Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনা যে কারণে ভারতের শ্রেষ্ঠ বিকল্প

তানজিব রহমান
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৯

অশান্ত মণিপুরে দ্রোহের অনলে পুড়ে যখন সব কিছু ছার খার ঠিক তার বিপরীত চিত্র বিরাজ করছে ভারতের আসাম রাজ্যে। আঞ্চলিক অসান্ত আসাম এখন সবার জন্য শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে পেরেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আসাম শান্তিতে আছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পদক্ষেপের কারণে আসাম ভারতের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ রাজ্যে পরিণত হয়েছে। তার এ কথা থেকেই ভারতের আঞ্চলিক শান্তির জন্য শেখ হাসিনার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ হলেও দু দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভাবেই সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তি যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভারত রক্তদিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশেকে ঘিরে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের নানা সমীকরণ চলছে। কে ক্ষমতায় আসবে? কেমন হবে আগামীর নির্বাচন তা নিয়েও দেশী-বিদেশী তৎপরতা লক্ষ্যনীয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, ভারত প্রত্যেকেই নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সমীকরণ মেলাতে বেশ প্রস্তুত। শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও প্রতিবেশীসহ সবরাষ্ট্রের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন তা আগামী দিনে কেমন হবে? শেখ হাসিনা সরকারই কেন বাংলাদেশ বা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে বেশী গ্রহণযোগ্য? বিষয়গুলো নিয়ে চলছে চুল-চেরা বিশ্লেষণ। শেখ হাসিনা সরকারের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সেভেন সিস্টার্সে শান্তি, আন্তবাণিজ্য যোগাযোগ-অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি, ও ভারতের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলো মোটা দাগে উঠে আসছে বিভিন্ন আলোচনায়। ভারতও তা স্বীকার করছে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক বিশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়; বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কারও জন্যই সুখকর হবে না বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। কারণ জামায়াতকে রাজনৈতিক ছাড় দেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা মৌলবাদের দখলে চলে যাবে এবং উদার পরিবেশ আর থাকবে না বলে মনে করছে ভারতের কূটনৈতিক মহল। যা বর্তমানে আমরা আফগানিস্তানে লক্ষ্য করছি। ভারত তার প্রতিবেশী পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের সাথে সবচেয়ে গভীর সম্পর্ক অতিবাহিত করছে। তাই ঢাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক এটা ওয়াশিংটনের মতো ভারতও চায়। কিন্তু যেভাবে শেখ হাসিনা সরকারকে অস্থির করার জন্য আমেরিকার পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ (ভিসা নীতি) দেখা যাচ্ছে, তা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য মোটেও ইতিবাচক নয় বলে তা ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তাই তারা বলছে আঞ্চলিক স্থিতি বজায় রাখার প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত জোট বিপজ্জনক তা এখন দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। আর এ বিষয়ে ভারত পশ্চিমকে কড়া বার্তা দিয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

আমেরিকার বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ও বিগত ১৪ বছর বাংলাদেশকে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের তালিকার মধ্যে ধরে রাখতে পারার ফলেই শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে জয়ী হবে বলে ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও রাজনীতির যোগ্য উত্তরাধীকারী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই নিজের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও মানবিকতার কারিশমা দিয়ে বহির্বিশ্বে বাংদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনা তাঁর সততা ন্যায়পরায়ণতা ও দুর্নীতিমুক্ত থাকার কারণে নিজেকে ও নিজের দেশকে বিশ্ব দরবারে অনন্য এক উচ্চতায় আসীন করেছেন যা তাঁর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা সরকার ভারতের আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে যতটা পারদর্শিতা দেখাতে পেরেছেন তা প্রতিবেশী হিসেবে অন্যকেউ পারেনি যেখানে তিনি অনন্য। সন্ত্রাস বাদ দমনে তিনি বাংলাদেশের মাটিকে ভারতের জন্য যতটা সুরক্ষিত রাখতে পেরেছেন তা ১৯৯১-৯৬ বা ২০০১-২০০৬ সরকারগুলো ব্যর্থ হয়েছিল। তখন উলফাসহ অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। চট্টগ্রামে দশট্রাক অস্ত্র আটক, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বাংলা ভাই-জেএমবি’র জঙ্গি উত্থান, সন্ত্রাস মাদক আর দূর্নীতির অভয়ারণ্যে নিমজ্জিত বাংলাদেশে থেকে আসাম ও অন্যান্য অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ ও চোরাচালান ছিল নিত্য ঘটনা। যা এখনো ভারতের নজরে আছে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আবারো সুদৃঢ় হতে শুরু করে ১৯৯৬ সালে গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তি, ১৯৯৭ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি’ বাংলাদশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট সরকার জয়লাভের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে নবতর অধ্যায় রচিত হয়। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর দুই দেশ দ্বিপক্ষীয়–আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বহু বিষয়ে মতৈক্য পোষণের প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসবিরোধী এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ–ভারত একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখন্ডের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রানজিট সুবিধা, ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা, সীমান্ত সমস্যা সমাধানে সম্মত, বাংলাদেশ কর্তৃক ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং ভারত কর্তৃক এক মিলিয়ন ডলার ঋণদান বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক আরো মজবুত করে। ২০১৪ সালে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফর করে সম্পর্ক উন্নয়নে ভিসা, বিদ্যুৎ, মৈত্রী এক্সপ্রেস, বাস চলাচলসহ ৬টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ২০১৫ সালের জুনে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০ কোটি টাকার ঋণ–বিষয়ক সমঝোতা, ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘোষণা, ৩ হাজার মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ, ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ রয়েছে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, মানব পাচার ও জাল মুদ্রা রোধ। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ৬৮ বছরের স্থলসীমান্ত সমস্যার সমাধান দুই দেশের সম্পর্কের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়।

 ২০১৮ সালে ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘বাংলাদেশ–ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’। ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং ৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের সরকার প্রধানদের এক ভার্চুয়ালি বৈঠকে জ্বালানি, সামাজিক উন্নয়ন, কৃষিসহ ৭টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে স্বাক্ষরিত হয় সাতটি সমঝোতা স্মারক। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ইস্যু, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানিবন্টন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পায়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রগতি হলে তার প্রভাব যেমন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পড়ে আবার তার বিপরীত ঘটলেও বাদ যাবেনা প্রতিবেশী বন্ধুরা। প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে গত ১৫ বছরে যে উচ্চতা দান করেছে তা অভাবনীয়। তাতেই হয়তো শেখ হাসিনার বিকল্প হিসেবে ভারতে অন্য কাউকে ভাবতে চাচ্ছে না। যা আনন্দ বাজার কিংবা অন্যান্য ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণে বার বার উঠে এসেছে।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক

সারাবাংলা/এসবিডিই

তানজিব রহমান মুক্তমত শেখ হাসিনা যে কারণে ভারতের শ্রেষ্ঠ বিকল্প

বিজ্ঞাপন

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

আরো

সম্পর্কিত খবর