রাজনীতির মাঠে কেন একজন শিক্ষক আরাফাত প্রয়োজনীয়?
১২ জুলাই ২০২৩ ১৬:১০
সমাজ পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষা। যে সমাজে শিক্ষার আলো যত বেশি প্রসারিত, সে সমাজ তত বেশি উন্নত- এ কথা অনস্বীকার্য। একজন শিক্ষিত মানুষ যত বেশি আলো ছড়াবেন তা অন্য কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমার কাছে শিক্ষিত মানুষের আবেদন সবচেয়ে বেশি, সে যে ক্ষেত্রই হোক না কেন।
উন্নতি আর অগ্রগতির শর্ত পূরণে তাই শিক্ষিত মানুষকে বেশি প্রয়োজন। কোন কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। রাজনীতিই পারে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে, মানুষের মানবিক চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে পারে- একমাত্র রাজনীতি। কিন্তু সেই রাজনীতি হতে হবে শুদ্ধ ও মানবিক রাজনীতি। জনমানুষের রাজনীতি। মানুষের পক্ষে, দেশের পক্ষে উন্নয়নের রাজনীতি। যে রাজনীতি দেশ ও দশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, দেশের স্বার্থ বিবেচনায়। কোন অবস্থাতেই দেশ প্রেমের সামান্য বিচ্যুতি ঘটবে না, হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনার ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে। তবেই তা হবে সমৃদ্ধ রাজনীতির পথ।
এই মূহুর্তে রাজনীতির মাঠে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে। ঢাকা-১৭ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, যিনি সবার কাছে নায়ক ফারুক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সজ্জন ছিলেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি তার কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারেননি। সেই শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন আগামী ১৭ জুলাই। সেখানে চলছে নানান প্রচার প্রচারণা, চায়ের কাপে ধোয়া, নানা আলোচনা সমালোচনা।
ইতোমধ্যে সেই আসনে আওয়ামী লীগ নৌকার নতুন মাঝিও নির্ধারণ করেছেন। আমি মনে করি সকল বিবেচনায় যথার্থ একজন মানুষকে মনোনীত করা হয়েছে। কেননা একজন শিক্ষিত অধ্যাপক, যিনি একই সঙ্গে সফল গবেষক এবং রাজনীতিবিদ, তিনি যেভাবে এই এলাকাটি বুঝবেন তা হয়তো অন্য অনেকের পক্ষে অপারগতা হতে পারে বা পারতো। সে কথা কেন বলছি তার ব্যাখ্যাও করি- এলাকাটি স্পর্শকাতর, সাধারণ জনমানুষ, নিন্মবিত্ত, মধ্যবিত্ত যেমন রয়েছেন; তেমনই রয়েছেন অতি উচ্চবিত্ত, সামরিক, আধা সামরিক ব্যক্তিবর্গ। একই সাথে ঢাকার ডিপ্লোমেটিক জোনও এটি।
অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত ভিন্নমাত্রার মানবিক মানুষ। তার জন্ম রাজশাহীতে, বেড়ে ওঠা ঢাকায়। উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন দেশের বাইরে। আমেরিকার দুটো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ডিগ্রী করেছেন। দেশে আইইউবি এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে শিক্ষকতাও করছেন দীর্ঘদিন। প্রান্তিক মানুষদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা তার অনেকদিনের। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি এলাকা ঘুরেছেন প্রান্তিক মানুষদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজে। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে ছিলেন সোচ্চার। পদ্মা সেতু ইস্যুতেও তাই। অনেক ধরনের গুজব আর মিথ্যা প্রচারণাকে প্রতিহত করেছেন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। দেশের সঙ্গে অন্য দেশের বৈদেশিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুসংহত রাখতে তিনি ভূমিকা রেখে চলেছেন দীর্ঘদিন।
ফলে একদিনে তিনি যেমন দরিদ্রপীড়িত মানুষের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম, তেমনি বিদেশি দূতাবাসসহ উচ্চবিত্ত মানুষদের নাগরিক চাহিদা পূরণেও কাজের যোগ্যতা তার রয়েছে। ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ, যোগ্য ও বিচক্ষণ মনোনয়ন তিনি, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বৃহত্তর উত্তরবঙ্গের লোক হবার কারণে তার বাবা মোহাম্মদ সেতাবউদ্দিন ও তার সর্ম্পকে ব্যক্তিগতভাবেও আমার জানা রয়েছে। সেতাবউদ্দিন নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা যার দুই ভাইও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। আমি নিজেও দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছি। ১৯৭৬ সালে যোগদান করি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রাবস্থায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম (১৯৭১-৭২)। শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম। শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। এখনো জনমানুষের রাজনীতি করি, বঙ্গবন্ধুকে বুকে ধারণ ও লালন করি আর জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথেই আমাদের পথচলা। সেই পথে অধ্যাপক আরাফাতের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতে গড়া একজন মানুষ যদি সাংসদ হয়, তবে দেশের কল্যাণ কেবল গুলশান বা ঢাকা-১৭ নয়, একথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি।
রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকবে, বিরোধিতা থাকবে, আমি নিজেও অনেক আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি, রক্ত দিয়েছি। এখনো আমার অবস্থান অনড়। কিন্তু সবসময় বিবেচনা করেছি দেশের স্বার্থ, জনমানুষের স্বার্থ। কিন্তু ক্ষমতার জন্য, অর্থের জন্য মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে, ভোটের অধিকার নিয়ে তামাশা করবো এ বড় অন্যায়।
অধ্যাপক আরাফাতের বিরুদ্ধে যেভাবে হিরো আলম নামের এক ব্যক্তিকে কার্ড হিসেবে কাজে লাগাবার চেষ্টা চলছে তা রাজনীতিতে দুঃখজনক, লজ্জাজনকও বটে। হিরো নামধারী যে ব্যক্তি তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, হিরো হতে হয় কাজে, জোর করে বা নাম রেখে নয়। আজকে গুলশান, কালকে বগুড়া, পরশু পটুয়াখালী থেকে নির্বাচন করবো তা কেমন? সত্যিই কি আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই?
সত্যি বলতে মানুষের জ্ঞান, মেধা, শ্রম, সততাই মানুষকে হিরো করে। হিরো বলে আলাদা কিছু নেই, সমাজে প্রত্যেক মানুষই হিরো। যদি তার মধ্যে ইতিবাচকতা কাজ করে। নিজের ও অন্যের এগিয়ে যাওয়ায় তার ভূমিকা থাকে। মানুষ তাকে অনুসরণ করতে চায় তার কাজের কারণে। তবেই সে সত্যিকারের হিরো। দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা আর রাজনীতি আমাকে এই শিক্ষাই দিয়েছে।
বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়। রাজনীতি কোন ছেলেখেলা নয়। বহু মানুষের রক্ত আর অশ্রুর উপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। অসংখ্য মানুষের ত্যাগ, এক জীবনের সংগ্রাম। খুব সহজ কথা নয় যতো সহজ মনে করি আমরা। তাই সঠিক মানুষটিকে বেছে নিতে হবে নিজেদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে। তবেই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে এগিয়ে যাবে।
লেখক: সাবেক সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও সাবেক অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি মুক্তমত রাজনীতির মাঠে কেন একজন শিক্ষক আরাফাত প্রয়োজনীয়?