মুরাদপুরে অক্সিজেনমুখী প্রবেশমুখ খুলবে কবে
২৯ আগস্ট ২০২৩ ১৬:৫৮
চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যস্ততম কয়েকটি মোড়ের মধ্যে একটি মুরাদপুর। মুরাদপুর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। এই পথ ব্যবহার করে পথচারীরা গন্তব্যস্হলে যাই। বর্তমানে মানুষের কষ্টের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে মুরাদপুর মোড়ের অক্সিজেন মুখী প্রবেশমুখ। জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে কালভার্ট নির্মাণে ২ মাসের কথা বলে দীর্ঘ ৮ মাস বন্ধ এই রাস্তা। যানবাহন চলাচলের জন্য কোন জায়গা রাখা হয়নি। যার কারণে মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমনকি পথচারিরা চলাচল করার সময়ও কষ্টের সীমা থাকে না। একটু বৃষ্টি হলে তো আর কথায় নেই। মানুষ হিমশিম খেয়ে যাই কিভাবে হেঁটে যাবে কাদার মধ্যে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, চাকরিজীবীরা চলাপেরার সময় চরম দুর্ভোগে পড়েন। কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে বেহালদশা করে রেখেছে জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নির্মাণকারিরা৷ এত বেশি কাদা যে মানুষ হাটতে অনেক হিমশিম খাই।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে সড়কটির মুরাদপুরের বিবিরহাট অক্সিজেনগামী প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম শহরের ‘জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় মুরাদপুর মোড়ে অবস্হিত কালভার্ট টি ভেঙ্গে নতুন করে কালভার্ট নির্মাণ করার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় মোড়টি। মোড় বন্ধ করে দিয়ে দুইমাসের মধ্যে খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ৮ মাসেও কাজ শেষ করতে পারেনি। ধীরগতিতে কাজ করার কারণে মানুষের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এদিকে সড়কটি বন্ধ করার সময় মুরাদপুর এলাকায় একটি ব্যানার টাঙিয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। তাদের পক্ষ থেকে ব্যানারে বিকল্প পথ ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। বিকল্প পথ বলতে মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কের জন্য দুটি সড়ক রয়েছে। একটি হলো শিক্ষা বোর্ডের পাশ দিয়ে পিলখানা সড়ক এবং আরেকটি হলো মুহাম্মদপুর সড়ক। এরমধ্যে পিলখাটা সড়কটির মধ্যে কালভার্ট নির্মাণ করার কারণে সেই সড়কটিও বন্ধ হয়ে যাই। যার কারণে সব গাড়ির চাপ এসে পড়েছে মুহাম্মদপুর সড়কটির উপর। আরাকান সড়ক থেকে মাজার গেইট দিয়ে মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কের রেল বিট দিয়ে উঠছে গাড়ি। সব গাড়ি সেদিকে যাতায়াতের কারণে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে ইতিমধ্যে সড়কটির অবস্হাও বেহাল হয়েছে। রাস্তার মধ্যে অনেক বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। গর্তগুলোর মধ্যে পানি জমে আছে। গর্তগুলোও দিন দিন বড় আকার ধারণ করছে। গর্তের কারণে যানবাহন চলতে যেমন হিমশিম খাচ্ছে, তেমনি এলাকাবাসি ও হাটঁতে কষ্ট হচ্ছে এই রাস্তার মধ্যে। গণমাধ্যমে স্হানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘শুনেছিলাম দুইমাসের মধ্যে কালভার্টের কাজ শেষ হবে, এখন ৮ মাস হলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। বড় বড় গর্তে রাস্তায় বেহাল দশা, নেই কোনো সংস্কার। চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এতো মানুষের দুর্ভোগ হলেও কারো কোনো খেয়ালই নেই।’
মুরাদপুর দিয়ে অনেকেই নিয়মিত চলাপেরা করেন। কিন্তু প্রতিদিন কাদা মাটিতে হাটঁতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে এলাকাবাসী ও পথচারীরা। সংকীর্ণ হাঁটার জায়গার মধ্যে ফুটপাটের কারণে জায়গা আরো সংকীর্ণ হয়ে গেছে। সবার জন্য অতিষ্ঠ যন্ত্রণার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে মুরাদপুর। হাটহাজারী, রাউজানের বাস মুরাদপুর মোড় থেকে ছেড়ে যাই। অক্সিজেনগামী মুরাদপুর মোড় বন্ধ থাকার কারণে এই বাসগুলো ২ নং গেইট দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। যার কারণে অনেক সময় ২ নং গেইটে যানজট দেখা দেই। নগরের ব্যস্ততম মোড়ের এত ধীরগতিতে কাজ করার কারণে বেহাল দশায় অতিষ্ঠ জনসাধারণ। গণমাধ্যমে কালভার্ট কাজে নিয়োজিত জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্ণেল শাহ আলী বলেন, ‘১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা খুলে দেব। সব কাজ এখনো শেষ হয়নি৷ কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হয়ে গেলে খুলে দিব। কাজের তত্ত্বাবধান করছে ওয়াসা।’ যদিও ওয়াসা বলছে, মুরাদপুর মোড়ের কালভার্টের নিচের কাজ শেষ হয়েছে। হালকা কিছু কাজ রয়েছে, তার জন্য কালভার্ট বন্ধ রাখার প্রয়োজন নেই। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা চাইলে উন্মুক্ত করে দিতে পারে কালভার্ট। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘মুরাদপুরে কানেকশনগুলো মাটির গভীর দিয়ে নিয়ে যেতে বলে। আমরা সে অনুযায়ী ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি, পাইপগুলো নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাজ করছে মূলত তারাই জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তবায়ন কারিরা, আমাদের সুপারভিশনটা হয়। বড় কাজগুলো শেষ। চাইলে কালভার্ট খুলে দিতে পারে।’ কিন্তু যে কালভার্টের জন্য এত দুর্ভোগ, সে কালভার্টের ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে তিনমাস আগে। নিচে সেবা সংস্হাগুলোর লাইন স্থানান্তর সম্পন্ন না হওয়াতে কালভার্টটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে এই সড়ক ব্যবহারকারিরা আটমাস ধরে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দীর্ঘ ৮ মাস ব্যস্ততম সড়কটি বন্ধ থাকার কারণে মুহাম্মদপুরের চিপাগলি দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে যানবাহনগুলো। খানাখন্দে ভরা মুহাম্মদপুর সড়কটি। এ সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে দুই মিনিটের জায়গায় আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা লেগে যায়। এ সড়কের সংস্কারও করছে না। এটি ছাড়া বিকল্প পথ পিলখানা দিয়ে যানবাহন চলাচলের সড়কটিও কালভার্ট নির্মাণের কারণে সে সড়কটিরও বেহাল দশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সড়কটি অভিভাবকেরা শিশুদের নিয়ে চলাচলের সময় বিপাকে পড়েন। রাস্তাটিতে বড় বড় খানা খন্দের কারণে স্কুল ভ্যানগাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। পথচারি ও এলাকাবাসি এর থেকে পরিত্রাণ চাই। এলাকাবাসি ও পথচারীদের একটাই দাবি, দ্রুত যেন মুরাদপুর মোড়ের কালভার্টটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। মুহাম্মদপুর, পিলখানা সড়ক দুইটির সংস্কার এবং অতিদ্রুত যেন অক্সিজেনগামী মুরাদপুর মোড়ের কালভার্ট টি রাস্তা সংস্কার করে খুলে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
সারাবাংলা/এসবিডিই
মুক্তমত মুরাদপুরে অক্সিজেন মুখী প্রবেশমুখ খুলবে কবে রায়হান উদ্দিন