ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন
১৯ জুন ২০২৩ ১৩:৫২
চোখ রাঙাছে ডেঙ্গু। প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যাক রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এর সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪ হাজার ৯০৮ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিন হাজার ৮০৭ জন। আর ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ১০১ জন। একই সাথে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত চলতি বছরের ১৮ জুন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে এডিস মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ কম দেখা যায়। এরপর ধীরে ধীরে প্রকোপ বাড়লেও মৃত্যুর হার কম ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর পাশাপাশি মৃত্যুর হারও বাড়ছে। সবশেষ ১৭ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি বছরের রেকর্ড মৃত্যু।
ডেঙ্গুর এমন ঊর্ধ্বগতি সংক্রমণে মহামারি শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন রাজধানীবাসী। কেননা, কোনো বছর চিকুনগুনিয়া তো কোনো বছর ডেঙ্গু— কোনো না কোনোভাবে ডেঙ্গু ভোগায় নরগরবাসীকে। যত্রতত্র ফেলে রাখা অব্যবহৃত আসবাবপত্রে জমে থাকা পানি থেকেই মশার উপস্থিতি রাজধানীতে বেশি। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবনে ক্ষেত্রে বেজমেন্টের (অট্টালিকার ভূগর্ভস্থ অংশ) কিউরিংয়ে আটকে থাকা পানিতেই জন্ম নিচ্ছে এডিস মশার উপদ্রব। এসব মশা শুধু কর্মরত শ্রমিকদেরই নয়, আশপাশের বাসাবাড়িতে থাকা মানুষদেরও কামড়ায়। তারাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নাগরিকদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের অদক্ষতার কারণেই নগরে এডিস মশার প্রকোপ বাড়ছে। মশক নিধন নিয়ে তাদের কার্যকর কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই। ঠিকমতো মশার ওষুধও ছিটানো হয় না। বিভিন্ন কর্মসূচির নামে কামান দাগা নিয়ে বসে থাকলেও বাস্তবে এর কোনো সুফল নেই। আবার কীট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, কর্মপরিকল্পনা না থাকাসহ নানা কারণে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না সিটি করপোরেশন। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে সিটি করপোরেশনকে বছরব্যাপী কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
আমরা জানি, সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন মৌসুম ধরা হয়। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই হু হু বাড়ছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাক মৌসুম জরিপে চলতি বছর ডেঙ্গু ব্যাপক আকার ধারণ করার পূর্বাভাস দিলেও এবারও দুই সিটির ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ রুটিন কার্যক্রমেই আটকে আছে বলাই চলে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। মানুষের অসচেতনতা ও গৎবাঁধা কার্যক্রমের কারণেই এ সমস্যার কোনও সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।
সুতরাং ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি স্বাধীন ও নিবেদিত সংস্থা গঠনের পাশাপাশি, মশা নির্মূল করার পদ্ধতিগুলো এবং রাসায়নিক এজেন্টগুলোর ধরন এবং গুণমানগুলো পরীক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কীটনাশক ছিটানো ছাড়া এডিস মশা মারার জন্য বাজারের অন্যান্য পদ্ধতির দিকেও নজর দিতে হবে। এই বিষয়ে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যেতে পারে এবং যদি প্রয়োজন হয় তার অনুকরণ করা যেতে পারে। তাই এডিস মশাবাহিত এই রোগকে নির্মূল করতে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ সারাদেশে যথাযথ মূল্যায়ন সহকারে মনিটর করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গড়িমসি বা গাফিলতি ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। কেননা, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা আমরা চাই না, আমরা ডেঙ্গু নির্মূলে সফলতা কামনা করি।
লেখক: সাংবাদিক
সারাবাংলা/এসবিডিই
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন মুক্তমত মো. মির হোসেন সরকার