Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতের জন্য আওয়ামীলীগের ধারাবাহিকতা কেন অপরিহার্য

সামারা আশরাত
২১ আগস্ট ২০২৩ ১৬:২৬

ওয়াশিংটনকে জানানো হয়েছে যে ভারত, একটি বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান অংশগ্রহণে অসন্তুষ্ট। কারণ নয়াদিল্লি বিশ্বাস করে বাংলাদেশে দুর্বল হাসিনা প্রশাসন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খারাপ হবে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, নয়াদিল্লি বিভিন্ন স্তরের আলোচনায় বাইডেন প্রশাসনকে এ বিষয়ে অবহিত করেছে। এই উদাহরণে, নয়াদিল্লি বলেছে যে তারা ঢাকায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ওয়াশিংটনের আকাঙ্ক্ষাকে ভাগ করে নেয়। যাইহোক, হাসিনা প্রশাসনকে পতনের জন্য আমেরিকা যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে তা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়।

কূটনৈতিক মহল দাবি করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের সাথে তার সংখ্যালঘু, নারী বা শিশুদের বিবেচনায় না নিয়ে বন্ধ দরজার পিছনে একটি চুক্তি করেছে এবং আফগানিস্তানকে এখন তারই মূল্য দিতে হচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামো সম্পূর্ণভাবে উল্টে গেছে। আফগানিস্তানে এই মুহুর্তে, তালেবান তাদের শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য ভিসা নীতির প্রস্তাব করেছে, যা বাংলাদেশের ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নয়াদিল্লি মোটেই উপযুক্ত বলে মনে করে না। কূটনৈতিক পক্ষ দাবি করে যে তার নিজের দেশের নিয়ম প্রয়োগ করে এবং বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য ভিসা নীতি প্রতিষ্ঠা করে, আমেরিকান সরকার সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। উপরন্তু, সাউথ ব্লক বিশ্বাস করে যে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পন্থা অব্যাহত রাখে এবং জামায়াতে ইসলামীকে “রাজনৈতিক ছাড়” দেয়, তাহলে শীঘ্রই মৌলবাদ ঢাকা দখল করবে। এখনকার মতো উদার পরিবেশ থাকবে না। বাংলাদেশ তাই আফগানিস্তানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে, যা বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারতের জন্য সুখকর হবে না।

ভারত ও বাংলাদেশ দুই পাশের দেশ। ভারতের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত রয়েছে। নয়াদিল্লি বাইডেন প্রশাসনকে বলেছে, জামাত উন্মোচিত হলে যেমন ভারতের আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বাড়তে পারে, তেমনি বাংলাদেশে চীনের প্রভাবও অনেক বেড়ে যাবে, যা ভারত বা ওয়াশিংটন কেউই চায় না। মনে করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই জামায়াতকে রাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জামায়াতকে সুযোগ দেওয়া হলে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের আড্ডায় পরিণত হবে, যার ফলে ভারতের সীমান্তে হত্যা ও চোরাচালান বেড়ে যাবে, যা কিনা ভারতের জন্য বিশাল মাথাব্যথায় পরিণত হবে।

ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকা বর্তমানে বিভিন্ন জাতিগত সংঘাত এবং ভৌগলিক কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে এই অঞ্চলের দীর্ঘ সীমানা এবং ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা সবসময়ই ভারতের এই অঞ্চলটির নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিশ্চিত করেছে। এর প্রমাণ আওয়ামীলীগ সরকারের কঠোরহস্তে উত্ত-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশী ভূখন্ড ব্যবহার হতে দমনের উদাহরণেই বোঝা যায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা, সীমান্ত সমস্যার সমাধান, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, বাংলাদেশকে ভারতের এক বিলিয়ন ডলার ঋণ, যৌথ সহায়তায় ভুটান-নেপাল ট্রানজিট সুবিধা, ছিটমহল বিনিময়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেড় লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দেওয়া ইত্যাদি ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ফলে দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের সমঝোতার মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমাধান হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে ভারত এবং বাংলাদেশের কিছু বিষয় যা এখনও অমীমাংসিত, যেমন বহুল আলোচিত তিস্তা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার অব্যাহত থাকলে চুক্তির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া দুই দেশের আন্তরিকতায় নতুন ও ইতিবাচক পথ খোলা হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমর্থনে শেখ হাসিনা পুনরায় নির্বাচিত হলে সকল দুশ্চিন্তার অবসান ঘটবে এবং সুন্দর সমাধানের মাধ্যমে বন্ধুত্ব অটুট হবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া সীমান্ত সুরক্ষা, ব্লু-ইকোনমি, মহাকাশ গবেষণা, সাইবার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার পরিধি সম্প্রসারণের মাধ্যমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও মজবুত ও মজবুত হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বন্ধুপ্রতিম দেশ।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বহাল থাকাকে ভারত তার নিজস্ব স্বার্থে অপরিহার্য মনে করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপের ফলে সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারবে এবং পেছনের দরজা দিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে, যা ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই ভালো হবে না। এমতাবস্থায় ভারত সরকার নিজেদের স্বার্থে তার বন্ধুপ্রতীম বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অপরিহার্য বলে মনে করে। এছাড়া বাংলাদেশের জনগণও গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতাকারী বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা এবং পাকিস্তানপন্থীদের ক্ষমতায় আসতে দিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় আফগানিস্তানে পরিণত করা একেবারেই সমীচিন হবেনা।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

ভারতের জন্য আওয়ামীলীগ সরকারের ধারাবাহিকতার অপরিহার্যতা মুক্তমত সামারা আশরাত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর