মৃদু হাসিতে কষ্ট লুকায় তিনিই বাবা
৩ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫০
বাবা শব্দটি দুই অক্ষরের হলেও এর মর্মার্থ বিশ্লেষণের ক্ষমতা অনেকাংশেই অসাধ্য, বাবা এমন একটি নাম যা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা মানে বিশাল বৃক্ষ, নির্ভরতার আকাশ আর অশেষ নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা মমতাময় স্থান। সন্তানের কাছে তার প্রত্যেক বাবাই প্রিয়। কারও কাছে বটবৃক্ষের মতো, কারো কাছে সুপারম্যান, কারো কাছে আবার জীবনযোদ্ধা, কারও কাছে বাবা আলাদিনের চেরাগ। বাবা থাকলে সন্তানের হাতের মুঠোয় থাকে দুনিয়ার সমস্ত সুখ,আর অনাবিল শান্তি। আবার যার বাবা নেই তার কাছে সমস্ত দুনিয়া অন্ধকার,চির অন্ধকার, তার কাছে রঙিন এই দুনিয়াও যেন বিভীষিকাময় কালো আঁধারের মত মনে হয়।
যে বাবা তার নিরাপত্তার দেয়াল অতিক্রম করা সন্তানকে শাসনের মুখোমুখি করে তখন সন্তানের চোখে দেখা যায় ভয়ের প্রতিচ্ছবি। আবার সেই বাবার আদরের মুহূর্তেই আনন্দে অশ্রুর ঢেউ খেলে যা সাধারণত সাগরের ঢেউ কেও হার মানায় সন্তানের চোখে। হাজারো সন্তানের জীবনকে বাস্তবতার মুখোমুখি এনে সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়েও খাটি যোদ্ধা হওয়ার শিক্ষাও দেন একমাত্র বাবারাই।
বাবা শুধুই বাবা নয়!বাবা এক মায়ার নাম, বাবা এক ছায়ার নাম,বাবা এক পরম অনুভূতির নাম। বাবা চোখের সামনে ভেসে ওঠা এক অক্লান্ত পরিশ্রমী জীবনযোদ্ধার নাম,যে যোদ্ধার কারণে পৃথিবীর সকল সন্তান পরম আনন্দ,সুখ,সাচ্ছন্দ্য,আরাম-আয়েসে জীবন উপভোগ করতে পারে। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকে যে মানুষটা আমাদের একটু সুখের জন্য, আমাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো এবং সকল চাহিদা মেটানোর জন্য নিজের সব সুখ ও ইচ্ছা বিসর্জন দেন তিনিই হলেন বাবা।
যিনি আমাদের চাহিদা, আমাদের আবদারগুলো পূরণ করার জন্য দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বানিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যান তিনি আমাদের বাবা। অনেক সময় পরিশ্রমের ঘামে ভিজে যাওয়া শার্ট আবারও করা পরিশ্রমের ফাকে শুকিয়ে যায় কিন্তু কষ্ট অনুভব করেন না তিনিই বাবা, বাবা জীবনের এক বিশাল বটবৃক্ষ, উত্তপ্ত সূর্যের তলে সন্তানের অমল-শীতল ছায়া। বাবার তুলনা অন্য কারো সাথে হয়না যার তুলনা তিনি নিজেই। তাই তো বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। সন্তান যতই ভুল কাজ করে থাকুক না কেন সঠিক সময়ে বাবারাই সব ভুলের সমাধান হয়ে দাঁড়ায়। বাবা মানে অনেক চাওয়া, বাবা মানে অনেক পাওয়া, বাবা মানে অনেক পূর্ণতার গুদামঘর। বাবার কাছে সন্তান কখনোই বড় হয় না, তাই সারাজীবন আদর, যত্ন,স্নেহ, মায়া-মমতায় বাবারা সন্তানদের আগলে রাখে। বাবা এমন একজন মানুষ যে তার সন্তানকে যেমন আঁকড়ে ধরে রাখে তেমনি সন্তানকে বাইরের জগতের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শক্ত হাতে প্রস্তুত করেও তোলে৷ বাবারা সন্তানকে শেখায় কিভাবে পথ চলতে হয়,কিভাবে নিজেকে সবার থেকে অনন্য করে গড়ে তুলতে হয়। হাজারো কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করে তিল তিল করে সন্তানকে বড় করে তুলেন বাবারাই। একজন মেয়ের জীবনে তার বাবাই থাকে তার প্রথম পুরুষ,যে বাবা কখনো মেয়েকে বোঝা মনে করেন না,প্রত্যেক বাবার কাছেই তার মেয়ে যেন রাজকন্যা। তাই মেয়েদের জীবনে প্রথম ছেলে বন্ধু হয় তার বাবা। বাবা-মেয়ের বন্ধন যেন এক অসীম মমতার চাঁদরে ঘেরা বিশ্বস্ত এক বন্ধন। পক্ষান্তরে ঠিক তেমনি বাবা ছেলের বন্ধনও এক নিরবচ্ছিন্ন ছায়ায় ঘেরা বন্ধন। বাবা হচ্ছেন ছেলে সন্তানের পরম বন্ধু। বাবা হলো স্রষ্টার ভালোবাসার মহা কবিতার এক প্রতিচ্ছবি।একজন সফল বাবা সাধারনত তার চেয়েও সফল ভাবে একজন সন্তানকে তৈরি করতে চেষ্টা করেন।
বাবা হলেন সেই আকুতোভয়ী এক যোদ্ধা, যে জীবনের সকল মুহুর্তে সব ধরনের পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থেকেছে এবং আমৃত্যু থাকে। বাবা হলেন একজন বিশ্বস্ত বন্ধু, যার উপর আমরা সর্বদা নির্ভয়ে নির্ভর করতে পারি।
বাবা হলো অর্জুন গাছের মতো। যার পাতা কষকষ হলেও ছাল অনেক উপকারী সবসময় উপকার করে যায়।বাবা মানে, হাজারটা ধাঁধার একটাই সমাধান এক নিমেষেই শেষ করে দেওয়ার এক ম্যাজিকম্যান। বাবা নামটা ধ্বনিতে আসার সঙ্গে সঙ্গে যে কোন বয়সী সন্তানের হ্রদয়ে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা, আর ভালোবাসার এক অনুভব সৃষ্টি হয় ।একজন বাবা হলেন-একজন আইকন, অনুপ্রেরণা ও আত্ম-সংযমের প্রধান উৎস। বাবা হল সেই লাইফ জ্যাকেট যার উপর ভরষা করে তার সন্তানরা বিশাল সাগরও পারি দিয়ে থাকে।বাবা এমন একজন অসাধারণ ব্যক্তি, যিনি সারাজীবন আমাদের জন্যে কষ্ট এবং করেন অক্লান্ত পরিশ্রম । নিজের সব অনুভুতি লুকিয়ে রাখেন মৃদু হাসির ভাঁজে। নিজের সব ইচ্ছার জলাঞ্জলি দিয়ে জীবন যুদ্ধে একা লড়ে যান।পৃথিবীতে একমাত্র বাবার ভালবাসায় কোন স্বার্থ থাকেনা। সে নিঃস্বার্থভাবে পরিবারের জন্য সারা জীবন কষ্ট করে যায় সন্তানের সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধির আশায়।
বাবা ঐতিহ্যের তাল গাছের শেকড়ের চাইতে মজবুত টেকসই শেকড়” শেষ বিকেলের বট গাছের ছায়ার চাইতেও বড়। একমাত্র বাবা তার সন্তানকে জীবনের সব ধরনের অভাব, অনটন, দুঃখ,কষ্ট ও উত্তাপ থেকে সামলে রাখে।একজন বাবা তার সন্তানের জন্য কত ভাবে অবদান রেখে যায়, তার হিসাব কেউ কখনো দিতে পারেনি এবং দিতে পারবেও না।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই