বহুমুখী প্রমথ চৌধুরী আলোকিত করেছেন বাংলা সাহিত্যকে
৭ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৪৬
বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরীর ১৫৫ তম জন্মদিন আজ। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘বীরবল’ নামেই সমধিক পরিচিত। পরবর্তীতে তিনি বিখ্যাত ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে পালন করেন।
বাংলা সাহিত্যকে তিনি নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন সমালোচক। বর্তমানে সমালোচনার নামে যদিও অনেকে নিন্দা করে, ব্যক্তিকে খাটো করে, তার সৃষ্টকর্মকে তুলোধুনো করে ব্যক্তি আক্রোশে। প্রমথ চৌধুরী ছিলেন তার উল্টো স্রোতের যাত্রী। ব্যক্তি আক্রোশ তার সমালোচনায় ছিলো না বললেই চলে। তিনি সাহিত্যের গঠনমূলক সমালোচনা করতেন। যা এখনো তাঁকে প্রথম শ্রেণির সমালোচকের আসনে সমাসীন রেখেছে।
প্রমথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুরে। স্থানীয় জমিদার বংশে তাঁর জন্ম, তাঁর পিতার নাম দুর্গাদাস চৌধুরী। তার মায়ের নাম সুকুমারী দেবী যিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজো বোন ছিলেন।
প্রমথ চৌধুরী কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে বিএ পাস, ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাশ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন ছিলো অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড গমন করেন এবং তিনি সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথেই ব্যারিস্টারি পাশ করেন।
কর্মজীবনে কিছুকাল তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপনা ছাড়াও সরকারের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্যিক ছদ্মনাম হিসেবে তিনি “বীরবল” নামটি ব্যবহার করতেন। রবীন্দ্রনাথের ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীর সাথে প্রণয়াবদ্ধ হন প্রথম চৌধুরী।
প্রমথ চৌধুরী একটি উপন্যাসও লেখেননি। বৃহদাকৃতি রচনার প্রতি তার কিছুমাত্র আকর্ষণ ছিলো না, মেজাজ ছিলো তার ছোট লেখার অনুকূল। বাংলা সাহিত্যে বিদগ্ধ, যুক্তিনিষ্ঠ সুপ্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী বাংলায় ফারসি ছোটগল্পের আঙ্গিকরীতিকে তিনিই প্রথম পরিচিত করিয়েছিলেন। রূপসিদ্ধতা, ও আঙ্গিক গঠনের দুর্লভ নিপুণতার পরিচয় ও ভাষায় মননশীলতা, বাকচাতুর্যের চমৎকারিত্ব এবং বুদ্ধির অসিচালনা তাঁকে দিয়েছে এক বিশিষ্ট ‘স্টাইল’ ফরাসি সংজ্ঞায় যা প্রমথ চৌধুরী স্বয়ং।
জীবনঘনিষ্ঠ লেখাই তাকে কালের ম্রিয়মাণ রেখায় মূর্ত করে রেখেছে। ধ্রুবসত্য হলো মানবজীবনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকলে ব্যক্তি ভালোমানের সাহিত্য রচনা করতে পারে না। যে জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ হতে সাহিত্য সৃষ্টি হয় তা দৈনিক জীবন নয়। কথায় চিড়ে না ভিজলেও যে কথার দ্বারা মন ভেজে তা অনস্বীকার্য। যে কথায় মন ভেজে সে কথা দিয়েই রচিত হয় সাহিত্য। কাক-কোকিল যে ভাষায় মানুষের ঘুম ভাঙায়, মানুষকে জাগিয়ে তোলে, সাহিত্যে সে জাগরণের ভাষা থাকা দরকার। আর এসব সকল দিক দিয়েই যেন তার রচনা ছিলো সমৃদ্ধ।
বাংলা সাহিত্যে ‘রম্য’ সাহিত্যের প্রচার, প্রসার, বাকবৈদগ্ধতা ও সুনিপুণ বিন্যাসে, চুটকির নতুনত্বে প্রমথ চৌধুরীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক হিসেবে খ্যাত। বাংলা সাহিত্যে যিনি নিজস্ব ধারায় সনেট রচনা করেছেন।
বাংলা সাহিত্যের এই বিখ্যাত দিকপাল, মননশীল, যুক্তিবাদী, সৃষ্টিশীল ভাষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ সালে শান্তিনিকেতনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তার শুভ জন্মদিন। তার জন্ম আলোকিত করেছে আমাদের সাহিত্যাঙ্গনকে। তার জন্মদিনে জানাই শ্রদ্ধার্ঘ্য।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
ইমরান ইমন বহুমুখী প্রমথ চৌধুরী আলোকিত করেছেন বাংলা সাহিত্যকে মুক্তমত