Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মার্কিন কর্তৃত্ববাদের নয়াচাল ও ব্লিংকেনের ভিসা নীতি

তানজিব রহমান
২৮ মে ২০২৩ ১৬:৪৩

পাকিস্তানে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে সেই নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হলো। এবং সম্পূর্ণ অনির্বাচিত একটি সরকারকার প্রতিষ্ঠিা করা হলো। আবার থাইল্যান্ডেও প্রায় এক দশক সেনা শাসন চলার পর সেখানে সম্প্রতি গণতন্ত্রীরা নির্বাচিত হলেও সামরিক বাহিনী যখন তাদেরকে ক্ষমতায় যেতে দিচ্ছে না ঠিক এই মুহুর্তে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে এক নতুন ভিসা নীতির কথা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যে নীতির আওতায় যে কোন বাংলাদেশি ব্যক্তি যদি দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার এ কথা ঘোষণা করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এর আওতায় পড়বেন বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার-সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যবৃন্দ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারবিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরা। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা ২১২ (এ)(৩)(সি)-এর অধীনে নতুন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্লিঙ্কেন জানান, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা। যাকে নিয়ে বাংলাদেশে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ মার্কিন এ নীতির পক্ষে বল্লেও অনেকেই বলছেন তা মার্কিন কর্তৃত্ববাদের নয়াচাল বা সাম্রাজ্যবাদের নতুন কূটকৌশল।

বিজ্ঞাপন

কারণ এসব ঘটনার বিপরীতে পাকিস্তান কিংবা থাইল্যান্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন পদক্ষেপ বা নীতি কারো চোখে পড়েনি। পাকিস্তানেরে এসব ঘটনাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একবারও বলেনি। মনে হচ্ছে তাদের পছন্দের জেনারেলরা যেহেতু ঘটনাটাগুলো ঘটিয়ে যাচ্ছে তাই সেটা জায়েজ। জেনারেলরা যা করেন সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক আগে থেকেই হালাল হিসেবেই গণ্য হয়ে আসছে। আমাদের দেশের জেনারেলরা যা করেছিলেন সেটাতেও তাদের কোন দ্বিমত ছিলনা। জেনারেল ‍জিয়া কিংবা জেনারেল এরশাদের অবৈধ অসাংবিধানিক ক্ষতমাকেও তারা হালাল হিসেবেই গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। তখন জেনারেলদের ভিসা বাতিলের কথা কখনোই তারা বলেনি এবং আগামীতেও বলবেন কিনা সন্দেহ করা যেতেই পারে। আমরা যদি থাইল্যান্ডের নির্বাচনের দিকে তাকাই তাহলে দেখব সেখানে এখন পর্যন্ত জেনারেলরা গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিতদের সরকার গঠন করতে দিচ্ছে না। সেটা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু বলছেও না। হয়তো তাদের পক্ষের জেনারেলরা সেখানে ক্ষমতার কলকাঠি নাড়াচ্ছেন বলে অর্থাৎ তাদের পক্ষে থাকলে গণতান্ত্রিক তাদের পক্ষে না থাকলে অগণতান্ত্রিক সেটা সামরিক কিংবা রাজনৈতিক যেই হউক না কেন।

বিজ্ঞাপন

এক এগারোর সময় হিলারি ক্লিন্টন, ডঃ ইউনুস ও আমেরিকার মদদপুষ্ট একজন আমেরিকান নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তি কিভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদের সমান প্রধান উপদেষ্টার পদ লাভ করেন প্রশ্ন জাগে। যা ছিল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক অরাজনৈতিক পন্থায় । অথচ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিদেশী নাগরিকত্ব লাভকারী কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। বাস্তবে দেখা যায় ফখরুদ্দীন আহমদ ক্ষমতা শেষে আমেরিকাতেই আবার চলে গেলেন। সেখানে ভিসা কোন প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। অর্থাৎ যা দাড়ায় আমেরিকার কথামতো চললে আপনি গণতান্ত্রিক আমেরিকার কথামতো না চললে আপনি অগণতান্ত্রিক। সারা বিশ্বে গণতন্ত্র রপ্তানীতে মার্কিন মল্লুকের মোড়লীপনার এ এক নতুন চাল। তবে তা যে কোন দেশের কল্যাণের চেয়ে অকাল্যাণই বেশী বয়ে আনে তা আমরা ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। বাংলাদেশের প্রতি ব্লিংকেনের নতুন এ ভিসা নীতি যে মার্কিন নয়া সাম্রাজ্যবাদের অংশ তা বললে মোটেও ভুল হবে না।

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- ‘চালুনি বলে ছুঁচ, তোর পিছে কেন ছ্যাঁদা’। নিজের শতেক ফুটো থাকতেও সুঁইয়ের সমালোচনায় মুখর ছাঁকনি। বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়েছে সেই দশা। যে দেশটি মোড়লগিরি প্রদর্শন করতে গিয়ে বিশ্বের সব ইস্যুতে নাক গলায়, মানবাধিকারের ধুয়া তুলে অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে, অন্যের ওপর অযাচিত যুদ্ধ চাপিয়ে হত্যা করে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ; দেশটিতেই যেখানে প্রায় প্রতিদিনই সহিংসতার শিকার হচ্ছে বহু মানুষ- সেই দেশটির কাছ থেকে মানববাধিকার বা গণতন্ত্রের সবক নেয়া যায় কি? সন্ত্রাস দমনে সবচেয়ে সফল র‌্যাবকে তারা না জেনে শুনেই নিষেধাজ্ঞা দিল।

বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা নতুন নয়। ১৯৭৪ সালে পরপর তিনটি ফসল নষ্ট হয় ভয়াবহ বন্যায়। দেখা দেয় চরম খাদ্যাভাব। পাশে এসে দাঁড়ায় জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত। তাদের সামর্থ্য সীমিত। বাংলাদেশের কাছে বিদেশ থেকে খাদ্য ক্রয়ের অর্থ নেই। কিউবার কাছে দেশের গুদামে রাখা ৪০ হাজার বেল পাট বিক্রি করে যদি কিছু অর্থ পাওয়া যায়। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনে হলো, বাংলাদেশকে তাদেরও কিছু সাহায্য দেওয়া উচিত। তাদের ‘পিএল-৪৮০’ কর্মসূচির অধীনে চাল ও গম নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রামের উদ্দেশে সে দেশের বন্দর ত্যাগ করল। পথে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট খবর পেল– কিউবার কাছে পাট বিক্রি করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে কয়েকশ নটিক্যাল মাইল দূরে থেকেই ফিরে গেল জাহাজ। তাদের ‘শত্রু’-দেশের কাছে পাট বিক্রি যেন ভয়াবহ অপরাধ! খাদ্য নিয়ে এই নির্মম রাজনীতি করা দেশটির মুখেই এখন মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়।

প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়র গত বছর বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন একাত্তরে বাংলাদেশ বিষয়ে ভুল পক্ষ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্র কি এখনও সে পথেই হাটছে? কারণ ৭০’র সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন সহায়তা পায়নি। বরং অসহযোগিতার জন্য পাকিস্তান এখানে বর্বর গণহত্যা চালিয়ে প্রায় ত্রিশ লক্ষ নিরিহ মানুষকে হত্যা করেছিল। তখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করেনি অথচ এখন তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র আর মানবাধিকার রপ্তানি করতে চায়। কিন্তু ১৯৭১ সাল আর ২০২৩ সালের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক তফাত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ কোন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্রিড়নক কেন হবে? বরং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি এক হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে।

লেখক: গবেষক

সারাবাংলা/এসবিডিই

তানজিব রহমান মার্কিন কর্তৃত্ববাদের নয়াচাল ও ব্লিংকেনের ভিসা নীতি মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

আরো

সম্পর্কিত খবর