কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে হতে পারেন কীর্তিমান
২ জুন ২০২৩ ১৪:৫৮
সময়ের সাহসী নেতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রবীণ মানুষ।
সত্তরোর্ধ্ব এই বয়সে কঠিন এক সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন তিনি। যে সময়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও গণতন্ত্রের মাতা, দেশনেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে রেখে বিনা ভোটের সরকার জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দেশনেত্রী কারাগারে, দলের পরবর্তী কান্ডারী বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের শক্তির প্রতীক বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুদূর লন্ডনে। বিএনপি মহাসচিব নির্বাচনকে সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেন সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য তৈরি করতে।
এখানে বলে রাখা দরকার, ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি’র সভায় দেশনেত্রী তার বক্তৃতায় ঐক্যপ্রক্রিয়ার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। ম্যাডাম কারাগারে যাবার পর মহাসচিবসহ স্হায়ী কমিটি সদস্যগণ যখন কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তখন তিনি চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময় তাদের বক্তব্যে তা উল্লেখ করেছেন।
এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সরাসরি তদারকিতে বিএনপি স্হায়ী কমিটির দুজন সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে (প্রয়াত) সঙ্গে করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রেখেই অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যৌক্তিকভাবে তৈরি করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যার অগ্রভাগে ছিলেন সংবিধানপ্রণেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
বলা চলে নিয়তির টানেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই লড়াইয়ের সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে যেমন কাজ করতে হয়েছে এবং এখনো কাজ করতে হচ্ছে। একনিষ্ঠভাবে তিনি লক্ষ্য স্থির রেখে ধৈর্যের সাথে সঠিক পদক্ষেপ রেখে গুরুদায়িত্ব এখনো পালন করে যাচ্ছেন। বিশেষত, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ সাল থেকে আজ অবধি যা ঘটেছে সেখানে তিনি নিজেই নিজের পথপ্রদর্শক।
গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অভিভাবক স্থানে রেখে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় রাজনৈতিক জীবনে সবচাইতে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দেশ ও দলের জন্য উজ্জ্বল এক যাত্রাপথ রচনা করে চলেছেন; সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রত্যাশার চূড়া নির্মাণে যিনি নিবেদিত, তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা ম্যাডাম খালেদা জিয়ার নবদিগন্তের সূচনা বড় সাফল্য ছিল। তার এই সাফল্যের ছায়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুই অর্জনে হতে পারেন কীর্তিমান।
প্রথমত, আওয়ামী সরকার ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করার গভীর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আস্থা অর্জনের মধ্যে দিয়ে এবং দলের স্বার্থ রক্ষায় বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন নিজে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নিয়ে।
দ্বিতীয়ত, দেশে লাগামহীন দূর্নীতি, নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, অর্থনীতি সংকট, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন খাতে নৈরাজ্য, কৃষি খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, নজিরবিহীন বিদ্যুৎ লোডশেডিং-এ নাভিশ্বাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বানিজ্য, পররাষ্ট্রনীতিতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেখানে সরকার সর্বতই বীরদর্পে ব্যর্থ, সেখান থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য ‘সরকার বিরোধী ঐক্য গঠন’, আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করানো, দেশনেত্রীর মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্মানজনকভাবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করানো, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় গুণগত পরিবর্তন প্রতিজ্ঞায়, ‘জাতীয় সরকার গঠন করা’।
প্রথম রাজনৈতিক সংগ্রামের পর দ্বিতীয় এই সাফল্যের মধ্যে দিয়ে অর্থনীতির শিক্ষক, ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞান থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্রান্তিকাল পরিভ্রমণশেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হয়ে উঠতে পারেন একজন কীর্তিমান।
লেখক: সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিকর্মী, সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল ও চেয়ারপার্সন প্রেস উইং
সারাবাংলা/এসবিডিই
কণ্টকাকীর্ণ পথ পেড়িয়ে হতে পারেন কীর্তিমান মুক্তমত শায়রুল কবির খান