রিয়াদকে অন্তত বিশ্বকাপে শেষ সুযোগ দেওয়া উচিত
১৫ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৬
বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শেষ ইতোমধ্যেই অনেকে দেখে ফেলেছেন আর আজ অনেকেই এমনটা মন্তব্য করেছেন। আমি সত্যি বলতে এই বিষয়টা নিয়ে তেমন আপসেট নই। আমার কাছে এসব তাল-বাহানা নতুন নয়। ২০১৫ সালের যে দলটা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেরা দল সেই স্কোয়াড় নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা ছিলো। ২০১৯ সালে তাসকিনের বাদ পড়া নিয়েও নানান সমালোচনা ছিলো। ২০২৩ সালে হয়তো সেটা রিয়াদ হতে যাচ্ছে। এতে তার ক্যারিয়ারের ইতিই হবে।
আমার ভাবনা ভিন্ন জায়গায়। প্রথম কথা তামিম অবসর নিয়েছে। খেলা ছেড়ে দিতে চাওয়া একজন খেলোয়াড়কে প্রধানমন্ত্রী ডেকে নিয়ে খেলায় ফিরিয়েছেন। অথচ পরপর তিন সিরিজেই খেলতে চাওয়া রিয়াদকে কি কেউ হস্তক্ষেপ করেও খেলাতে পারেন নাই?
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, পরপর তিন সিরিজ এবং ওয়ানডে এশিয়া কাপ এবং লাস্ট টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া রিয়াদ এই দুই ফরম্যাটেই অবসর না নিয়ে চুপ করে অপমান সহ্য করে যাচ্ছেন কেন? তামিম-মুশিরা সাহসের সাথে অন্তত অবসর নিতে জানে। রিয়াদ কি সেটাও পারে না?
তৃতীয় কথা, মাশরাফি না-কি বুঝদার বড় ভাইয়ের ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাহলে তিনি কি সেটা শুধুই তামিমর জন্য করেছিলেন? রিয়াদের জন্য কি তার কোনো ভূমিকা রাখার ছিলো না?
শেষ কথা, জাতীয় দলে এখন সিনিয়র চার খেলোয়ােড়ের মধ্যে বেশ অমিল রয়েছে। রিয়াদকে এশিয়া কাপে বাদ দেওয়াটা সহজ হয়েছে সাকিবের কারণে। এই রিয়াদকে ১৯ বিশ্বকাপেই বাদ দেওয়ার কথা বলেছিলেন সাকিব। এটা সাকিব অধিনায়ক হওয়ার পর আরেকবার দেখালেন। টি-টুয়েন্টিতেও রিয়াদের কাছ থেকে অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিবকে দেওয়া হয়েছে। এরপর রিয়াদকে আর সাকিবের দলে দেখা যায়নি। শুধুমাত্র বিপিএলে দেখা গেছে।
সাকিব আবেগি নয়, সহমর্মিতা প্রকাশ করতে জানে না, খুব বেশি আন্তরিক হতে জানে না। হয়তো এটাই তার স্ট্রাটেজি। সাকিবের কাজ চড়াও হওয়া, বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া। সাকিব সেটা পেরেছি, ভবিষ্যতেও পারবে এবং সফলতাও পাবে।
সবমিলিয়ে সাকিব এখন তিন ফরম্যটের অধিনায়ক। রিয়াদ টেস্টে অবসর নিয়েছে। আপাতত এই দুই ফরম্যাটেও রিয়াদের থাকার সম্ভাবনা নেই। যেটা সাকিবের পরিকল্পনার সাথেও যায় না। তবে সবার চাপ, আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ যদি আসে সেক্ষেত্রে সাকিবের সরাসরি বিরোধিতা করার কিছু থাকবে না। আপাতত কোচ, বোর্ড, নির্বাচক, ক্যাপ্টেন সবাই রিয়াদ ইস্যুতে এক।
আরেকটা মজার লজিক দিয়ে শেষ করি। তামিম টি-টুয়েন্টিতে অবসর নেওয়ার বড় কারণ সবাই হাতুড়েসিংহকে জানলেও এখানে রিয়াদও অন্যতম। তামিম আর মুশিকে যখন হাতুড়েসিংহে বিশ ওভারের খেলায় বিবেচনা করছে না তখন বিশ্বকাপের দল ঘোষনার সময় রিয়াদ মুশির জন্য অনুরোধ করলেও তামিমের জন্য অনুরোধ করেনি। রিয়াদ নিজেও চেয়েছে তামিম বিশ ওভারের খেলা থেকে অবসর নিক। মানে তামিম বিশ ওভারের খেলোয়াড় নয়। তবে বোর্ড তামিমকে রাখতো। কিন্তু তামিমের কানে রিয়াদের এই সিদ্ধান্ত আসার পর তামিম আচমকা অবসর নিয়ে নেয়। এরপর বিশ্বকাপের পর মুশফিককেও টি-টুয়েন্টি দল থেকে বাদ দেওয়া হয় বিশ্রামের নামে। এরপমর মুশিও অবসর নেয়। এটাই আত্মসম্মান। রিয়াদ এ জায়গায় দুটোই হারালেন।
তবুও রিয়াদকে শেষবার বিশ্বকাপে সবাই চায়। এই এশিয়াকাপে যদি আফিফ-শামীম-মাহাদীরা কেউ অলৌকিক পারফরম্যান্স না দেয় সেক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও রিয়াদকে বিশ্বকাপ মঞ্চ থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক।
এরপর রিয়াদ যদি অবসর না নেয় সেটা রিয়াদের একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার। যেহেতু কোচ-ক্যাপ্টেনের পরিকল্পনায় রিয়াদ নাই নেহেতু এরপর আর এটা নিয়ে বেশি আলোচনা সমালোচনা হবে না। যদি রিয়াদ অকল্পনীয় পারফরম্যন্স করে সেক্ষেত্রে দলে সুযোগ পেলেও রিয়াদের ফর্ম খারাপ গেলেই রিয়াদকে সরিয়ে দেওয়ার পায়তারা ঠিকই করবে। তাই রিয়াদের উচিত বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে বিদায়র মঞ্চ হিসেবেই মাঠে নামা।
পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশ দলে রিয়াদের যে অবদান সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই, ছোট করার সাহস কারও নেই। রিয়াদের ফর্ম, ফিল্ডিং, স্ট্রাইক রেট যা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন এখনও পর্যন্ত রিয়াদ বাংলাদেশ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
আজহার মাহমুদ মুক্তমত রিয়াদকে অন্তত বিশ্বকাপে শেষ সুযোগ দেওয়া উচিত