Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রিকসে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক ব্যর্থতা বনাম জিয়ার পররাষ্ট্রনীতি

শায়রুল কবির খান
২৮ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৫৩

গত জুন মাসে জেনেভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিকসের সভাপতি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, বাংলাদেশের ব্রিকসে যোগদানের বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। এরপর জুনের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে সরকার।

চলতি মাসের ২৪ তারিখ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনেই ছয়টি দেশকে নতুন করে ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেগুলো হল- আর্জেন্টিনা, মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রদুত হুমায়ুন কবির জাতীয় ঐক্যমত্য’ থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ‘যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে প্রধান রাজনৈতিক খেলোয়াড়রা। এটা হলেই কেবল কূটনীতিকরা কাজ করতে পারবে। যদি কোনো জাতীয় শক্তি বা জাতীয় সক্ষমতা না থাকে, তাহলে আমরা বাইরে কী বলব এবং কী নিয়ে যাব? সুতরাং যদি না আমাদের প্রধান অংশীজনদের মধ্যে মতৈক্য ও বোঝাপড়া হয়, তাহলে কেবল কূটনীতিকদের ওপর বেশি নির্ভর করে কার্যসিদ্ধি হবে না। যে, এটাই হচ্ছে আমাদের স্বার্থ, এর বিপরীতে আমরা ভূ-রাজনৈতিক খেলায় পড়ব না।’

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পররাষ্ট্র নীতিকে বাংলাদেশকে ভৌগোলিক দিক দিয়ে বিচার করতেন। উদাহরণ দিয়ে বলতেন মিশর, মরক্কো, স্পেনের ভৌগোলিক অবস্থানের একটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ উপমহাদেশে সামরিক রাজনৈতিক কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থান করছে। এর উত্তরে হিমালয় পর্বতশ্রেণী আর দক্ষিণে সুগভীর বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যোগসূত্র স্থাপন করে রেখেছে বাংলাদেশকে তার আপন ভূ-খণ্ডের বৈচিত্র্য দিয়ে। তাই বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটিতে অতীতে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। ইংরেজ জাতি বাংলাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল এই ভেবে এখান থেকে আন্তর্জাতিকভাবে চলাচলের সুবিধাজনক অবস্থান পূর্বে ও পশ্চিমের যাতায়াত।

বিজ্ঞাপন

ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সমস্যা অনেকটা পাইলট মাছের সমস্যার মতো, হাঙরের কাছাকাছি থেকেও কীভাবে তার মুখে না পড়ার কৌশল নিতে হয়। ভারতের মতো বিরাট শক্তিধরের কাছাকাছি থেকে পাইলট মাছের মতো ক্ষুদ্রাকৃতি অথচ নিরীহ বাংলাদেশ কীভাবে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে—বাংলাদেশের নিরাপত্তা সমস্যার প্রকৃতি এটিই বাংলাদেশি প্রতীক বলা যায়। এ দুইয়ের সাম্যাবস্থাই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীত তৈরি করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সেই পথ ধরেই ১৯৮৫ সালে ৭-৮ ডিসেম্বর ঢাকায় রচিত হয় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতার সার্ক সৌধটি।

ওই সময় থেকেই ৫৭টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গড়া ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) তথা মুসলিম বিশ্ব বাংলাদেশের অকৃত্রিম মিত্রে পরিণত হয় জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপের জন্য মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাসম্পন্ন “আল-কুদস” কমিটির সদস্য হয় বাংলাদেশ।

ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহতায় পানির সংকট নিয়ে প্রথমে ১৯৭৬ সালে মে মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ৪২ জাতি ইসলামী শীর্ষ পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলনে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একই বছরে আগস্টে কলম্বোতে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে উত্থাপন করে ন্যাম সদস্যদের সহানুভূতি পান এরপর ৩১ তম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেও উত্থাপন করেন। ৭৭ সালে নিরাপত্তা বিধান রেখে ভারত ৫ বছর মেয়াদি চুক্তিতে সম্মতি দিয়ে চুক্তি করে।

তার সময়ে ৮০ সালে ভোটের মাধ্যমে শক্তিধর শিল্পোন্নত দেশ জাপান-কে পরাজিত করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষক দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল “সার্ক” শীর্ষ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ”-এর ভিত্তিতে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত জাতিস্বত্বার পরিচয় দানকারী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর অসাধারণ সাফল্যের সামনে এই ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের জন্য গর্ব করার মতো কী অর্জন করেছে?

তারা যে কাজটি খুব সহজে সচেতনভাবে করতে পেরেছে তা হলো বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ লাগামহীন বেলেল্লাপনার মাধ্যমে লুটপাট করতে। প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধ মামলা ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার জোবাইদা রহমানসহ অসংখ্য মামলার ফরমায়েশি রায় করানো। সাথে যুক্ত আছে হামলা, গুলি ও জুলুম নির্যাতন। এর জন্য কি দেশের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে না?

লেখক: সদস্য বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রেস উইং ও বিএনপি মিডিয়া সেল

সারাবাংলা/এসবিডিই

ব্রিকসে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক ব্যর্থতা বনাম জিয়ার পররাষ্ট্রনীতি মুক্তমত শায়রুল কবির খান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর