বিদ্যুৎ নেই তালপাখা তো আছে
২৭ জুন ২০২৩ ১২:৫০
আমার এক ছোট ভাই থাকে মায়ামির বোকা রতনে, কিছুদিন আগে আমাকে সে ছোট্ট একটি টেক্সট করে। টেক্সটটা নিম্নরুপ : ভাই, দেশের বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে কিছু লেখেন। দিকনির্দেশনা দরকার। তাপদাহ কমানোর জন্যে গাছ লাগানো দরকার।
তার কন্টেন্ট ছোট তবে “দেশের বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে কিছু লেখেন” এটা একটি বড় ইস্যু, এতবড় ইস্যু যে শুধু দেশ নয় গোটা বিশ্ব এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জালে আবদ্ধ। সমস্যা হচ্ছে দেশের অযোগ্য কিছু সংসদ সদস্য আছে যারা মূলত সরকার প্রধানকে খুশি করতে ভুল তথ্য গণমাধ্যমে ছড়ায়। ভাবেনা উল্টোপাল্টা কথা বলে শুধু নিজেকে নয় সরকার প্রধানসহ দেশের মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা হবে।
সুইডেনের মতো দেশেও বিদ্যুৎ সমস্যা চলছে, দাম দুইগুণ হয়েছে অতীতের তুলনায় মূলত ইউক্রেন এবং রাশিয়া যুদ্ধের কারণে। যদিও সুইডিশ জাতি জানতো তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ কিন্তু দেখা গেল স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও রয়েছে গ্লোবাল চুক্তি, রয়েছে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা। মূলত রাজনীতিবিদের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা দেওয়া কিন্তু তারা সেবার পরিবর্তে দিচ্ছে বাঁশ, যার ফলে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বরং নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। একজন ব্যক্তি, সমাজ বা একটি দেশ যখন অন্যের ওপর নির্ভরশীল তখন আত্মনির্ভরশীলতা সহজে গড়ে ওঠে না। যার ফলে গরিব দেশগুলো দরিদ্র হয় অন্যদিকে ধনী দেশগুলো আরো ধনবান হয়।
বলা হচ্ছে বাংলাদেশ খাদ্যে এবং বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ—এই প্রচার দীর্ঘদিনের। সরকারের প্রায় সব মহল থেকেই বারবার এ কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন যেটা দেখছি সেটা। আমরা স্বাধীনতার ৫২ বছরে খাদ্যে বা বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারিনি। কারণ আমাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে সমস্যার পরিমাণ বেশি। তবে প্রচন্ড দুর্নীতির কারণে অনেকে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে চলছে ফলে অর্থের অভাবে জিনিসপত্র সময়মতো সরকার কিনতে ব্যর্থ হচ্ছে, যার ফলে শুধু বিদ্যুৎ নয় সবকিছুর দাম চড়া। এতে পরিষ্কার যে বাংলাদেশ কোনো কিছুতেই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশ কেন বিশ্বের কোনো দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
সমস্যা আসবে, সমস্যা থাকবে তা নাহলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে দরকার সৃজনশীলতার, দরকার শর্ট এবং লং টার্ম প্লান, দরকার সুষ্ঠু পরিকাঠামো, দরকার সঠিক গণতন্ত্র, দরকার সবার কমিটমেন্ট, দরকার দুর্নীতিমুক্ত মনমানসিকতা, সমাজব্যবস্থা এবং প্রশাসন। তা নাহলে যেমন আছি এর থেকে আরও খারাপ থাকার সম্ভাবনা বেশি লক্ষণীয় হবে।
আমি যখন লেখাটি প্রায় শেষ করার পথে, ঠিক তখন আমার এক বন্ধু মেসেঞ্জারে নিচের টেক্সটটি দিয়েছে। বন্ধুকে জানালাম আমি আমার লেখায় তোমার কন্টেন্টটি যুক্ত করব। সে লিখেছে: বিদ্যুৎ নেই জেনেও ফোন চার্জে দেওয়াকে বলে ‘সরলতা।’ বিদ্যুৎ আসার পর ফোনে চার্জ হচ্ছে মনে করা হলো ‘বিশ্বাস’। তিন ঘণ্টা পর এসে দেখলাম ভুলে সুইচ দেইনি! এটা হলো ‘বোকামি’। যা হয়েছে বাদ দিয়ে আবার সুইচ দেওয়াকে বলে ‘ক্ষমা’। সুইচ দেওয়ার পর আবার বিদ্যুৎ যাওয়াকে বলে ‘মন ভাঙ্গা’। বিদ্যুৎ আবার আসতে দেরি হবে ভেবে ফোন সঙ্গে নিয়ে বাইরে যাওয়া হলো ‘কনফিডেন্স’। তিন ঘণ্টা পর বাসায় এসে শুনলেন বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই বিদ্যুৎ এসেছে, এটা হলো ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’। আবার তড়িঘড়ি করে চার্জে লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ যাওয়াকে বলে ‘ছ্যাকা।’ বিদ্যুৎ আসতে পারে ভেবে তিনঘণ্টা বাসায় বসে থাকা হলো ‘অপেক্ষা’। তিনঘণ্টা অপেক্ষা করে নিজের উপর বিরক্ত হয়ে মন খারাপ করাকে বলে ‘ডিপ্রেশন’। এখন আমি ডিপ্রেশনে আছি!
আশা করি বন্ধু শেষের লাইনটি তামাশার ছলে লিখেছে। কারণ বাঙালিকে বিদ্যুৎ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। ৫২ বছর আগে বিদ্যুৎ ছিল না কিন্তু দেশ স্বাধীন করেছি। এখন মহাশূন্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ভুলে গেলে চলবে না। রক্ত যখন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি তখন দেশকে সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতেই হবে। বিদ্যুৎ থাক বা যাক কিচ্ছু যায় আসেনা। আমরা তালের পাতা দিয়ে পাখা বানাতে জানি। গরম আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না তবে দুর্নীতি আমাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলবে। দুর্নীতি বন্ধ করুন, গাছ রোপন করুন আর জনগণের প্রতিনিধি হতে চেষ্টা করুন। দেখবেন আমরা সবাই ভালো আছি। When you feel your inside is beautiful, you will see your outside wonderful. If you feel this way each and every time, then you are a great human being.
লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
সারাবাংলা/এসবিডিই