Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কলঙ্কজনক এক কালো অধ্যায়

তাসনিমুল হাসান রাহাত
১৫ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫১

১৫ আগস্ট বাংলার আকাশ-বাতাস আর প্রকৃতির অশ্রুসিক্ত হওয়ার দিন। কেননা ১৯৭৫ সালের এই দিনে আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া অশ্রুর প্লাবনে।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরই অশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে সমগ্র বাংলায়।

বিজ্ঞাপন

আগস্ট মাস এলেই মনে পড়ে যায় সেই ভয়াবহ স্মৃতি, যা আমাদের বেদনার্ত করে তোলে। যে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বন্দি রেখেও স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাক-হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। এই ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি, তার সহধর্মিণী আরজু মণি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু সেদিন ভাগ্যের জোরে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া। বিশ্বের কোনো দেশে এমন নজির নেই। বাঙালি জাতি আজীবন গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সকল শহীদকে।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনে দেশের সংবিধানও প্রণয়ন করেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। শোষক আর শোষিতে বিভক্ত সেদিনের বিশ্ববাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শোষিতের পক্ষে।

বাঙালি, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ শব্দ তিনটি একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃত্ব দেন তিনি। তার সারাজীবনের কর্মকান্ড, আন্দোলন সংগ্রাম নির্দেশিত হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে। এ লক্ষ্য নিয়ে তিনি ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ এবং ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন।

১৯৪৮-১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু তরুনদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তারুণ্যের ক্ষোভ এবং দ্রোহের সঙ্গে তিনি সংযোগ ঘটাতে পারতেন। তরুণদের ভাবনায় তিনি মিশে যাওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের পতন ঘটে বঙ্গবন্ধুর ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ সমাজের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তিনিই আহ্বান জানান তরুণদের। বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তির সনদ ৬ দফা কর্মসূচিসহ ষাটের দশকে যে আন্দোলনগুলো পাকিস্তানি সেনাশাসনের ভিত্তি নড়িয়ে দিয়েছিল তা তরুণ সমাজেরই কীর্তি।

১৯৬৯-এর গণঅভু্যত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচনে নজিরবিহীন বিজয় এ সবই সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দক্ষ নেতৃত্বগুণের জন্য। ২৩ ফেব্রম্নয়ারি, ১৯৬৯ বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। ৭ মার্চ, ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানের বঙ্গবন্ধুর সেই জ্বালাময়ী ভাষণকে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, ‘কে রোধে তাহার বজ্র কণ্ঠবাণী? গণসূর্যে মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর কবিতাখানি। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ যা বাঙালির রক্তে আগুন ধরায়, বিজয়ের নেশায় মত্ত করে তোলে। ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম এ ভাষণটি ১২টি ভাষায় অনূদিত হয়। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এ দেশকে ঢেলে সাজানোর কাজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। নতুন প্রজন্মের কাছে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মাত্র ১০ মাসের মাথায় শহীদের রক্তে লিখিত সংবিধান দেশবাসীকে উপহার দেন।

সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ মূলনীতি লিপিবদ্ধ করে তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেন। আবার অনেকের চোখে তিনি একজন সফল কূটনীতিবিদ। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ১৪০টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করেছিলেন; জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে সদস্যপদ লাভ করেছিল বাংলাদেশ।

সোনার বাংলা গড়তে ব্যস্ত থাকাকালে এ বাংলার মাটিতেই ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ অপশক্তির হাতে তার জীবনাবসান ঘটে। তরুণদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল অসহায় মানুষের সেবা করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা।

বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, তার বাগ্মিতা, মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থহীন ভালোবাসা, সহজেই মানুষের সঙ্গে মেশা, সাহসিকতা প্রভৃতি গুণাবলি তার দিকে তরুণদের আকৃষ্ট করতে বাধ্য করে। ৭ মার্চের ভাষণ, তার আঙুলি হেলানো বজ্রকণ্ঠ, শব্দ চয়ন ভীষণ শিহরিত করে তরুণদের। তাই তো তরুণ প্রজন্ম ধারণ করতে চায় বঙ্গবন্ধুকে।

বর্তমানে বাংলাদেশে আদর্শ বা উদার রাজনীতির সংকট চলছে। যে তরুণরা আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা; তারা আজ রাজনীতিবিমুখ। এখন চলছে অর্থ আর ক্ষমতার রাজনীতি। এসব থেকে বেরিয়ে এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করা আজকের স্বাধীন বাংলা পৃথিবীর বুকে সুপরিচিত এক টুকরো লাল-সবুজের ঝলমলে আলোক রশ্মি। যতই ইতিহাসের গন্ডি থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলো পড়ি ততই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি এক সংজ্ঞাহীন ভালোবাসার জন্ম হতে লাগে, তার সম্পর্কে জানার আগ্রহ এবং ঔৎসুক্যও ক্রমশ বেড়ে চলে। একটি নবজাতকের জন্ম হওয়ার পর পরই বাবা-মায়ের শুরু হয়ে যায় সন্তানকে লালান পালন করে মানুষের মতো করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা। কেউ চাই তাদের সন্তান ডাক্তার হোক, জাজ হোক, ব্যারিস্টার হোক অথবা ইঞ্জনিয়ার হোক।

একমাত্র এই পেশা গুলোই তাদের সন্তানকে মানুষের মতো করে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু, শেখ লুৎফুর রহমান ও সায়েরা বেগমের মতো খুব কম পিতামাতাই চান তাদের সন্তান বঙ্গবন্ধুর মতো দেশপ্রেমিক হয়ে সমাজের বুকে বড় হয়ে উঠুক। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও এই বিষয় টা সত্যি খুব বেদনাদায়ক। বঙ্গবন্ধুর ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সকল পিতামাতার সদায় দৃষ্টি কামনা করছি, সন্তানকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মানুষ করে তুলুন। তবেই বঙ্গবন্ধুর সতেজ নিঃশ্বাস বাংলার বুকে খুঁজে পাওয়া যাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

কলঙ্কজনক এক কালো অধ্যায় তাসনিমুল হাসান রাহাত মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

মেগা নিলাম শেষে কোন দল কেমন হলো?
২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:১১

আরো

সম্পর্কিত খবর