোবাসা থাকলেই আপনা আপনি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হবে।
লেখক: কৃষিবিদ
সারাবাংলা/এসবিডিই
আবুল বাশার মিরাজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে দরকার সচেতননতা মুক্তমত