এ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের মহানায়ক
২১ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৫০
আগস্ট মানে বাঙালির শোকের মাস, বেদনার মাস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে আগস্ট কতটা শোকাবহ সেটা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। বীর বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এ মাসেই। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা দেশে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।
আগস্ট মাস এলেই তাই মনে পড়ে যায় সেই ভয়াবহ স্মৃতি, যা আমাদের হৃদয়ে পিতা হারানোর যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। যে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বন্দি রেখেও স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ইতিহাসের বাঁক-ঘোরানো এক সিংহপুরুষ। বাঙালি জাতির চরিত্র সম্পর্কে তার চেয়ে বোধকরি আর কেউ জানতেন না। তবুও তিনি জীবনের বিনিময়ে সেই জাতির জন্যই রচনা করেন ইতিহাসের এক অমোঘ অধ্যায়। পৃথিবীতে কোনো জাতিই মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর এক তেজোদীপ্ত ভাষণেই উদ্বুদ্ধ গোটা জাতি বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বভাবনেতা। বাল্যকাল থেকে কিশোর সবখানেই ছিলেন তিনি এক কালজয়ী মহাপুরুষ। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অবিভাজ্য সত্তা।
বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতার গল্প শুনেছি, তবে বঙ্গবন্ধুর গল্প সবচাইতে আলাদা। তিনি নিজের সাথে নিজের পরিবারের জীবনও দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। এমন নেতা পৃথিবীর বুকে বিরল। আমরা সেই নেতার দেশে জন্ম নিয়েছি। এরচাইতে আনন্দ আর কি হতে পারে।
এ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জানে এবং তার স্মরণ করে। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চর্চা আমাদের খুব কমই হয়। তার জন্য প্রয়োজন আলোচনা, প্রতিযোগিতা, সভা, সেমিনার। কিন্তু এসবকিছুই যেন বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবস এবং মৃত্যু দিবস ছাড়া হয় না। আমরা অনেকেই বলি, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহ থাকতে হবে। কিন্তু আগ্রহ তৈরী করার কথা কেউ বলি না। বর্তমান প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অধিকভাবে জানার জন্য আগ্রহ তৈরী করতে হবে। দেশপ্রেম এবং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করতে হলে অবশ্যই বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। মনে রাখবেন, বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নয়, কোনো নির্দিষ্ট মতাদর্শের নেতা নন। বঙ্গবন্ধু এই বাংলার মানুষের। বঙ্গবন্ধু গণমানুষের নেতা। তিনি কারও একার নয়। দল-মত নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধুকে আমাদের ভালোবাসতে হবে, স্মরণ করতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু চেয়েছেন বাংলার মানুষ একথাবদ্ধভাবে থাকবে। সুন্দরভাবে হাসি-খুশিতে জীবন যাপন করবে। বর্তমান প্রজন্ম চেষ্টা করবে জাতির জনকের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে। বঙ্গবন্ধু নিজেও বিশ্বাস করতেন তরুণরাই দেশের মূল চালক। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে এক হতে হবে। এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা সার্থক হবে। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে নিয়ে সবসময় ভাবতেন। তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে পারাকে গর্বের বলে মনে করতেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসলেও এই মানুষটিকে আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে এটাই আমার বিশ্বাস।
পরিশেষে বলতে চাই, এই শোকের মাসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান রেখে সকলেই প্রতিজ্ঞা করি একটি সুন্দর দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে সকলে একসাথে কাজ করবো। শোকের মাসে একটাই শপথ শোককে শক্তিতে পরিণত করার অভয়মন্ত্রে আবার উদ্দীপিত হবে বাঙালি। এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
আজহার মাহমুদ এ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের মহানায়ক মুক্তমত