Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৃত্যুর সাথে লড়ছে শিক্ষার্থীরা, দায়ভার কার?

দেওয়ান রহমান
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৫০

চট্টগ্রাম শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী রাত সাড়ে আটটার শাটলট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন ও ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রতিদিনের নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম শহর থেকে টিউশন ও নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন মিটিয়ে রাত সাড়ে আটটার ট্রেনে চড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। ট্রেনের ভিতরে বসতে, এমনকি দাঁড়াতে না পারা শিক্ষার্থীদের প্রায়ই ট্রেনের ছাদে চড়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে দেখা যায়। যদিও এটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ তবুও শিক্ষার্থীদের দাবি তারা নিরুপায় হয়ে এই পদ্ধতিটি বেছে নেন।

বিজ্ঞাপন

ট্রেনের ছাদে চড়ার বিষয়টাকে যদি আইনের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয় তাহলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় – ‘ রেলওয়ে আইনের ১২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি বিপজ্জনক বা বেপরোয়া কার্যের দ্বারা অথবা অবহেলা করে কোনো যাত্রীর জীবন বিপন্ন করে, তবে তাঁর এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। ’ ছাদে ভ্রমণে সহযোগিতাকারীও অপরাধী উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাদে ভ্রমণকারী এবং ভ্রমণে উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদানকারী সমান অপরাধী।

বিজ্ঞাপন

তাহলে বলা যায় মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও শিক্ষার্থীদের ট্রেনের ছাদে ওঠাটা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এ ক্ষেত্রে এমন দুইটি প্রশ্ন উঠে আসে যেগুলোর জবাব না পাওয়া গেলে এককভাবে শিক্ষার্থীদের দায়ী করা যায় না। প্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ট্রেনের ছাদে চড়ার রীতিটা যুগযুগ ধরে চলে আসছে। এটি সম্পর্কে নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুব ভালো ভাবে অবগত। শিক্ষার্থীদের সতর্ককরণে প্রশাসন কি কোনো উদ্যোগ, বিজ্ঞপ্তি, আইন বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? তারা কি কখনো শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন? এর উত্তর হবে, না। এ ধরনের নজির কখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের ছাদে ওঠা থেকে নিরুৎসাহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় নিশ্চুপ ভূমিকায়!

শিক্ষার্থীরা যে অনেকাংশে বাধ্য হয়ে ট্রেনের ছাদে করে যাতায়াত করেন এতে কোনো সন্দেহ নেই এবং প্রশাসনেরও বিষয়টি সম্যক জানা আছে। ট্রেন লাইনের দুপাশে সারি সারি যে গাছগুলো আছে সেগুলোর ডালপালা এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে যে মিনিটখানেক অন্যমনস্ক থাকলে ছাদে চড়া যে কারো জন্য দুর্ঘটনা অবশ্যই ঘটবে। প্রশাসন কি কখনো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেনভ্রমনের ঝুঁকি কিঞ্চিৎ কমানোর আদৌ উদ্যোগ নিয়েছে?

দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দেয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সেটি হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা ট্রেন থাকতে ছাদে চড়েন কেন?

এর উত্তর দেয়ার আগে কয়েকটি তথ্য তুলে আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। সর্বশেষ হিসেব মতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০। এদের মধ্যে প্রায় ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী হলে ও ক্যাম্পাসের আশেপাশে এবং বাকিরা চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেন। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের টিউশন সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে যাতায়াত করতে হয় এবং শহরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার উদ্দেশ্য ক্যাম্পাসে আসতে হয়। শহর থেকে ক্যাম্পাস বেশ দূরে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শাটল ট্রেন।

বর্তমানে শহরের বটতলী স্টেশন থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত ০৯ বগি বিশিষ্ট দুইটি শাটল ট্রেন হাতেগোনা কয়েকটি শিডিউলে যাতায়াত করে। এখন কথা হচ্ছে, দৈনিক ১৫-২০ হাজার যাতায়াতকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শাটল ট্রেন, ট্রেনের বগির সংখ্যা এবং শিডিউল সংখ্যা কতটুকু যথেষ্ট? প্রতিদিনই দেখা যায় প্রতিটি ট্রেন তাদের নির্দিষ্ট শিডিউলে ধারণ ক্ষমতার চাইলে তিন-চারগুণ শিক্ষার্থী নিয়ে যাতায়াত করে। যার ফলে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ট্রেনের ভেতরে দাঁড়ানোর মতো জায়গাও নেই।

বেশ কয়েকবছর ধরে ট্রেন ও বগির সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন হয়েছে, ক্যাম্পাস অবরোধ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিয়েও শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।

তাহলে উপায় কী? যারা ট্রেনে দাঁড়ানোর জায়গাও পায় না, ছাদে চড়া ছাড়া তাদের জন্য বিকল্প সমাধান কী? এই সমাধান নিয়ে প্রশাসন কি কখনো কিছু ভেবেছে বা এখন ভাববে?

আবার যদি উল্লিখিত আইনে ফিরে আসি তাহলে আমরা দেখি আইনে উল্লিখিত আছে ‘ ছাদে ভ্রমনে উৎসাহ প্রদানকারী ’ ও সমান শাস্তিযোগ্য অপরাধী। এখানে উৎসাহ প্রদানকারী কারা তা জাতির কাছে প্রশ্নতোলা রইলো।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি সম্মান রেখেই বলবো, অনেক হয়েছে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের। যাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তারা আপনাদেরই শিক্ষার্থী। তাদের ক্ষয়ক্ষতি প্রকারান্তরে আপনাদেরই ক্ষয়ক্ষতি। দয়া করে এবার একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিন। জাতির ভবিষ্যৎ যাদের হাতে তাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে জাতিকে পঙ্গু করে দিবেন না।

শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা ছাদে চড়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। সাময়িক কষ্টের চাইতে আপনাদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি! প্রতিবাদ হোক সচেতনতা বজায় রেখে।

লেখক: শিক্ষার্থী : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এজেডএস

দেওয়ান রহমান মৃত্যুর সাথে লড়ছে শিক্ষার্থীরা দায়ভার কার?

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর