Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শপথ

কামরুল হাসান নাসিম
২৮ জুন ২০২৩ ১৫:৫৯

ধরে নিলাম জেগে আছি! অনিবার্য কারণে ডাক পড়ল এই মনের অন্তর্দৃষ্টির। সত্যি বলতে চোখ বন্ধ করে সুনির্দিষ্টভাবে কোন কিছুর ওপর অনুসন্ধানী হওয়ার অভ্যাস আছে। সত্যান্বেষী হওয়ার মাধ্যমে আগত সেই ফলাফলের ঘোষণা করার অনুশীলনে অবশ্যি সিদ্ধহস্ত নই। এমন করে মাজার সমিতির সদস্য হওয়ার দরকার নেই। তবে তা আমি দেখি। এই দেখাতে চাইবার কারণ হল, ব্যক্তিকেন্দ্রিক, গোষ্ঠিগত কিংবা জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুলত পরামর্শ দেয়ার অভিপ্রায়ে থাকতে পারার মধ্যে সুখ খুঁজি। অনিরুদ্ধ সুখ!

বিজ্ঞাপন

সমাজের মানুষ কার্যত লেনদেন প্রিয়, যখন ভালবাসাও সমশ্রদ্ধায় নিষ্পত্তি হোক, তা প্রত্যাশা করার মধ্যে নিহিত থাকে। এমতাবস্থায়, যে মানুষটি তোমাকে ভালবাসে, ‘সেই তোমাকেও’ তেমন প্রতিদানে যেতে হবে, এমন দাবী প্রায় সকল মানুষের। ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনে যাকে ভালবাসি, যাদেরকে ভালবাসতে চাই, তাদের কাছ থেকেও ভালবাসা পেতে আমার মনও তো দরজা খুলেই রাখে। কিন্তু গোষ্ঠিগত, জাতীয় কিংবা বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রকৃতির স্বার্থ উদ্ধারে চাওয়া পাওয়ার কোন তাগিদ নেই। এই নিঃস্বার্থ উদ্যোগে অতি অবশ্যই জনস্বার্থ উদ্ধার হয়। চোখ বন্ধ করে তাই প্রকৃতির সমর্থন নিয়ে তৃতীয় চোখ দিয়ে প্রিয় বাংলাদেশ কেমন আছে, ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে, তার একটা ধারণা পেয়ে গেলেই, ব্যাস। পরামর্শ তখন দেয়া শুরু হয়ে যায়। আজ যেমন লিখিত ধারাভাষ্যে থেকে বাংলাদেশের জন্য কিছু বলতে চাইছি।

বিজ্ঞাপন

শপথ! জুলাই মাসে দুই আড়াই ধরণের শপথ আছে। এক, পাঁচ সিটি করপোরেশনের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে জিতে যাওয়া মেয়র-কাউন্সিলরদের শপথ। দুই, দেশের নামধারী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে বলছেন যে, জুলাই মাসে সরকার পড়ে যাবে — এমন প্রেক্ষাপটে অশুভ শক্তি বা রাজনৈতিক অপশক্তি মোকাবিলায় থেকে অর্থবহ উদ্যোগে যাওয়ার একটা শপথ নিতে হবে।

এদিকে রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলররা আগামী ৩ জুলাই শপথ গ্রহণ করবেন। সূত্রমতে সেদিন সকাল দশটায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাপলা হলে শপথ নেবেন আলোচিত রাজনীতিক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। সাথে থাকবেন নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও। শপথ করাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় অদম্য সত্তা হয়ে তিনি এখন বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তিসত্তা। তার মধ্যকার থাকা নেতৃত্বের যে সাধারণ ও অসাধারণ পর্যায়ের গুনাবলি আছে, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করতে পারলে অনাগত প্রজন্ম একদিন উপকৃৎ হবে। তবে খোদ তাকেই একটি প্রশ্ন রাখা যায়! নগর সেবক বা সেবিকা যারা হচ্ছেন, তাদের দায়িত্ববোধ নিয়ে সেই প্রশ্ন। একজন খায়রুজ্জামান লিটন যদি রাজশাহীকে বদলিয়ে দিয়ে অপরুপ সাজের এক নগরী উপহার দিতে পারেন, তবে অপরাপর নগর সেবক সেবিকারা তা করে কেন দেখাতে পারছে না? নারায়ণগঞ্জ, প্রকৃষ্ট উদাহরণ বটে! ঢাকা, খুলনা কিংবা সিলেটেও একই অবস্থা! সঙ্গত যুক্তিতে এবারের মেয়রদের শপথ হাসিনা-লিটনময় হোক। একজন স্বপ্নবাজ। অন্যজন বাস্তবায়নকারীর প্রশ্নে বিপ্লবী। শেখ হাসিনা আপনি আপনার স্বভাবসুলভ আদলে যেয়ে অপরাপর নির্বাচিত মেয়রদেরকে বলুন, ‘লিটনের মত করে পরিপাটি শহর সাজাও’।

সারাবিশ্বের সকল মেয়রদের জন্য আমার রাখা কয়েকটি মতবাদের একটি হল, ‘মানচিত্রভিত্তিক শাসন ব্যবস্থায় যেকোন শহরের জনগোষ্ঠী বরাবরের মত এখানেও একজন মেয়রের কাছে তারা আবেদনকারী। কিন্তু, নাগরিক অধিকার চাইবার যোগ্যতা তাদের আছে কিনা তা পরখ করতে হবে—– অন্যদিকে, রাষ্ট্রকর্তৃক বিশেষ ব্যবস্থায় যখন নগর পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত তুমি একটি সংস্থা বা কর্পোরেশনের দরজার সামনে দাঁড়াচ্ছো, ধাক্কা দিয়ে একটা নির্দিষ্ট চেয়ারে আসন গ্রহণও করছো — তখন নাগরিক তৈরি ও সেবা প্রদান করেই তোমার সেরাটা দিয়ে শহরটাকে শ্রেষ্ঠ কর, আধুনিক কর।’

যেকোন রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণি তার দেশের জনশ্রেণিকে যখন নৈতিক বা সামাজিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবে, তখন ওই জনগোষ্ঠীর মনের মাঝে নাগরিক অধিকার চাইবার দৃষ্টান্ত জ্ঞাত-অজ্ঞাতে ধরা দেবে। কারণ, তাঁরা সাধারণ প্রাণ থেকে ততক্ষণে নাগরিক হতে পেরেছে। কেহ কেহ সু নাগরিক হওয়ার দ্বারপ্রান্তেও চলে যাবে। যদিও বাংলাদেশের মত দেশে মুক্তিযুদ্ধ প্রেক্ষাপটে দেশ স্বাধীন হলেও অতীতে দেশবিরোধী শক্তির রাষ্ট্র দখল করার প্রভাবে সামাজিক- রাজনৈতিক ইতিহাসের সঠিক ধারাভাষ্য বর্ণিত না হওয়ার বাস্তবতাও আছে। তেমন অনৈতিকতায় সঁপে দিয়ে সেই রাস্তায় পথিক হয়েছে দেশের মানুষের বড় একটি অংশ।

অন্যদিকে সার্বজনীন খোরাকের সড়কে দৃষ্টি দিলেও জনগণের মন ও মননের বিকাশে সাংস্কৃতিক সু-বোধ তৈরি না হওয়ার দরুন আজ অব্দি বাংলাদেশ নাগরিকশ্রেণিভুক্ত হয়ে জীবনযাত্রাকে উত্তীর্ণ করায় না। অপরদিকে উন্নত জীবনধারার সাথেও পরিচিত হতে পারছে না। নাগরিক কি, অধিকার কি, সরকার প্রধান থেকে নগরসেবকের কাজ কী — তা এই দেশের মানুষ রপ্ত করতে পারেনি। যেমন, একজন সাংসদের কাজ হল, আইন প্রণয়ন করা। অথচ, মানুষ তার কাছে উন্নয়নের ফর্দ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! এমন বাস্তবতাই হল জনগণের অজ্ঞতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গেল প্রায় পনের বছরে দেশের মানুষের জন্য যা করার চেষ্টা করেছে, সফলও হয়েছে, সেই বিবেচনায় এই দলটি ছাড়া বাংলাদেশের শাসনভার নেয়ার মত কোন একটি রাজনৈতিক দলের সত্যিকারের প্রস্তুতি কি রয়েছে?

এমন প্রশ্নেই কার্যত চোখ বন্ধ করে দেখতে চেয়েছি। ক’দিন ধরে এমনিতেই কানে ভাসছে যে, বিএনপি আহুত কৃত্রিম পর্যায়ের একটি কথিত বিপ্লব আসন্ন! জুলাই মাসের মধ্যে তারা সরকার ফেলতে চায়। তাঁদের বড় বড় নেতা এই বর্ষায় কৌশলী ব্যস্ততায়! মুঠোফোনে থেকে মাঝেমাঝে বিছানার এক পাশ থেকে ঘুরে অন্য পাশে যেয়ে আলস্য আবহে নির্ভার সত্তায় অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে এও বলছেন, এটাই আওয়ামী লীগের শেষ ঈদুল আজহা!

বিএনপির পুনর্গঠন জরুরী। এরপর দলটি আত্মশুদ্ধির শপথে যাক। অতঃপর আরো দশ বছর ধরে জনস্বার্থে তারা কি কি করতে চায়, তা নিয়ে তাদের পরিকল্পনাগুলো শেয়ার করুক। মানুষের মাঝে। দলটি যে জনগণের জন্য রাজনীতি করতে চায়, তা গেল পনের বছরে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক উদ্রেক হিসাবে মানুষের কাছে গণ্য হয়নি। বরং তাদের সকল উদ্যোগের সাথে দেশের উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী রয়েছে এবং বাংলাদেশবিরুদ্ধ আন্তর্জাতিক অপশক্তি রয়েছে। সে কারণেই ধরে নেয়ার সুযোগ আছে যে, আসছে জুলাই থেকে আগস্টের মাঝে দেশে অভিনব পর্যায়ের কৃত্রিম সংকট তৈরি হতে পারে। যা আমলে নেয়ার মত কিংবা আগন্তক শক্তিকে রুখে দেয়ার মত হোমওয়ার্ক সরকার দলের আছে কিনা, সেটিও একটি প্রশ্ন।

শপথ তাই নবনির্বাচিত মেয়রেরা নিক। যারা তার শহরকে পরিপাটি করে বাংলাদেশকে গর্বিত করবে, এমন শাণিত শপথে ভাসুক। বিএনপি পুনর্গঠনে মরণ কামড় দিয়ে দিকভ্রষ্ট তারেক গংদের থামাতেও শপথ দরকার। আর বাংলাদেশ ওই শেখ হাসিনার কাছেই নিরাপদ। তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থায় থেকে মনকে শক্ত করে শপথে ভাসুক বাংলাদেশ। যেখানে রাজনৈতিক অপশক্তি আহুত উদ্যোগকে সামাল দিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ‘মিত্র’ হিসাবে খুঁজে নিতে হবে।

একটি মতবাদ রেখে শেষটা হোক। দৃষ্টি, অবগাহনে জাগ্রত মিষ্ট অনিন্দ্য পথের সন্ধান করায় মাত্র – অন্তর্দৃষ্টি, প্রশ্ন ও সমাধানের সড়ক খুঁজে নেয় বটে !

লেখক: সাংবাদিক, গবেষক ও রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার

সারাবাংলা/এসবিডিই

কামরুল হাসান নাসিম মুক্তমত শপথ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর