Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রিকস ও নতুন বিশ্বব্যবস্থা: বিশ্ব এখন কোন মেরুতে?

মুক্তি বসু
৩০ আগস্ট ২০২৩ ১৬:০৯

চীন, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে ২০০৯ সালে গঠিত হওয়া ব্রিকস অর্থনৈতিক জোটটি এখন একটি আকর্ষণীয় জোটে পরিণত হচ্ছে। যার ফলে এই জোটটির পথচলায় সামিল হয়েছে আরো ৬ টি দেশ এবং এই গ্রুপে যোগ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে আরো ৪০ টি দেশ অর্থাৎ যার ধারা প্রবহমান নদীর মত এগিয়েই চলেছে। ব্রিকসের প্রকৃত আকর্ষণের মূলবিন্দু হলো এর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ব্যাপ্তি। ব্রিকসের দেশগুলো এখন ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে উন্নত অর্থনৈতিক জোট জি-৭ এর সম্মিলিত মোট দেশজ উৎপাদনের চেয়ে বেশি। সেই সাথে নতুন বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের পথ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, ব্রিকস দেশগুলো বৈশ্বিক জিডিপির ২৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। বলা বাহুল্য যে, বিদ্যমান পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থায় ব্রিকস এখন হয়ে উঠছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণের বিকল্প সারথি। এছাড়াও ব্রিকস প্লাটফর্মের মাধ্যমে এর সদস্যেরা বিশ্বমঞ্চে অর্থনৈতিক অবস্থানের পাশাপাশি তাদের একটি কূটনৈতিক অবস্থান তৈরিতেও সক্ষম হয়ে উঠছে। প্রথমদিকে এই জোট টি নিয়ে কেউ মাথা না ঘামালেও, এটি এখন হয়ে উঠছে জি-৭ এর ভূরাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও পাশ্চাত্য জোটের মাথা ব্যথার কারণ। এটি ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার একটি শক্তি হিসেবে ক্রমবর্ধমান অবস্থান নিচ্ছে। চীনের সাথে চলা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক যুদ্ধ এখন চরম সীমানায়। বেইজিংয়ের সাথে ওয়াশিংটনের বাণিজ্য যুদ্ধ ও ব্রিকসের এই চোখে পড়ার মত ক্রমবর্ধমান প্রসারতা, বৈশ্বিক এক নতুন মেরুকরণের নেপথ্যে কাজ করছে। চীন ও রাশিয়া তাদের প্রভাব বলয়ের বন্দরে ভেড়াচ্ছে বিনিয়োগ-বাণিজ্যে সম্ভাবনাময় ও প্রাকৃতিক সম্পদে প্রাচুর্য দেশগুলোকে, যার ফলে এই বলয়টি ক্রমান্বয়ে হচ্ছে শক্তিশালী। ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সময়ে বিশ্ব দেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আদর্শিক যুদ্ধ। বর্তমান শতাব্দীতে এসে বিশ্বজুড়ে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব বলয় শীতল যুদ্ধকে ক্রমশ উষ্ণ করে তুলেছে এর কিছু উদাহরণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান ইস্যু, চীনের বেল্ট এন্ড ইনিশিয়েটিভ কৌশল ও ব্রিকস। যা রীতিমতো চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের তীক্ষ্ণ চোখেরবালিতে পরিণত করছে। তাই এখানে এটাও বলা চলে, ব্রিকসের মাধ্যমে সারা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার বা অর্থনৈতিক জাগরণ সৃষ্টি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব স্থলনে চীনের এক প্রকার কৌশলগত জয় হিসেবে ধরা যায়। এতে স্পষ্ট ব্রিকস হলো যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালিঞ্জিং সৃষ্টিকারী সংস্থা। কিন্তু এর মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন সদস্য হিসেবে ব্রিকসে যোগদানের ঘোষণা ইস্যুটি এই প্রশ্ন টিকে সামনে রেখেছে যে, ব্রিকস কি আদৌ নতুন বিশ্বব্যবস্থার নেতৃত্ব দিতে পারবে কি না! তা নিয়ে বিশ্লেষকের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। একদল বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ব্রিকস যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিকল্প অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্তম্ভ হিসেবে আর্বিভূত হচ্ছে। যদিও এই ইস্যুতে অনেকে মন্তব্য করছেন যে, ব্রিকসে যোগ দিয়ে রিয়াদ ও আবুধাবি কার্যত ওয়াশিংটন থেকে এক পা দূরে সরেছে। কিন্তু ওয়াশিংটনের আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ক্রিষ্টিন দিওয়ান বলেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে বৈশ্বিক অংশীদারত্ব ও বৈচিত্র্যে আগ্রহী, তাই তারা আরো অনেক বহুজাতিক ফোরামে যোগ দিচ্ছে। অন্যদিকে, আরেকদল বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে ব্রিকসের প্রভাব আরো বৃদ্ধি পেলেও তা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার প্রতিস্থাপন করার পরিবর্তে বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থায় টুকরো টুকরো অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিকল্প তৈরি হওয়ার সম্ভবনা বেশি। তাই সঠিকভাবে এই প্রশ্নের সঠিক সমীকরণ মেলানো ভার। কিন্তু এটি দৃশ্যত যে, আর যাই হোক এটি পশ্চিমাদের চলমান উত্তেজনার আগুনে আরো ঘি ঢালবে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: বিএসএস, এমএসএস (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

সারাবাংলা/এসবিডিই

ব্রিকস ও নতুন বিশ্বব্যবস্থা: বিশ্ব এখন কোন মেরুতে? মুক্তমত মুক্তি বসু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর