Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধন্যবাদ তামিম

আজহার মাহমুদ
৬ জুলাই ২০২৩ ১৭:০১

আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন দেশ সেরা ওপেনার ও বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তামিমের এই আকস্মিক বিদায়ে হৃদয়টা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সারা দেশের ভক্তদের, ক্রিকেট প্রেমীদের ভেতর এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে। তবুও দিন শেষে তামিমের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই, শ্রদ্ধা জানাই। এখন থেকে তামিমকে আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে খেলতে দেখা যাবে না। আগেই টি-টুয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন তামিম। এবার ওয়ানডে ও টেস্ট থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিলেন।

বিজ্ঞাপন

৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) নিজের শহর চট্টগ্রামেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানান তামিম। আমাদের দারুণ কিছু স্মৃতি উপহার দেয়ার জন্য তামিম ইকবালকে ধন্যবাদ জানাই। ২০০৭ সালে এই তামিমই ভারতের সাথে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়। তখন থেকে একটা প্রচলিত কথা ছিলো, তামিম রান করলেই বাংলাদেশ জিতে যাবে।

এশিয়া কাপে ভাঙ্গা হাত নিয়ে তামিমের মাঠে নামা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। এখনও সেই দৃশ্য দেখলে চোখ ভিজে উঠবে যে কারো। লর্ডসের অনার্স বোর্ডে বলে কয়ে নাম উঠানোর সামর্থ্যটাও একমাত্র তামিম ইকবালের। মিরপুরে এশিয়া কাপে হাতের আঙ্গুল গুনে গুনে টানা চার ফিফটির সেলেব্রেশন, দেশের হয়ে একমাত্র আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি সেঞ্চুরির উদযাপন সবই এখনও তরতজা।

বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে তামিমের সাথে অনেক খেলোয়াড় এসেছে। আশরাফুল, জহিরুল, কায়েস, বিজয়, সৌম্য, নাইম শেখ, লিটনসহ অনেকেই। কিন্তু ২২ গজের একটা প্রান্ত এক তামিম একাই আগলে রেখেছিলো। আজ থেকে সেই প্রান্থটাও খালি।

এই তামিমকে দিয়েই কিন্তু বাংলাদেশের ট্রল কালচারের প্রচলন শুরু হয়। একসময় যে তামিমকে বুম বুম তামিম বলে উল্লাস করি এখন সেই তামিমকেই ডটবাবা বলে ডাকি। এছাড়াও তামিমকালাপারেনা, ম্যাগিনুডুলস, ভাতিজাসহ এমন আরও অনেক উপাধি ছিলো। এসব কিছুই হজম করে তামিম এপর্যন্ত এসেছে। সবসময় এমন ট্রলের জবাবটা ব্যাটেই দিয়েছিলেন।

স্বাভাবিকভাবেই তামিমের খেলা নিয়ে সমালোচনা আছে, সেটা থাকবেই। স্ট্রাইক রেইট, ক্যাপ্টেন্সি, ফর্মেহীনতা, রান না পাওয়া, ফিটনেস অনেক কিছু নিয়ে হয়তো বলার থাকবে। কিন্তু এই মুহুর্তে সবকিছুই মূল্যহীন। দিন শেষে, তার নামের পাশে ১৫,২০৫ রান, ২৫টা সেঞ্চুরি, ৯৪ টা ফিফটি লিখা থাকবে। এবং এই রানগুলো তামিমের চাচা কিংবা আপনি আমি করে দিই নাই। তামিম নিজেই করেছেন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে, বাংলাদেশের জন্য, আমাদের জন্য।

বিজ্ঞাপন

দিনশেষে আমরা অকৃতজ্ঞও বটে! এই যে তামিম আজ চোখের জলে বিদায় নিয়েছে। এটিই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। যে মানুষটা গত ১৬ বছর এই দেশকে তার সার্ভিস দিয়েছে। যার মতো ওপেনার বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত তৈরি করতে পারেনি। তাকে ব্যক্তিগত ভাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে চোখের জলে বিদায় নিতে হলো। এরচেয়ে বেদনার আর কি হতে পারে?

যদিও তামিম এরচেয়েও বড় বড় বাঁধা পেরিয়ে এসেছেন। মাঠে তার জবাব দিয়েছেন। কিন্তু কেন এভাবে অশ্রুসিক্ত বিদায় নিতে হলো তামিমের! এর বড় কারণ হিসেবে আপাত দৃষ্টিতে কোচকেই দায় দিচ্ছে বেশিরভাগ ক্রিকেট বিশ্লেষক। ব্যক্তিগত আমার কাছেও এটি বড় কারণ হিসেবে মনে হয়েছে। এছাড়াও বিসিবি সভাপতির অনিয়ন্ত্রিত বক্তব্য এবং হুটহাট সিদ্ধান্তও তামিমের এমন সিদ্ধান্তের জন্য সাহায্য করেছে।

পরিশেষে বলতেই হয়, কিংবদন্তিদের কখনও বিদায় জানাতে হয় না বরং তাদের ধন্যবাদ দিতে হয়। তামিম ইকবাল এদেশের ক্রিকেটে আপনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। বিদায় বেলায় একটা কথা একদম মনে গেঁথে গেছে- ‘বাবার স্বপ্নপূরণের জন্যই ক্রিকেট খেলেছি’। ধন্যবাদ তামিম।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

আজহার মাহমুদ ধন্যবাদ তামিম মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর