বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ
১৫ আগস্ট ২০২৩ ১২:৩৭
ওরা ভেবেছিল তোমাকে মারলে হয়ে যাবে সব শেষ ওরা তো জানে না বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। কেঁদেছিল আকাশ ফুটিয়েছিল বাতাস, বৃষ্টিতে নয় ঝরে নয় এই অনুভূতি ছিল পিতা হারানোর শোকের। প্রকৃতি কেঁদেছিল কারণ মানুষ কাঁদতে পারেনি। ঘাতকের উদত রক্ত চক্ষু তাদের কাঁদতে দেয়নি। কি নিষ্ঠুর কি ভয়াল কি ভয়ানক সেই রাত ।
আজ রক্তঝরা অশ্রু ভেজা ১৫ই আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস বাঙালি জাতির শোকের দিন । ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এই দিনে ভোরের আলো ফোটার আগেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর নিজ বাসায়। বাংলাদেশ স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল এ দেশের ক্ষমতালোভী নরপশু কুচক্রী মহল ।
সেদিন তিনি ছাড়াও ঘাতকের বুলেটে নিহত হন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য আত্মীয়-স্বজনসহ নিহত হন আরো ১৬ জন। ঐ সময় দেশের বাহিরে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। আজকের এই শোক সভায় সকলের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
মুজিব আমার চাদের আলো মিষ্টি রোদের হাসি
দেশের সকল মানুষ মোরা তোমায় ভালোবাসি।
শেখ মুজিবুর রহমান কেবল এক ব্যক্তির নাম নন। আমার বঙ্গবন্ধু একজন দার্শনিক যিনি মুক্তিযুদ্ধের ২০ বছর আগ থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
আমার বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের ছিনে আনা লাল-সবুজের পতাকা, একটি ইতিহাস, একটি মহাকাব্য একটি বাংলাদেশ।
আমার বঙ্গবন্ধু যিনি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতা। বাংলাদেশ যার ফলস্বরূপ ৫৬ বছর বয়সের জীবনে ৪৬৮২ দিন তাকে কাটাতে হয়েছিল কারাগারের কাল কুঠুরিতে। এ বন্দিত্ব তিনি ভোগ করেছিলেন দুঃখী মানুষের জন্যে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি সংসার জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। অন্য যে কোন পেশায় নিশ্চিন্তে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু তিনি তা করেন নাই মানুষের কথা ভাবেন বলে।
আমার বঙ্গবন্ধু যিনি ৭ই মার্চের মাত্র ১৮ মিনিটের এক ভাসনে এক আঙ্গুল উঠিয়ে সারা বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে শিখিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ। স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার। স্বাধীনতার পরেই আমার বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাসন দিয়ে বাংলা ভাষার মান সমুন্নত করেছেন।
কিন্তু হায় কি দুর্ভাগ্য আমাদের ধরে রাখতে পারেনি, আমরা আমাদের বঙ্গবন্ধুকে। একদল অকৃতজ্ঞ বাঙালি নৃশংসভাবে হত্যা করে আমাদের বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে। ঘাতক দল ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তার নাম ইতিহাস থেকে চিরতরে মুছে ফেলবে কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন সফল হয়নি।
ঘাতকরা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যে পথ সৃষ্টি হয়েছিল সেখান থেকে দেশকে সরিয়ে বিপরীতমুখী করার উদ্দেশ্যই ছিল তাদের একটি বড় লক্ষ্য।
দীর্ঘদিন পরে হলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। আজ আমার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলতে গেলে হয়তো মহাকাব্য হয়ে যাবে কিন্তু কথা ফুরাবেনা। আমার বঙ্গবন্ধু একটি চেতনার নাম যিনি জাগ্রত আছেন প্রতিটি বাঙালি হৃদয়।
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন ২৩ বছর । আর স্বাধীন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। ফলে ২৩ বছরের নেতৃত্বে গড়ার স্বদেশকে তিনি সমমহিমায় সাজাতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা সফল করে তুলতে পারলেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সার্থক হবে।
১৯২০ সালে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যখন তৎকালীন পূর্ববাংলার ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম হয় সে সময় পূর্ববাংলা ছিল মুলত গ্রামবাংলা। এই গ্রামবাংলারই এক মধ্যবিত্ত ঘরে তাঁর জন্ম। তার পিতা ছিলেন ব্যবসায়ী ও বেশ ভূমির মালিক অন্যদিকে মাতা ছিলেন তৎকালীন গ্রামীণ রেওয়াজ অনুযায়ী গৃহবধূ। ছোটবেলায় অসুস্থতার জন্য শিক্ষাজীবন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও পিতার সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকে বঙ্গবন্ধুর। একটু বেশি বয়স হলেও ২২ বছর বয়সে গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে কোলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হলেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আন্দোলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষার পরিধি ছিল ব্যাপক। ব্যস্ত এই রাজনীতিক তার ২২ বছরের ঝড়ের গতির রাজনৈতিক জীবনে প্রায় চৌদ্দ বছর জেল খেটেছেন। এই জেল জীবনই তাকে পড়াশোনা এবং লেখার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছে। এছাড়া তার বড় মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট মেয়ে শেখ রেহানার কাছ থেকে জানা যায় যে তিনি সারাদিন ক্লান্তিকর পরিশ্রম শেষে যত রাতেই বাসায় ফিরতেন না কেন, ঘুমের আগে কোন না কোন বই পড়তেন।
উনবিংশ শতকের প্রাচ্য ও পশ্চিমের দুই উদারনৈতিক বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী লেখক রবীন্দ্রনাথ এবং বাট্রার্ন্ড রাসেল ছিলেন তার সব থেকে প্রিয় লেখক। এই দুই লেখকের দর্শনের প্রতিফলন তার জীবন ও রাজনীতিতে সব সময়ই দেখা গেছে। রবীন্দ্রনাথ ও রাসেলকে জীবনে ধারণ করার ফলে তিনি ব্যক্তি জীবনে যেমন ছিলেন একজন সর্বোচ্চ উদার মানুষ তেমনি একজন উদার রাজনীতিক হিসেবেও প্রমাণিত ব্যক্তিত্ব। উদারতার ক্ষেত্রে তার ছিল মহান অবদান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আমার কবিতা_
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
জাতির পিতা মহামানব মহান।
টুঙ্গিপাড়ার দুরন্ত স্বভাবের সেই ছেলেটা
কেউ জানতো তিনিই যে হবেন
বাঙালির আজীবনের মুক্তির বার্তা
তিনিই যে বাঙালির ত্রাতা।
বাঙালির মনে বাঙালির প্রাণে
তুমি বঙ্গবন্ধু আছো মিশে সর্বজনে।
বিশ্বনেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সেই উক্তি
আমি হিমালয় দেখিনি তবে
শেখ মুজিবকে দেখেছি।
হিমালয়ের চাইতেও উঁচু
বিপদ দেখে তুমি হওনি কখনো পিছু।
বাংলার মাটিকে করতে রক্ষে
সর্বদা সকল যন্ত্রণা পেতে নিয়েছে বক্ষে।
নিরীহ বাঙালীরে চুষে খায় পাকিস্তান
তাই দেখে স্রষ্টা পাঠালেন দূত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রেসকোর্স ময়দান
কানায় কানায় লোকে লোকারণ্য।
সেদিন যেন এসেছিল কোন দেবদূত
দিয়ে গেল সেই স্লোগান আগাম
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।
এক মন্ত্রেই বাঙালি পেল মুক্তি
বঙ্গবন্ধু পেলেন জনগণের ভক্তি।
তারপর সেই ভয়াল আগস্ট মাস।
শোন হে অনাগত সন্তান
শোন হে আদম সন্তান
মনে রেখ কীর্তি সেই মহান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আসুন আমরা সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক খুদা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলি জাতীয় শোক দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার ।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: ছাত্রনেতা, সাবেক সহ সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা
সারাবাংলা/এসবিডিই