দেশের মাটি বাঁচাতে আমাদের কি দায়বদ্ধতা নেই?
১০ জুলাই ২০২৩ ১৪:২৯
আশির দশকে বাহির দেশ থেকে আসা পলিথিন ২০ বছরে দেশের মাটি, পানি, বাতাস প্রকৃতির জন্য এতো বেশি হুমকির পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০০২ সালে পলিথিন উৎপাদন বাজারজাত সহ ব্যবহার একবারে নিষিদ্ধ করা হয়। এতো বছর গত হলেও কেন বিষাক্ত পলিথিন ব্যবহার কমছে না?
আমরা কি নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে ছিলাম?
আমরা নিশ্চিয় আমাদের শোবার ঘরে ময়লা, ধূলোবালি পানের পিক ফেলে অপরিস্কার করে রাখি না? কেন রাখিনা তার কারণ যথাযথ আছে সেটাও আমরা জানি।
কারণ ঘর আমাকে নিরাপত্তা দেয়। আমার সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে। জিবনের সকল আয় দিয়ে হলেও ভাল একটা ঘর বানানোর স্বপ্ন দেখি।
কিন্তু যে ভূমির উপর ঘর বানালাম সেই ভূমির উপর আমার যে দায়িত্ববোধ আছে সেটা আমাদের অজানায় থেকে যায়।
একটা দেশ তৈরি হয় মাটি, পানি, পরিবেশ, প্রকৃতি, ভাষা, সংস্কৃতি মানুষ সহ নানা কিছূর মিশ্রনে। এবং এই সকল কিছু রক্ষণাবেক্ষন করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এটাই স্বদেশ প্রেম।
পলিথিন দেশে আসার বিশ বছর পরে নিষিদ্ধ হলো আরো বিশ বছর পার হয়ে গেল। মানুষ যেন পলিথিন ব্যবহারে সর্তক হয় তার জন্য আইনও করা হল তবুও কেন আমরা পলিথিন ব্যবহার করছি?
তাহলে কি আমাদের স্বদেশ প্রেমের অভাব? পলিথিন বিষাক্ত জেনেও আমরা ব্যবহারে সচেতন হচ্ছি না। আমাদের কি উচিৎ না নিজ দেশের মাটি, পানি, বায়ুর কথা চিন্তা করে হলেও পলিথিন ব্যবহারে সচেতন হওয়া।
বাংলাদেশ সরকার প্রথম বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ২০০২ সালের ১ মার্চ আইন করে পলিথিন ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করেন। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ধারাটি সংযোজন করা হয়। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি বা বাজারজাত করে, তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা এমনকি উভয় দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলছেন, প্লাস্টিক এমন একটি পদার্থ যার আয়ুষ্কাল হাজার হাজার বছর।যা মাটিতে গেলে ক্ষয় হয়না বা মাটির সাথে মিশে যায়না।
এটি মাটিতে পানি ও প্রাকৃতিক যে পুষ্টি উপাদান রয়েছ তার চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে মাটির গুনগত মান হ্রাস পায়। গাছ তার খাবার পায়না। মাটি ও পানিতে প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়ে। যা হয়ত পানি থেকে মাছের শরীরে যাচ্ছে।
মাটিতে প্লাস্টিকের তৈরি টক্সিক রাসায়নিক পদার্থ গাছে মিশে যাচ্ছে। আর তা শেষমেশ শুধু পশু পাখি নয় মানুষের শরীরেও এসে পৌছায়। প্লাস্টিক মানুষের শরীরে আরো অনেক মরণ ব্যাধির পাশাপাশি ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
এতো ক্ষতি থাকার পরও কেন আমরা পলিথিন ব্যবহার করছি সেই বিষয়ে একাধিক সচেতন মানুষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, পলিথিনের বিপরীতে আমরা কি ব্যবহার করবো সেটা যথাযথ নাই।
যেহেতু আমরা নির্ভরশীল হয়েই গেছি একবারে কমিয়ে আনা সম্ভব না। আমাদের প্রত্যেকের মাটি,প্রাণ,প্রকৃতিকে বাচাঁনোর জন্য বাজার সহ যাবতীয় কাজে কিভাবে পলিথিন ব্যবহার কমিয়ে আনা যায় সেই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
শুধু তাই নয় অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ২০২২/২৩ প্রস্তাবিত বাজেটেও সব ধরনের পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগ ও মোড়কের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার গত অর্থবছরে এসব সামগ্রীর ওপর ৫শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা ছিল।
সরকারের আইন এবং শুল্ক কমিয়ে দেওয়া কিসে ইঙ্গিত করে সেটা ভাববার বিষয়।
প্রথমত, সরকার তার আইন সঠিক ভাবে প্রয়োগে ব্যর্থ।
দ্বিতীয়ত, একটা দেশ কিন্তু শুধু সরকারের একার নয়। জনগনকে নিয়ে সরকার গঠন হয়। জনগন যদি সরকারকে সাহায্য না করে তাহলে সরকারের পক্ষে দেশের কোন আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। আর সেই আইন যদি হয় দেশেরে মাটি ,পানি, বায়ূ রক্ষায় তবে সেটা স্বদেশ প্রেম আমার মনে হয়। স্বদেশ প্রেমর বোধ জাগ্রত না হলে একটা দেশের পরিবেশ সামগ্রীয় বিষয় যেমন প্রকৃতি, সংস্কৃতি, ভাষা কোন ভাবেই ধরে রাখা যাবে না।
দেশ প্রেমের উপরে আইন নয়। সেই প্রমাণ বাঙালী দিয়েছে ইতিহাসের নানা লড়াই সংগ্রামে। বিষাক্ত পলিথিন ব্যবহার কমিয়ে দেশের মাটি, প্রকৃতিকে রক্ষা করবো এই হোক আমাদের আগামীর প্রতিশ্রুতি।
লেখক: শিক্ষার্থী, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
দেশের মাটি বাঁচাতে আমাদের কি দায়বদ্ধতা নেই? মুক্তমত রাতুল মুন্সী