Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ম্যালেরিয়ার ‘রেড জোন’ পাহাড়েও ডেঙ্গুর হুমকি!

প্রান্ত রনি
২০ আগস্ট ২০২৩ ১৭:১৯

আজ বিশ্ব মশা দিবস। সারাবিশ্বে আজকের দিনটি প্রতি বছরই ঘুরে ফিরে আসে বিশ্ব মশা দিবস হিসেবে। বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগে মৃত্যুর কারণ পূর্বের দিনেও ছিল, তবে বর্তমানে এই মশাই উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। আগেকার সময়ে দেশের পশ্চাৎপদ অঞ্চল তথা দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ার ‘রেড জোন’ কিংবা ‘হট স্পট’ পরিচিত থাকলেও এখন সারা দেশজুড়েই চলছে মশার তাণ্ডব। বিগত বছরগুলোতে দেশে এক আতঙ্ক তৈরি করেছে মশা। তাই বিশ্ব মশা দিবস হোক আমাদের সচেতনতার মুখ্য বার্তা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরেই মশার বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে গ্রাম থেকে শহরে- সর্বত্রই। মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি বেড়েছে চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়ে চলেছে। চলতি বছরে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার রেকর্ড ছুঁয়েছে। যেখানে ১০ শতাংশের ওপর এডিস মশার লার্ভা পেলে বিপজ্জনক বলা হয়ে থাকে সেখানে বিভিন্ন গ্রাম শহরের বাসা বাড়িতেই লার্ভা মিলছে ২০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত।

বিগত বছরগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটির জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ও বড়থলি ইউনিয়ন, জুরাছড়ির মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়ন, বরকলের বড় হরিণা এবং বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। অথচ দেশ বিদেশের মানুষের কাছে বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের সাজেক উপত্যকা অনেক জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়ে থাকলেও সাজেকের পশ্চাৎপদ এলাকার মানুষ মরছে মশাবাহিত ও পানিবাহিত রোগে। এ যেন বাতির নিচে অন্ধকারের মতো ঘটনার বাস্তবচিত্র।

চলতি বছরেও পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতেও আজকের মশা দিবস পর্যন্ত ১২০ জনের অধিক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছি। শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য শহরে-নগর থেকে ঘুরে আসার ইতিহাস থাকলেও বর্তমানে রাঙ্গামাটিতেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। দশ উপজেলা নিয়ে গঠিত দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটির আট উপজেলাতেই এখন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বাদ পড়েছে কেবল মাত্র জুরাছড়ি আর বরকল উপজেলা। ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গুর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দুইটি পাহাড়ি জেলা বান্দরবান-খাগড়াছড়িতেও।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি রাঙ্গামাটি শহরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ও বিস্তার যাচাইয়ে জেলা শহরের ৯টি ওয়ার্ডেই জরিপ কাজ করেছিল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। সেই জরিপে তথ্যে দেখা গেছে শহরের ২২ শতাংশ বাড়িতেই ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ঘটেছে মশক নিধন কার্যক্রমে জড়িত পৌরসভাতেই মিলেছিল মশার লার্ভা!

পাহাড়ে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের ম্যালেরিয়া কর্মসূচির আওতায় রাঙ্গামাটি জেলায় প্রতি বছরই মশারি বিতরণ করে আসছে উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটি। শহর অঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামেও অব্যাহত রেখেছে মশারি বিতরণ কার্যক্রম। তবে প্রতিটি ঘরে ঘরে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে মশারি বিতরণের কথা থাকলেও অনেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন মশারি প্রাপ্তি থেকে। আবার কেউ কেউ চাহিদার চেয়ে বেশিও মশারি নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে প্রান্তিক বা দুর্গম গ্রামগুলোতে মশার আধিপত্য বেশি হলেও যাতায়াতের দুর্গমতার কারণে এসব অঞ্চলের অনেক মানুষই সরকারি-বেসরকারি এসব সহায়তা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ছেন। যাতায়াতের কষ্টের কারণে যেতে যান স্বাস্থ্যকর্মীরাও। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগসমূহ শহর ও উপজেলা সদরকেন্দ্রিক থেকে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়া জরুরি। নয়তো কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে না।

কীটতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসকদের অভিমতে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজন জনসচেতনতা। বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলে বাড়ির পাশে ঝোপঝাড়ে মশার বসতি বা আবাসস্থল দেখা যায়। তাই মশার আবাসস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি এডিস মশার লার্ভা যেন জন্মাতে না পারে সেজন্য বাড়ি ও ঘরের চারপাশে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাড়ি ও ঘরের রাখা ফুলের টব, টায়ার, বালতিসহ অব্যবহৃত পাত্রে কোনো প্রকারের পানি জমিয়ে রাখা যাবে না।
সাধারণ মানুষেরা বলছেন মশা নিধনে স্থানীয় পৌরসভা কাজ করলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়। নামমাত্র ফগিং আর স্প্রে ছিটানো কার্যক্রম না করে টেকসই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।

সর্বোপরি সমাজে বসবাসকারী একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই প্রথমে করণীয় হচ্ছে নিজেকে সচেতন রাখা ও সমাজকে সচেতন করা। অন্যের সহযোগিতার আশ্বাসে পড়ে না থেকে নিজেরা সচেতন হলে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম্য ও শহরের মানুষেরা মশারি ব্যতিত না ঘুমানো, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও পরিত্যক্ত পাত্রে পানি রাখার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। নিজের পাশাপাশি প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজনদেরও সচেতন করতে হবে। নয়তো নিজে রক্ষা পেলেও মশাবাহিত রোগ থেকে আত্মীয় স্বজনদের রক্ষা করা যাবে না। মানুষের সচেতনতাই পারবে মশার হুমকি প্রতিরোধ করতে। বিগত দিনে দেশে মশাবাহিত রোগ যে হুমকির কারণ হিসেবে দাঁড়য়েছে সেটি প্রতিরোধের প্রধান উপায় জনসচেতনতা।

লেখক: সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী

সারাবাংলা/এএসজি

প্রান্ত রনি মুক্তমত ম্যালেরিয়ার ‘রেড জোন’ পাহাড়েও ডেঙ্গুর হুমকি!

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর