বাংলাদেশের ফুটবল ও সালাহউদ্দিন প্রসঙ্গ
৪ জুন ২০২৩ ১৫:২৬
খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকার কারণে অনেকদিন যাবৎ ভাবছিলাম সালাউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে কিছু লেখা উচিত। কিন্তু উটকো ঝামেলায় পড়তে চাইনা বলে কিছু লেখা হয় নাই। কিন্তু ব্যাপারটা এখন অনেকটা ইউটিউবের বিজ্ঞাপনের মত হয়ে গেছে চাইলেও আর এড়াতে পারছিনা তাই নিজস্ব মতামত লিখতে চেষ্ঠা করা।
সালাউদ্দিন সাহেব ফুটবলের কিংবদন্তি নিঃসন্দেহে কিন্তু এটাও সত্যি আমার দেখা সবচেয়ে অহংকারী ব্যক্তিও তিনি। উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া সালাউদ্দিন সাহেব এখনও সাম্রাজ্যবাদ যুগে আছেন। কবে কখন কী বলেন তার যে অডিও এবং ভিডিও থেকে যায় তা তিনি এখনও মানতে পারছেন না। উনি যা বলবেন সব সঠিক। বাংলাদেশকে ওয়ার্ল্ড কাপে খেলালেন, আরো যে কত সেনসেশনাল নিউজ মিডিয়াকে দিয়েছেন তার হিসাব নেই।
কথায় কথায় বলেন আমি খেলোয়াড় থেকে ক্রীড়া সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন। কিছু প্রশ্ন জাগে ভালো খেলোয়াড় মানে যে ভালো সংগঠক হয় এই থিওরি কোথায় পেয়েছেন? পাপন সাহেব যখন প্রধানমন্ত্রীকে কল দেয় এটা আপনার কাছে নাটক মনে হয়। এ রকম নাটক করে ফুটবল ফেডারেশনের ৯০০ কোটি টাকার সম্পদ করে দেখান না? ক্রিকেট বোর্ডের বাইরে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের প্রতি পাপন সাহেবের পরিবারের যে অবদান তাতে উনি প্রধানমন্ত্রীকে ক্রিকেটের বাইরেও কল দিতে পারেন বলে আমি মনে করি। উনার সংসদীয় আসনের নাগরিক হিসাবে এটা আমি জানি ক্রিকেট নিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও ভৈরব কুলিয়ারচরের সকল অনুষ্ঠানে উনি উপস্থিত থাকেন।
আমার তো অনেক আত্মসম্মান তাহলে এত কিছুর পরেও দায়িত্ব ছাড়ছেন না কেন? এর দুইটা কারণ হতে পারে। এক. ফুটবলের অনেক ভালো কিছু করতে চাচ্ছেন যেটা ১৫ বছর যাবৎ পারেন নাই। তবে তা ইহজন্মেও পারবেন বলে আমার মনে হয় না। দুই. ফুটবলের সাথে আপনার স্বার্থ কোনো না কোনোভাবে জড়িত যেই কারণে পদ ছাড়ছেন না।
কাজের অভিজ্ঞতার সুবাদে এটা জানি অলিম্পিকের কোয়ালিফায়িং টুর্নামেন্টের সময়সূচি কমপক্ষে ৬ মাস আগে প্রকাশ করা হয়। হঠাৎ করে না যাবার ঘোষণা দিয়ে নিজেদের দোষ বাংলাদেশ অলিম্পিক কমিটি এবং ক্রীড়াবান্দব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দিকে আঙ্গুল তোলার মতো স্টান্ডবাজি আর কতদিন করবেন? কর্ম সূত্রে যতদিন ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে আমার যাবার সৌভাগ্য হয়েছে ততদিন দেখেছি উনি সময় নিয়ে সবার কথা শুনেন এবং ক্রীড়া উন্নয়নে সবাইকে সাহায্য করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নারী ফুটবলারদের আন্দোলনের শাস্তি হিসাবে আপনি, সোহাগ সাহেব এবং কিরণ ম্যাডামের ত্রিরত্ন মেয়েদেরকে মালদ্বীপ পাঠাননি।
আনুচিং মোগিনি আগেই অবসর নিয়েছে। সর্বশেষ স্বপ্না এবং আঁখি নিয়ে বললেন খেলোয়াড় যাবে আসবে এটা সাধারণ বিষয়। আমার ধারণা অবসর নেয়া কোন খেলোয়াড়দের বয়স পঁচিশের বেশি হয় নাই। ফুটবলকে জীবনের ধ্যান ধারণা হিসাবে নিয়ে শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যারা দেশের জন্যে এতো সম্মানজনক ফলাফল নিয়ে এসেছেন তারা কী পরিমান বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে অবসরে গিয়েছে তা আপনি ছাড়া ক্লাস ওয়ানের বাচ্চারাও বুঝতে পারে।
গোলাম রব্বানী সাহেবকে নিয়ে বললেন, আপনাকে বিপদে ফেলতে উনি পদত্যাগ করেছেন। রাব্বানী সাহেব কতটা নিবেদিত মেয়েদের ফুটবলের জন্যে তা সবাই জানে। কাজের প্রতি তার সততা তাকে দেশবাসীর কাছে ভালোবাসার অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আপনি সোহাগ, আপনাদের প্রাণ প্রিয় পল স্মলি এবং কিরণ গং তাকে বাধ্য করেছেন এ সিদ্বান্ত নিতে। সংগঠক হিসেবে আপনার সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা আপনি মানুষের কাঁধে বন্ধুক রেখে নিজেকে পাক-পবিত্র প্রমাণে কাজ করে যাচ্ছেন। সাংবাদিকদের বাবার জুতা পরা ছবি নিয়ে আপনার কথা যদি মজা করাও হয় তা বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নিম্ন রুচির পরিচয় দানকারী মজা।
বাংলাদেশের ফুটবলকে বাঁচিয়ে রেখেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ ফুটবল প্রেমীরা। ওনাদের কাছ থেকে আপনার শিক্ষা নেয়া উচিত কিভাবে কাজ করতে হয়। গ্রামের শিশুদের অন্ত:গ্রাম ফুটবল খেলায় শিশুরা তাদের টাকা কোথায় থেকে আসবে তার দুই থেকে তিনটা প্ল্যান থাকে যা আপনার নেই। আপনি বলেন ভিক্ষা করতে পারবেন না, বিশ্বময় ফুটবলের সাথে সকল নামি দামি ব্র্যান্ড যুক্ত হতে চাই। আপনার সাথে কেউ আসে না কেন? আপনি যখন মানুষের দিকে একটা আঙ্গুল তুলেন একটু মনে রাখবেন বাকি তিনটা আঙ্গুল কিন্তু আপনার দিকে থাকে।
ক্রীড়ামোদী প্রধানমন্ত্রী থাকার পরেও আপনি দেশের ফুটবলকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছেন। যদি সত্যিই আত্মসম্মান থাকে দয়া করে ফুটবল এবং ফুটবলারদের আপনার রাহু থেকে মুক্তি দিন, পদত্যাগ করুন। দেশবাসী এতো অহংকারী, আত্মভুলা, পবিত্র ব্যক্তিকে ফুটবলের নীতি নির্ধারক হিসাবে আর চায় না।
লেখক: ক্রীড়াপ্রেমী
সারাবাংলা/এজেডএস