Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গুতে আতঙ্কের থেকে জরুরি সচেতনতা

রিফাত আমিন রিয়ন
১ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৪১

করোনা ভাইরাস শেষ হওয়ার পরে এবার দেশব্যাপী তীব্র প্রকোপ ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। এডিস মশাবাহিত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা গত কয়েক দিনে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে। সংক্রমণের এই হার যেন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডেঙ্গু এডিস মশা বাহিত একটি রোগ। এই রোগটি গ্রীষ্মকালীন সময়ে বেশি দেখা যায়। সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষয়ী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। এ সময় রক্তপাত হয়, রক্ত অণুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরে আবার ডেঙ্গুর এই সংক্রমণ সারা দেশের মানুষের জন্য নতুন ভীতিকর এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর ২৪৭ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। আর চলতি জুলাইয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২০০ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ১৩৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৮ হাজার ৩২ জন ও ঢাকার বাইরে ২১ হাজার ১০৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। জুন মাসের তুলনায় চলতি জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় সাত গুণ বেড়েছে। রোগীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। আক্রান্ত পুরুষের হার ৬৪ শতাংশ। আক্রান্ত নারীর হার ৩৬ শতাংশ। ঢাকায় শিশুদের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি।

সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক জরিপের মাধ্যমে জানিয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যান গত বছর, ২৮১ জন। এর আগে ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল কোভিড মহামারী হানা দেওয়ার ঠিক আগের বছর ২০১৯ সালে। সে বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের। ২০১৯ সালে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। এ ছাড়া ২০২০ সালে ৭ জন ও ২০২১ সালে মারা যান ১০৫ জন। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছিল শিশু, শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী।

বিগত সময়ে ডেঙ্গু পরিস্থিত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ঐ আট বছরে কখনোই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়ায়নি। ২০১৫ সাল থেকে রোগটির প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালে কিছুটা কমে ২০১৮ সালে আবার বেড়ে যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে। এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আমেরিকা, আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রায় ১০০টি দেশে এ রোগের বিস্তার রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। যার মধ্যে ৫ লাখ মানুষ হেমোরেজিক জ্বরে ভোগেন আর কমপক্ষে ২২ হাজার মানুষ মারা যান। যাদের মধ্যে একটি বড় অংশই শিশু।

সারা দেশের তুলনায় ঢাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। এর বড় কারণ জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার কারণে ডেঙ্গুর লার্ভা সৃষ্টি হয়। নগরীতে যতগুলো প্রাকৃতিক খাল আছে তার অনেকাংশ দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্নয়হীনতা এ সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। রেগুলেটর ও স্লুইসগেট নষ্ট হয়ে যাওয়া ও সঠিকভাবে পরিচালনা না করার কারণে ধীরগতিতে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান ২০১৫-এ মোট ৪৭টি খালের কথা উল্লেখ আছে। এ খালগুলো উদ্ধার করতে হবে এবং এর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ময়লা-আবর্জনা যাতে নর্দমা ও প্রাকৃতিক খালে ভরাট হতে না পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। বর্ষা মৌসুমের আগেই নর্দমা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। নর্দমা নির্মাণ, মেরামত ও খননের কাজ শুকনো মৌসুমের মধ্যেই করা জরুরি।

মনে রাখতে হবে, এডিস মশা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। অপরিষ্কার, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে মশা ডিম পাড়ে না। তাই আমাদের চারপাশের কোথায় স্বচ্ছ পানি জমে আছে, তা লক্ষ রাখতে হবে। শহর অঞ্চলে অনেকেই শখ করে ছাদে বিভিন্ন ফুল-ফলের গাছ লাগিয়ে থাকে। অনেকে আবার অনেক অপ্রয়োজনীয় বালতি, বোতল ছাদে ফেলে রাখে বা প্রয়োজন হেতু মজুত করে। ঘর সাজানোর জন্যও পানিভর্তি ফুলদানি রাখে ঘরের ভেতরে। পানি জমে থাকা এসব পাত্র ভালোমতো ও নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। কারণ, পাত্রে থাকা পানিতে মশার লার্ভা থাকতে পারে, যা থেকে ডিম ফুটতে পারে। এছাড়া ঝোপঝাড় ও নালায় মশার জন্ম হয়। তাই বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় ও নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধী টিকা কয়েকটি দেশে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এই টিকা শুধু একবার সংক্রমিত হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর। মূলত এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তাই মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে। সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যার আগে এডিস মশার কামড়ানো প্রবণতা বেড়ে যায়। শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরিধান করতে হবে। খালি শরীরে থাকা যাবে না। ডেঙ্গু সংক্রমণের ক্ষেত্রে বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থরা থাকেন উচ্চ ঝুঁকিতে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরে প্রচুর পানি শূন্যতা দেখা যায়। কাজেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি বেশি পানীয় দ্রব্যাদি খাওয়াতে হবে, যেমন- লেবুর শরবত, ডাবের পানি, বিভিন্ন ফলের জুস ইত্যাদি। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কখনো আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের কালে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: শিক্ষার্থী, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ

সারাবাংলা/এসবিডিই

ডেঙ্গুতে আতঙ্কের থেকে জরুরি সচেতনতা মুক্তমত রিফাত আমিন রিয়ন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘আমাদের সেনাবাহিনী যেন তৈরি থাকে’
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৯

আগস্টে কমেছে মূল্যস্ফীতি
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৭

সম্পর্কিত খবর