পর্যটন অঞ্চল সুনামগঞ্জে প্রয়োজন সরকারের সুদৃষ্টি
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৫
সুনামগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম একটি জেলা। এই জেলায় থাকে পর্যটকদের ভীড়। বলা হয় সুনামগঞ্জ হাওরের দেশ। এই জেলাতেই আছে সুপরিচিত টাঙ্গুয়ার হাওর, আছে নীলাদ্রি লেক, শিমুল বাগান, লাকমা ছড়া, বারিক্কা টিলাসহ প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার বিভিন্ন স্পট। যেসব স্থানে ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ঘুরে আসার জন্য দূর থেকে ছুটে আসে।
ভারতের সাথে লাগোয়া এই জেলার রয়েছে নানান অবকাঠামোগত উন্নতির সুযোগ। এই অঞ্চলের মানুষের রয়েছে নানান অভিযোগ আর আক্ষেপ। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, হাওরের দেশ যেন তিলে তিলে হয়ে যাচ্ছে শেষ। এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখার কেউ নেই। উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া তারা পাচ্ছে না।
বিশেষ করে সুনামগঞ্জের মানুষরা বন্যার কারণে সারাবছর ক্ষতিগ্রস্থ থাকেন। তবে যখন বন্যা থাকে না তখনও এই হাওরবাসী থাকেন মহাকষ্টে। এরমধ্যে অন্যতম কষ্ট হচ্ছে সড়কের সমস্যা। সড়কের এই সমস্যা দীর্ঘদের। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ থেকে তাহেরপুর যাওয়ার পথে সড়কের অবস্থা বেশ মারাত্বক খারাপ দেখা যায়। সুনামগঞ্জের বাধাঘাট, বিশ্বস্তপুরসহ নানান স্থানেই সড়কের অবস্থা বেশ শোচনীয়।
অথচ এই অঞ্চলটা দেশের পর্যটন খাতের জন্য বিপুল সম্ভাবনাময় একটা অঞ্চল। এই অঞ্চলে হাওর আছে, পাহাড় আছে, ঝর্ণা আছে। আছে প্রকৃতির কাছে যাওয়ার মতো বেশকিছু স্থান। সারাদেশ থেকে এই অঞ্চলে মানুষ আসে। হাওরে নৌকার মাধ্যমে রাতে থাকে। অথচ এই অঞ্চলের সড়ক ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তাদের এখানে পর্যটকদেরকে ঘিরে কাজ ছাড়া খুব বেশি কাজ করার সুযোগ নেই। নেই কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান, নেই বড় কোনো পরিকল্পনা।
একইসাথে যেসব পর্যটন স্পট আছে সেসব স্থানেও নেই কোনো উন্নয়ন। যার কারণে পর্যটকরাও আগ্রহ হারাবেন ভ্রমণে। হাওরে যাওয়ার জন্য যেসব ঘাট রয়েছে সেখানে নেই কোনো শৃংখলা, নেই কোনো উন্নত ব্যবস্থা। শুধু কি তাই? নেই কোনো পাবলিক টয়েলট, নেই খাবার পনির ব্যবস্থা। এমন কঠিন পরিস্থিতে পর্যটকরা কতটুকুই আর নিজ উদ্যোগে এসব স্থানে ভ্রমণ করতে আসবে? এতে মোটা দাগে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের অর্থনীতি।
মনে রাখতে হবে সুনামগঞ্জ পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনাময়ী একটি জেলা। এই জেলায় পর্যটকদের জন্য রয়েছে বেশ সুন্দর সুন্দর স্থান। আর এই পর্যটন শিল্পকে রক্ষ করতে হলে অবশ্যই অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। এজন্য যেমন প্রয়োজন আবাসনের, ঠিক তেমনি প্রয়োজন নিরাপত্তারও। এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব বেশি জোরদার নয়। আবার হাওরের অপরপাশে যেখনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সেখানকার অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। নীলাদ্রি লেক থেকে লাকমা ছড়া যাওয়ার রাস্থাটি ছিলো সম্পূর্ণ ভযাবহ। এমন রাস্তা দিয়ে দেশের পর্যটকরা ভ্রমণ করতে হিমশিম খাবে, সেখানে বিদেশিরা কীভাবে আসবে আমার বোধগম্য নয়।
একইসাথে হাওরের ওপারে অর্থাৎ নীলাদ্রি লেক, লাকমা ছড়া এসব স্থানেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। এই পারে বাংলাদেশ তো ওই পাড়ে ভারত। পাহাড়ের উপরে অবস্থান করে বিএসএফ। ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীদের দেখা যায়। তবে বাংলাদেশের বিজিবির অস্থিত্ব দেখা পেলাম না। তবে লাকমা ছড়া, নীলাদ্রি লেক এসব স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত কীভাবে করবে পুলিশ সেটাও বড় ভাবনার বিষয়। এখাকার পরিবেশ ঠিক থাকলেও যেকোনো বাইরের মানুষ এখানে অনিরাপদ মনে করতেই পারে। আশাপাশে নেই কোনো আইন-শৃংখলা বাহিনীর অবস্থান। কোনো পুলিশবক্সও স্থাপন করেনি হাওরের ওপাড়ে। অথচ দিব্যি পর্যটকরা সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাওড়ের লোকজন এমনকি নৌকার মাঝিরাও বলে রাতে এই দিকে ছিনতাই-ডাকাতিও হয়। তাহেরপুর ঘাট থেকে পর্যটকরা নৌকায় উঠার আগে কিন্তু তাহেরপুর থানা থেকে অনুমতি নিতে হয়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে তারা অনুমতি দেওয়ার বেলা খুব বেশি তদারকি করেন না। আপনি কি ৫ জন যাচ্ছেন, নাকি ২০ জন যাচ্ছেন এটার কোনো সত্যতা তারা নিশ্চিত করেন না। তাদেও থানায় গিয়ে কেউ একজন কাগজপত্র জমা দিলেই মিলে যায় অনুমতি। অনুমতি মেলা নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। যতবেশি সহজ করা যাবে পর্যটকদের জন্য ততবেশিই ভালো। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সুনামগঞ্জের তাহেরপুর থানায় অনুমতি পত্র নিতে গেলে সকলের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হয়। এটা জমা দিলেও নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ধরনের সন্তোষজনক চিত্র দেখলাম না। যতটুকু বুঝা যায়, আপনি যদি হারিয়ে যান, কিংবা মারা যান এক্ষেত্রে আপনার পরিচয় নিশ্চত করতে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেওয়া হয়। এমন নিরাপত্তা নিয়ে পর্যটকরা কতটা আগ্রহ হবেন এসব স্থানে ভ্রমণ করার সেটাও ভাবার বিষয়।
পরিশেষে বলা যায়, পর্যটন অঞ্চল সুনামগঞ্জের প্রয়োজন সরকারের সুদৃষ্টির। এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান প্রয়োজন, সড়কের উন্নয়ন প্রয়োজন একইসাথে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন। সুনামগঞ্জে অবকাঠামোগত উন্নয়নে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের পাশাপাশি দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ভূমিকা রাখতে পারে। যা সর্বোপরি দেশের জন্য উপকার হবে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
সারাবাংলা/এজেডএস
আজহার মাহমুদ পর্যটন অঞ্চল সুনামগঞ্জে প্রয়োজন সরকারের সুদৃষ্টি