Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারীরা আটকায় না, আটকে দেওয়া হয়

সুকান্ত দাস
১৯ আগস্ট ২০২৩ ১৭:২১

কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা বিষয় নিয়ে রীতিমতো তুলকালাম হয়ে যাচ্ছে। নারীরা কিসে আটকায়? কেউ বলছে টাকা পয়সায়, তো কেউ বলছে সৌন্দর্যে আবার কেউ বলে ভালোবাসায় আটকায়। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে বোঝা যায় নারীরা আটকায় না তাদের আটকে দেয়া হয়। আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে আমরা অসংখ্য বেড়াজাল বুনে রেখেছি শুধুমাত্র নারীদের আটকানোর জন্য। তাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার জন্য।

বিজ্ঞাপন

ছোটবেলা থেকে একটা জিনিস খেয়াল করে আসছি, পরিবারে নতুন কোনো সন্তান এলে লিঙ্গ ভেদে সেই সন্তানের অভ্যর্থনায় বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান থাকে। যদি ছেলে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে আনন্দের সীমা থাকে না। কিন্তু যদি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে বিষাদের ছায়া নেমে আসে পরিবারজুড়ে। বিভিন্ন সময় পরিবার ভেদে এর পার্থক্য দেখা যায়। তবে অধিকাংশ জায়গায় এমনটাই ঘটে। যেকোনো ঘটনায় ছোট মেয়ে শিশু কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক নারী সকল ক্ষেত্রেই দোষ নারীদের দেয়া হয়। যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ আমাদের বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা। আবার অনেক সময় দেখা যায় একটা ছেলে শিশু ঘরের কোন জিনিস ভেঙে ফেললে কেউ কিছু বলে না কিন্তু মেয়ে শিশুটা সামান্য অবাধ্য হলেই বকা খায়। আমাদের সমাজব্যবস্থায় এই মনোভাব গুলো একেবারে ছোট থেকেই তৈরি করে দেয় যে ছেলেরা যা খুশি তাই করতে পারে কিন্তু মেয়েরা পারেনা।

বিজ্ঞাপন

অধিকাংশ মানুষ তার শিশুকালে শেখা এই মনোভাবের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। যে কারণে একটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে সেখানেও মেয়েদের দোষ খোঁজা হয়। ধর্ষকদের বিচারের কথা আর কজন বলে? অধিকাংশই মেয়ের দোষ নিয়ে কথা বলে। মেয়েটা কেনো ওমন পোশাক পরলো, কেনো রাতে বের হলো এমন আরো অনেক কথা।

মেয়েরা যে সমাজে কোন অপরাধ করে না তা নয়। কিন্তু যেখানে ১০০ টা অপরাধ ছেলেরা করছে সেখানে মেয়েদের দ্বারা ঘটে মাত্র একটি ঘটনা। অপরাধী অবশ্যই প্রচলিত আইনে সাজা পাবে। কিন্তু এই একটা মেয়ের করা অপরাধ নিয়ে মানুষ এত মাতামাতি করে যে ১০০ ছেলের অপরাধের বিষয়টা চাপা পড়ে যায়। এ বিষয়ে গ্রাম বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে, “চালন কয় সুই কে তোর পিছে কেন ফাঁকা “।
নজরুল বলছেন,
“শুনহ ধর্মের চাঁই জারজ কামজ সন্তানে দেখি কোন সে প্রভেদ নাই, অসতী মায়ের পুত্র সে যদি জারজ পুত্র হয় অসৎ পিতার সন্তান তবে জারজ সুনিশ্চয়।”
কিন্তু আমাদের সমাজের লোক ওই অসতী মায়ের ছেলেকে নিয়ে উপহাস করে, অসৎ পিতার ছেলেকে নিয়ে কোনো কথা হয় না।

সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে জেনছি খুলনার বটিয়াঘাটার তেঁতুলিয়া গ্রামে সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির ৪ নারী ফুটবলারকে মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলাই তাদের অপরাধ। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও আসামিরা হুমকি দিয়েছে মামলা তুলে না দিলে ওই ফুটবলারদের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করবে।

হামলায় আহত মঙ্গলী বাগচী বলেন, ‘তারা আমাকে আহত করে প্রায় দুই ঘন্টা হাত বেঁধে আটকে রেখেছিল। তখন আমি অজ্ঞান ছিলাম। জ্ঞান ফিরলে দেখি চেয়ারের সঙ্গে আমার হাত বাঁধা। রক্তে আমার গা ভিজে গেছে। জ্ঞান ফিরলে হামলাকারীরা হুমকি দেয়- মেয়ে মানুষ হয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেললে গ্রাম থেকে বের করে দিবো। তারপর আর এই এলাকায় আসা যাবে না। পরে স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।’(সূত্র- দৈনিক ইত্তেফাক)
অথচ বয়স ভিত্তিক দলে যেখানে পুরুষ দল কোনো শিরোপা জিততে পারে নি সেখানে তারার মতো জ্বল জ্বল করছে সবশেষ সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের দেশের মাটিতে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়। এর আগে ২০১৭ সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো বাংলাদেশ।

অথচ ফুটবল কিংবা ক্রিকেট মিলিয়ে পুরুষ দলের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও সেই অনুপাতে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি৷ তবে নারীদের এই অগ্রযাত্রা একশ্রেণির মানুষ সহ্য করতে পারছে না। সেজন্য তারা বিভিন্ন ভাবে নারীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ এই নারী ফুটবলারদের মারধরের ঘটনা।

১৯৯১ সাল থেকে এপর্যন্ত জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী দুইজনই নারী৷ বর্তমানে জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, সংসদ উপনেতা নারী, শিক্ষামন্ত্রী নারী। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব সারাবিশ্বে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়।

কিন্তু এতোকিছুর পরও নারীদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে দমিয়ে রেখে কখনোই দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অবদান রাখতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

নারীরা আটকায় না- আটকে দেয়া হয় মুক্তমত সুকান্ত দাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর