বৃক্ষরোপণেই পারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে
৫ জুলাই ২০২৩ ১৩:১৭
সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ জনসংখ্যার অধিক চাপের কারণে ফসলি জমি উজাড় করে তৈরি করা হচ্ছে ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ও কলকারখানা। হরদম কাটা হচ্ছে গাছপালা। মানছে না কেউ নিয়ম-নীতি। শহর কিংবা গ্রামে গাছ কাটার হিড়িক ও ফসলি জমি ধ্বংসের কারণে পাখিদের আশ্রয়স্থল কমে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। এজন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ অর্থাৎ বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই।
তাই পরিবেশ-প্রকৃতি বাঁচাতে নীলফামারী জেলা ডিমলা উপজেলা বালাপাড়া ইউনিয়নে ‘স্বপ্নের বালাপাড়া’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে চলতি বর্ষা মৌসুমে ৫ হাজার ফলজ ও বনজ বৃক্ষরোপণের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রত্যেক সদস্য সংগঠনে দশ টাকা জমা দিয়ে গাছ ক্রয় করে। গ্রামের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর কার্যক্রম শুরু করেন।
ঈদুল আজহার ছুটিতে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ গ্রামে এসেছেন। ফলে তাদের নিয়ে ঈদ পূর্নমিলনী করে সাম্প্রতিক তাপমাত্রার স্মরণ করিয়ে পরিবেশ রক্ষার নিজ উদ্যোগে গ্রহণ করা হয়। ‘স্বপ্নের বালাপাড়া’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে আহ্বায়ক সুজা চৌধুরী সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী রাজাকুল ইসলাম রাজ্জাক, ঢাবির শিক্ষার্থী সুজন ইসলাম, কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী মোরছালিন ইসলাম, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়া বসুনিয়া সানি, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিক প্রমূখ।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বেঁচে থাকা একটি গাছ বিভিন্নভাবে আমাদের উপকৃত করছে। বায়ুদূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষায় ১০ লাখ টাকা, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয় ৫ লাখ টাকা, বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বর শক্তি বাড়িয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, গাছে বাস করা প্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, আসবাবপত্র, জ্বালানি কাঠ ও ফল সরবরাহ করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, জীব-জন্তুর খাদ্য জোগান দিয়ে বাঁচায় ৪০ হাজার টাকা। ফলে একটি গাছের আর্থিক সুবিধার মূল্য দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
গাছ আমাদের সত্যিকারের বন্ধু অথচ আমরা বিভিন্ন স্থাপনার অজুহাতে অকাতরে কেটে ফেলছি গাছ। ফসলি জমি ও গাছপালা বিনষ্ট করে দালানকোঠা নির্মাণ করার ফলে একসময় দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। তাছাড়া এভাবে গাছপালা কমতে থাকলে মানুষ অক্সিজেনের অভাবে ভুগবে। বিশুদ্ধ বাতাসের অভাবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধবে। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর ফলে গাছপালা কাটা বন্ধ হবে।
বর্তমান নতুন প্রজন্ম আগেকার দিনের ফল-ফলাদির কথা বললে তারা বিশ্বাসই করতে চায় না। সেই দিন আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য দরকার অধিক হারে বৃক্ষরোপণ। গাছে গাছে, ফুলে-ফলে ভরে উঠুক আমাদের বাড়ির আঙ্গিনা। স্কুল প্রতিষ্ঠানে, বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। বৃক্ষ নিধনের মিছিল এভাবে চলমান থাকলে মানবজীবন হুমকির মুখে পড়বে, পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পৃথিবী ধ্বংসের মুখোমুখি হবে।
আমাদের পরিবেশ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। গ্রামের তরুণদের মিলেও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। গ্রামের যেখানেই ফাঁকা জায়গা থাকবে, সেখানেই জমির মালিকের অনুমতি নিয়ে গাছ লাগিয়ে দিতে হবে। গাছের ফল বা সুবিধাকে ভোগ করবেন, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে ক্ষেত্রে স্থানভেদে ফলদ, বনজ ও ওষুধি গাছ লাগাতে হবে।
যুব সমাজের একটুখানি সদিচ্ছায় পারে আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত গাছকে রক্ষা করা। কেননা বাড়ির আশপাশের গাছ আমাদের ঘরকে ঝড়-তুফানের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই আমাদেরও গাছের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। শুভ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই প্রত্যেকেই নিজ স্বপ্নের গ্রাম ও শহর সুন্দর-নির্মল পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবো।
ছবি: ‘স্বপ্নের বালাপাড়া’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির ছবি।
লেখক: সংবাদকর্মী ও প্রাবন্ধিক
সারাবাংলা/এসবিডিই
বৃক্ষরোপণেই পারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে মুক্তমত রাশেদুজ্জামান রাশেদ