রায়হান রাফির চলচ্চিত্র এবং পুরুষতন্ত্রের ঘোড়া
৮ জুলাই ২০২৩ ১৬:৫৪
এটা ঠিক যে রায়হান রাফি নির্মিত প্রত্যেকটা ছবি হিট । তবে এটাও ঠিক যে ছবি হিট করবার জন্য রায়হান রাফী বরাবরই পুরুষতন্ত্রের ঘোড়ায় সাওয়ার হয়েছেন। বঙ্গদেশে শুধু মাত্র পুরুষরাই পুরুষতন্ত্রের চর্চা করেন না, এই চর্চায় মেয়েরাও সমানভাবে অংশ নেন। যদিও এদেশে মেয়েরা ভুক্তভোগী হবার পর পুরুষতন্ত্রের আগুনে বাতাস দিতে দিতেই পুরুষতন্ত্রের নিপাত কামনা করে থাকেন।
যাই হোক, প্রসঙ্গ রায়হান রাফীর চলচ্চিত্র এবং পুরুষতন্ত্রের ঘোড়া। রাফীর দহন,পরাণ এবং সুড়ঙ্গ এই তিনটা ছবি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনটি ছবিতেই কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্রগুলো অপেক্ষাকৃত মারমুখী এবং তাদের এই মারমুখী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গ্ল্যামারাইজ করেতাদেরকে ইতিবাচক হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়েছে।এতে করে তথাকথিত পুরুষালী ব্যাপারটা যথার্থ রুপেই উপস্থাপিত হয়েছে। এই চরিত্রগুলোর আরোও একটি বৈশিষ্ট্য হল এরা প্রত্যেকেই প্রতিশোধ পরায়ণ এবং সে প্রতিশোধের একমাত্র কারণ হিসেবে সবগুলো ছবিতে দেখানো হয়েছে নারী চরিত্রগুলোর লোভ,লালসা,ছলনা, প্রতারণা এবং পরশ্রীকাতরতা।
রাফীর অন্য ছবিগুলোতে নারীদের সেই অর্থে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা না হলেও পুরুষ চরিত্রগুলোর মারমুখী ব্যাপারটি যথার্থ রুপেই প্রতীয়মান। সাম্প্রতি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এক উপস্থাপক রায়হান রাফীকে প্রশ্ন করেন , তার ছবিতে কেন নারী চরিত্রগুলোর উপর প্রতিশোধ নেয়া হয়? রায়হান রাফী উত্তরে বলেন, মেয়েদের উপর প্রতিশোধ নিলে দর্শক দেখে বেশী।
আমাদের দেশের প্রক্ষাপটে ভিক্টিম ব্লেমিং যেখানে একটা সাধারণ ঘটনা এবং তা মনস্তাত্বিকভাবে সর্বজন স্বীকৃতও বটে, সেখানে একটা মেয়েকে দোষারোপ করার সুযোগ পেলে সেটা আমজনতার পৈশাচিক আনন্দ লাভের এক জীবন্ত খোরাক হয়ে উঠবে এটাই তো স্বাভাবিক। আর রাফী আমজনতার অন্তরে লুক্কায়িত সেই পশুকে উস্কে দেবার কাজটিই করেছেন বারবার। স্পষ্টত সে কারনেই, সুড়ঙ্গ ছবিতে মাসুদ,
ময়নাকে অজস্র টাকা সমেত আগুনে পুরিয়ে দেবার পর সিনেমা হলে দর্শকেরা সিটি বাজিয়েছে।
এদেশের সুশীল সমাজ , শিল্পীরা, সাহিত্যিকেরা, সচেতন নাগরিকেরা যেখানে প্রতিনিয়ত লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ এবং
পুরুষতন্ত্রের অচলায়তন ভেঙ্গে দেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন সেখানে রায়হান রাফীরা এই শিল্পীদের ব্যাবহার করেই পুরুষতন্ত্রের ঘোড়া হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার গতীতে। আর সে ছুটন্ত পুরুষতন্ত্রের ঘোড়া দেখে সবাই তালি বাজাচ্ছে, জয়ধ্বনি দিচ্ছে।
রাফীর ছবির অভিনয় শিল্পীদেরই যদি ডেকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনারা পুরুষতন্ত্রের পক্ষে না বিপক্ষে? আমি শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারি, তারা বলবে তারা পুরুষতন্ত্রের বিপক্ষে। যদি একই প্রশ্ন চরকি’কে করা হয় তারাও একই উত্তর দিবে এবং তাদের সাইটে “রেহানা মরিয়ম নূর” দেখতে আহ্বান জানাবে। কিন্তু কথা হচ্ছে এরা সেই পুরুষতন্ত্র বেঁচেই টাকা কামাচ্ছে এবং কামাবে। কেননা, এদেশের লোক পুরুষতন্ত্রই খায়।
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা
সারাবাংলা/এজেডএস