যুগে যুগে দাসত্বের শেকল
২৩ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৫৪
মানব ইতিহাসের এক ভয়ংকর কুপ্রথার নাম দাসপ্রথা। প্রাচীনকালে তারা বাঁধা ছিল শিকলে। এ যুগে বাঁধা শর্তে স্বাক্ষরিত এক টুকরো কাগজে। তখন হয়ত তাদের প্রয়োজন ছিল দুবেলা দুমুঠো খাবার আর পরনের কাপড়ের। হয়ত এর বেশি প্রয়োজন তাদের ছিল না, কারণ তখন গাড়ি বা বাড়ির তেমন প্রচলন ছিল না। এ যুগের দাসদের প্রয়োজনও ব্যতিক্রম কিছু নয়। ভাত-কাপড় থেকে শুরু করে যুগোপোযোগী পণ্যসামগ্রীর প্রয়োজন এ যুগের দাসদের বন্দি করে রেখেছে বিনা সুতার শিকলে। শিকলে বন্দি দাসরা নানান সংগ্রাম আর সাধনায় এই দিনে দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও এ যুগের দাসরা কি আদৌ বেরিয়ে আসতে পারবে এ বন্দীদশা থেকে।
আজ ২৩ আগস্ট। আন্তর্জাতিক দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস। এক কথায় যাকে দাসপ্রথা বিলোপ দিবস বলা হয়। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর এইদিনেই আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালিত হয়। ১৭৯১ সালের ২২ ও ২৩ আগস্ট বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিক অঞ্চলে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেন ১৮০৭ সালে ও যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৮ সালে তাদের আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে ১৮৩৩, ১৮৪৮ ও ১৮৬৫ সালে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে।
যদি আমরা পিছনে ফিরে দেখি, যে সময়টায় দাসপ্রথার প্রচলন ছিল সেই সময়টাকে মানবজাতির জন্য অন্ধকার সময়ের সাথে আখ্যায়িত করা হয়েছে যুগে যুগে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক সভ্যতায় দাসপ্রথা শব্দটিকে আজ অভিশাপ হিসেবেই মানুষ জানে। যে সময়টাকে মানুষ একটি অস্বাভাবিক সময়ের সাথে তুলনা করে আসছে। কারণ তখনকার সময়ে একশ্রেণির মানুষকে গলায়, হাতে বা পায়ে বেঁধে বাজারে বিক্রি করা হতো। যিনি তাদের কিনে নিয়ে যেতেন তিনি ছিলেন মনিব। মনিবের সামনে দাসরা কখনও মাথা উঠিয়ে কথা বলতে পারতো না। মনিব যা নির্দেশ করতেন তারা সারাদিন সেই কাজ করে যেতো। বিনিময়ে তাদের দেওয়া হতো ভাত ও কাপড়।
দাসপ্রথার নিয়ে পাওয়া নথিপত্রে প্রমাণ মেলে যে, বনেদি সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো ও গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে এ প্রথা সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিল। বাজারে মুক্ত শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর থাকায় সমাজের শক্তিশালী শ্রেণি তাদের উৎপাদন ও প্রাধান্য অব্যাহত রাখতে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির লোককে দাসে রূপান্তর করত। অভিজাত শাসকশ্রেণি, তাদের পারিবারিক ও অন্যান্য সামাজিক-রাজনৈতিক পদমর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার তাগিদে, বড় কর্মীবাহিনীর প্রয়োজন অনুভব করে।
বাংলার সুলতানগণ আফ্রিকা, তুরস্ক, পারস্য ও চীনদেশ হতে দাস-দাসী আমদানি করতেন বলে জানা যায়। এ ধরনের কিছু ক্রীতদাসকে মুক্তি দেওয়ার পর মন্ত্রী, প্রশাসক, এমন কি সেনাপতির পদেও উন্নীত করা হয়েছিল। পনেরো শতকের শেষদিকে আবিসিনীয় বংশোদ্ভূত দাসগণ স্বল্পকালের জন্য বাংলায় তাদের নিজস্ব শাসন ব্যবস্থাও কায়েম করেছিল। বাংলার বাজারে ১৮৩০ সাল পর্যন্তও হাবশি ও কাফ্রি নামে পরিচিত আফ্রিকান ক্রীতদাস-দাসী আমদানি করা হতো। বাংলায় সাধারণত ধনী সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণ, এবং মুসলিম ও ইউরোপীয় বণিকগণ কঠোর পরিশ্রমী ও কর্তব্যনিষ্ঠ বলে খ্যাত হাবশিদেরকে দাস হিসেবে রাখত।
ইউরোপিয় ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য পরিবহন ও কারখানা পাহারার জন্য নিয়মিত শ্রমিকের বিকল্প হিসেবে ক্রীতদাসদের নিয়োগ করত। ইউরোপিয় অধিবাসীদের মধ্যে ক্রীতদাস রাখার এমনই রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল যে, স্যার উইলিয়ম জোনস এর ন্যায় একজন মানবতাবাদী, আইনজ্ঞ ও পন্ডিত ব্যক্তিরও চারজন ক্রীতদাস ছিল। ক্রীতদাসদের মধ্যে সবচেয়ে দামি হাবশী দাসগণ খানসামা, পাচক (বাবুর্চি), গায়ক, নাপিত, গৃহপ্রহরী ইত্যাদি হিসেবে তাদের প্রভুদের সেবায় নিয়োজিত হতো। দাসদের মধ্যে তাদের মর্যাদা এত উচুঁ ছিল যে, তাদের মালিকগণ তাদের ব্যবসা সংক্রান্ত ও গৃহ পরিচালনা বিষয়ে এবং রাজনৈতিক ব্যাপারেও তাদের সাথে পরামর্শ করতেন। অভিজাত সম্প্রদায়ের হারেমে নিয়োজিত খোজাদের মধ্যে হাবশি দাসদের সংখ্যাই সর্বাধিক ছিল।
আঠারো ও ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলার বাজারের জন্য কেবল আফ্রিকাই নয় বরং আরব, চিন, মালয়, আরাকান ও আসাম হতেও ক্রীতদাস আমদানি করা হতো। আরব দেশ থেকে আনা দাসদের অধিকাংশই হতো খোজা। বাংলার বাজার হতে ক্রীতদাস রপ্তানিও হতো। ইউরোপীয় বৈদেশিক উপনিবেশগুলোর জন্য বাগান শ্রমিক হিসেবে বঙ্গীয় বংশোদ্ভূত দাসদের চাহিদা ছিল। দাস মুখ্যত দু’ধরনের ছিল, গার্হস্থ্য ও কৃষিকার্যাধীন। একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে গুটি কয়েক দাস থাকবে সেটাই ছিল সামাজিক প্রত্যাশা। তারা পদ ও মর্যাদার প্রতীক ছিল এবং তা কেবল সম্ভ্রান্ত জমিদারের ক্ষেত্রেই নয়, মধ্যবিত্ত ও ধনী কৃষকদের বেলায়ও ছিল। হিন্দু মালিকগণ দাস গ্রহণের সময় তাদের গোত্রের বাছবিচার করতেন। ওই বিবেচনায় কায়স্থ, গোয়ালা, চাষা, বৈদ্য প্রভৃতি গোত্রের দাসদের শুদ্ধ (পবিত্র) এবং শূদ্র, তাতি, তেলি, ডোম, বাগদি, কৈবর্ত, জোলা, চন্ডাল প্রভৃতিদের অশুদ্ধ (অপবিত্র) বলে মনে করা হতো। কোনো ব্রাহ্মণকে দাসে পরিণত করা ধর্মে নিষিদ্ধ ছিল।
অতীতকাল থেকে উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত বাংলায় কৃষি কর্মোপযোগী দাস বা দাসখত লেখা শ্রমিক ব্যবহারের ব্যাপক রেওয়াজ ছিল। কেউ সম্পদবিহীন হয়ে স্বাধীন জীবনধারণে অক্ষম হলে, ইচ্ছুক সম্পদশালী কোনো পরিবারের নিকট নিজেকে বিক্রি করত। এসব পরিবার এ ধরনের অভাগাদের কিনে তাদের ক্ষেতের কাজে লাগাত। তারা সব ধরনের কৃষিকাজ করত যথা- মাটি খনন, পানি সেচ, গোচারণ, মাছ ধরা, নির্মাণকাজ ইত্যাদি। শ্রমের বিনিময়ে তারা তাদের প্রভুদের কাছ থেকে খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ বয়সে ভরণপোষণও পেতো। অনেক ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি মহাজনদের কাছে তাদেরকে বিক্রি করে দিয়ে তাদের দেনার দায় পরিশোধ করতো। দেনার কারণে দাসত্ব, আজীবন অথবা জীবনের খানিক অংশের জন্য হতে পারত।
আইন কমিশনের (১৮৩৯) প্রতিবেদনে দেখা যায়- অভাব, দুর্ভিক্ষ, নদী ভাঙন, পরিবারের উপার্জনকারী সদস্যের মৃত্যু প্রভৃতি দুর্যোগ কবলিত ব্যক্তিদের বেঁচে থাকার তাগিদে স্বেচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণ করতে হতো। তাদের বেলায় বংশপরম্পরায় গার্হস্থ্য শ্রমিক হিসেবে থেকে যাওয়াই অবধারিত ছিল। তাদের বয়স, শারীরিক গঠন, লিঙ্গ, গোত্র, জাতি, এবং সর্বোপরি দেশের চলতি অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় তাদের মূল্য নির্ধারিত হতো। উনিশ শতকের প্রথম দিকে শিশু ও বৃদ্ধদের বাজার দর ছিল পাঁচ থেকে সাত টাকা। স্বাস্থ্যবান তরুণ দাসদের মূল্য হতো কুড়ি থেকে পঞ্চাশ টাকা। অভাব ও দুর্ভিক্ষ হলে বাজার দাসে ছেয়ে যেতো এবং তখন দাম পড়ে যেতো। আঠারো শতকের শেষের দিকে ইউরোপে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটে। দাস প্রথাধীন শ্রমিক ব্যবস্থা শিল্পায়ন ও শিল্প-বিপ্লবোদ্ভূত মানবিক নব-মূল্যবোধের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ প্রতীয়মান হয়।
১৮৩৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট দ্বারা যথাসম্ভব দ্রুত সব ধরনের দাসপ্রথা অবলুপ্ত করার সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে কলকাতার সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে দাস প্রথার অবলুপ্তির জন্য ১৮৪৩ এর ‘অ্যাক্ট ফাইভ’ প্রণীত হয়। এ আইনের আওতায় দাস রাখা অপরাধমূলক ছিল না, এতে কেবল মুক্ত ব্যক্তি ও দাসের মধ্যে আইনগত পার্থক্যের অবসান ঘটানো হয়েছিল। আইনে বিধান রাখা হলো যে, কোনো আদালত কোনো দাসের ওপর কারও দাবি গ্রাহ্য করবে না। এ আইন সব দাসদের মুক্ত বলে ঘোষণা করেনি। বরং আইনে বলা হলো যে, কোনো দাস ইচ্ছে করলে তার মালিককে পরিত্যাগ করে স্বাধীনভাবে বাস করতে পারবে।
দাসত্বের ইতিহাস অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্কৃতি, জাতি এবং ধর্মজুড়ে বিস্তৃত। অবশ্য দাসদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বৈধ অবস্থান বিভিন্ন সমাজে এবং বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ছিল। আদিম সমাজে দাসপ্রথার প্রচলন বিরল ছিল কারণ এই প্রথা সামাজিক শ্রেণিবিভাগের কারণে তৈরি হয়। দাসপ্রথার অস্তিত্ব মেসোপটেমিয়াতে প্রায় ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বে প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। অন্ধকার যুগ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত ইউরোপে অধিকাংশ এলাকাতেই দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। এখনও আছে। এখন শুধু সিস্টেম এর একটা পরিবর্তন হয়েছে। যার আধুনিক নাম হয়েছে চাকরি। তবে সিস্টেম বা নাম যাই হোক, সরকারি বা বেসরকারি সব চাকরি ক্ষেত্রেই রয়েছে কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্রীয় নীতিমালা। এই নীতিমালার আলোকে মানুষকে কাজ করতে নির্দিষ্ট সময় অব্দি। তার বাইরেও রয়েছে শ্রমিক বেচা-কেনা। এখনও দেশে অসংখ্য বাজারে অবাধে বেচা-কেনা হয় শ্রমিক। তিন থেকে চার টাকা রোজে প্রতিদিন শ্রমিক কেনা যায় বিভিন্ন হাটে। এসব শ্রমিক দিয়ে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে নানান কাজ করানো হয়ে থাকে। একইভাবে বিক্রি করা হয়ে থাকে মেয়েদেরও। অসংখ্য হোটেল বা পতিতালয়ে প্রতিদিনই বিক্রি করা হয় অসংখ্য নারী। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বিক্রি করা হয় অসহায় এসব নারীদের। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরির নামে দিন-রাত কাজ করানো হয় শ্রমিকদের। বিভিন্ন ফ্যাক্টরি, কলকারখানা ও পরিবহনে টাকার বিনিময়ে কাজ করানো হয় অসংখ্য শিশুদের।
তবে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে পার্থক্য শুধু এইটুকুই দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে শ্রমিকনির্ভর একটি আইন করা হয় ১৮৩৩ সালে। ইংল্যান্ড এই আইনটি পাস করেছিল। যেখানে বলা ছিল, ৯ বছরের কম বয়সী কোনো শিশু কাজ করতে পারবে না, শিশুদের বয়স ৯-১৩ এর মধ্যে হলে দৈনিক মাত্র ৮ ঘণ্টা এবং বয়স ১৪-১৮ এর মধ্যে হলে দৈনিক মাত্র ১২ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। আধুনিক মানবাধিকার আইনের অপেক্ষাকৃত একটি নতুন সংযোজন হচ্ছে শ্রম অধিকার। এই আইনে শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক উল্লেখ করা রয়েছে। কিন্তু শিশু শ্রমিকদের কাজ কি আদৌ বন্ধ হয়েছে?
উল্লেখ্য, দাসপ্রথা বিলুপ্তির পরও শ্রমিকদের অমানবিক পরিশ্রম করতে হত। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আর সপ্তাহে ৬ দিন। বিপরীতে মজুরি মিলত নগণ্য, শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করত, ক্ষেত্রবিশেষে তা-ও দাসবৃত্তির পর্যায়ে পড়ত। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন এবং তাদের এ দাবি কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেয় ১৮৮৬ সালের পহেলা মে। কিন্তু কারখানা মালিকগণ এ দাবি মেনে নিল না। ৪ঠা মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। তারা ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি করেছিলেন। আগস্ট স্পিজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, এতে এক পুলিশ নিহত হন। পুলিশবাহিনী তৎক্ষণাৎ শ্রমিকদের ওপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা রায়টের রূপ নেয়। রায়টে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পিজসহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লুইস লিং নামে একজন একদিন পূর্বেই কারাভ্যন্তরে আত্মহত্যা করেন, অন্য একজনের পনের বছরের কারাদন্ড হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহনের পূর্বে আগস্ট স্পিজ বলেছিলেন, ‘আজ আমাদের এই নিঃশব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে’। ২৬শে জুন, ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্নর অভিযুক্ত আটজনকেই নিরপরাধ বলে ঘোষণা দেন এবং রায়টের হুকুম প্রদানকারী পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। আর অজ্ঞাত সেই বোমা বিস্ফোরণকারীর পরিচয় কখনওই প্রকাশ পায়নি।
শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি অফিসিয়াল স্বীকৃতি পায়। কিন্তু এই আটঘণ্টা কর্মের মধ্যে কিছু কিছু অফিসে কর্মের বর্তমান পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। অনেক অফিসে এখনও নারী কর্মীদের নিরাপত্তায় রয়েছে যথেষ্ট অভাব। নিয়োগপত্রে কমঘণ্টা ৮ লেখা থাকলেও বাস্তবে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় কাজ করতে হয়। প্রেক্ষিতে কর্মের নিরাপত্তা, সঠিক সময়ে বেতন-ভাতা প্রদানসহ নানান দাবিতে এখনও মুখরিত হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন দেশের রাজপথ। বিশেষ করে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে মালিকদের বাড়ি-গাড়ি বিলাসী জীবনযাপন সবই হয় কিন্তু শ্রমিকদের দু’বেলা খাবার নিশ্চয়তা পর্যন্ত হয় না। মালিক আর শ্রমিকের মধ্যে এই বৈষম্য কমিয়ে এনে একটি মানবিক কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করাই এখন সময়ের দাবি।
লেখক: সাংবাদিক
সারাবাংলা/এসবিডিই