শিক্ষিত বেকার সমাচার
২৪ মে ২০২৩ ১৪:০৬
আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে গেছে শিক্ষিত বেকার সমস্যা। আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ এখন শিক্ষিত বেকার নামে পরিচিত। যারা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু কর্মসংস্থানের অভাবে দিন দিন হারিয়ে ফেলেছে তাদের মানসিক বল এবং জীবনে উঠে দাঁড়ানোর চিন্তাশক্তি। এক নজরে দেখে নেয়া যাক আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকার সমাজের কিছু পরিসংখ্যান-
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি পেলেও দেশে ভালো চাকরির নিশ্চয়তা নেই। উচ্চশিক্ষায় দুর্দান্ত ফল অর্জনকারীদের মধ্যে ২ থেকে সাড়ে ৩৪ শতাংশ বেকার। আবার যারা চাকরি পান, তাদের ৭৫ শতাংশেরই বেতন চল্লিশ হাজার টাকার নিচে।
উচ্চশিক্ষিত মেধাবীদের চাকরি, বেতন ও বেকারত্বের এ হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণায়। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, শিক্ষিতদের (এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী) এক-তৃতীয়াংশই বেকার। তাদের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকার বেশি অর্থাৎ যাদের পেছনে দেশ ও পরিবার বেশি অর্থ ব্যয় করেছে, তারাই বেশি বেকার।
বিআইডিএসের গবেষণা অনুযায়ী, সার্বিকভাবে শিক্ষিতদের মধ্যে ৩৩ শতাংশের বেশি বেকার। আর এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যারা প্রথম শ্রেণি পেয়েছে, তাদের মধ্যে বেকারত্ব ১৯ থেকে সাড়ে ৩৪ শতাংশ। বিশেষ করে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি প্রাপ্তদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশই বেকার। স্নাতক পর্যায়ে এমন মেধাবীদের বেকারত্বের হার প্রায় ২৮ শতাংশ।
এদিকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া প্রতি তিনজনের একজনই বেকার বসে আছেন। আর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে ৩১ শতাংশের বেশি বেকার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, কাজপ্রত্যাশীদের মধ্যে সপ্তাহে ন্যূনতম এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজের সুযোগ না পেলে বেকার হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে এমন বেকার ২৭ লাখ। বিআইডিএসের গবেষণায় বলা হয়েছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণি পেয়েও অনেকেরই চাকরি মেলে না।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। এদের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ সার্বক্ষণিক এবং ১৮ দশমিক ১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত বেকার। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ২ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এই হার ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
একজন অশিক্ষিত লোক কে যতটা না কথা সহ্য করতে হয়, মানুষের বঞ্চনা শুনতে হয় তার চেয়ে হাজার গুন বেশি কথা শুনতে হয় আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকারদের। আমাদের দেশে শিক্ষার হার বেড়ে চলেছে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, কিন্তু অপরপক্ষে চিন্তা করলে দেখা যায় শিক্ষিতের হার বাড়লেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। প্রতিবছর নতুন নতুন শিক্ষিত বেকার তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে। আপনি তো অনেক ভালো পর্যায় যেতে পারতেন, এসব ছোটখাটো চাকরি আপনার জন্য না, আপনার বন্ধুরা তো অনেক ভালো ভালো পর্যায়ে আছে, পরিবারের মানুষ জন বলে কি করলি জীবনে? অথচ দেখ পাশের বাড়ির ছেলেটা ছোটবেলায় কত বোকা স্বভাবের ছিল, অথচ এখন কত ভালো কিছু করছে, পুরো পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। এই ধরনের কথাগুলো প্রতিদিন ডাল-ভাতের মত হাসিমুখে হজম করে শুনেও না শোনার ভান করে এগিয়ে যেতে হয় আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকার দের। আস্তে আস্তে হাত ছেড়ে দিতে থাকে সব কাছের মানুষেরা।
দেখতে দেখতে চোখের সামনে অনেকেরই স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায়, অনেক পরিবার তাদের আশা হারিয়ে ফেলে, কেউবা তাদের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলে, কেউবা সঠিক সময়ে কাছের মানুষদের তাদের প্রাপ্য পাওনা না দিতে পেরে ভিতরে ভিতরে কষ্টে ভোগে। অথচ এই সময়টাতে আমাদের শিক্ষিত গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করা শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি মানসিক সাপোর্ট দরকার হয় কেননা আপনারা পরিবার হিসেবে যদি তার পাশে দাঁড়ান, তাকে বোঝেন তাহলে বাহিরের মানুষের কথায় তার হয়তোবা এত কিছু আসবে যাবে না।কারণ পরিবার সবার আগে, আর পরিবারের মানুষই যদি দূরে ঠেলে দেয় তখন কিন্তু অন্য সবাই যা বলবে সেগুলো বিষের মতো অন্তরে গেঁথে যায়, প্রতিনিয়ত প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খায় ভিতরে ভিতরে। এই সময়টাতে তাদের পাশে থাকুন তাদের হাত ধরে তাদেরকে বোঝান- আরেকটু চেষ্টা করো অবশ্যই পারবে, এত পড়াশোনা করতে পেরেছ, আর কিছুদিন ধৈর্য্য ধরে আরেকটু চেষ্টা করো। তাদের সহায়তা করুন, তাদের উপরে কোনরকম মানসিক চাপ না দিয়ে তাদেরকে বোঝান, তাদের কাঁধে হাত রেখে বলুন আমরা তোমার সাথে আছি।তোমার উপর আমাদের বিশ্বাস আছ। দেখবেন এই মানুষটা একদিন অনেক ভালো কিছু করে দেখাবে, আপনাদের সম্মান অনেক উপরে নিয়ে যাবে।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই