Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এলোমেলো ব্যাটিং আর কতকাল?

আজহার মাহমুদ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:০৩

বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোন জিনিসটা সবচেয়ে ধারাবাহিক এমন প্রশ্নের উত্তর এই মুহুর্তে কোনো সংকোচ ছাড়াই বলা যায় এলোমেলো ব্যাটিং। বিগত ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে এই এশিয়া কাপ পর্যন্ত আমাদের ব্যাটিং লাইনআপ কখনও একজায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো না। ওয়ানডেতেও ওপেনার পরিবর্তনের গল্প পুরাতন। লিটন, সৌম্য, মিরাজ, বিজয়, নাঈম শেখ রনিসহ এমন একজনের পর একজন আসা যাওয়ার গল্প লিখেছেন।

তামিম যতদিন ছিলো একদিকে সে থাকলে বাকি একদিকে পরিবর্তনের গল্প নিয়মিত লিখে যাচ্ছিলো নির্বাচকরা। এভাবে তিন নম্বর পজিশন থেকে সাত-আট নম্বর পজিশন পর্যন্ত প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়েছে। কেউ একজন খেলোয়াড় বলতে পারবে না সে এই পজিশনে একদম পাকাপাকি ভাবে খেলবে। এই যেমন এই এশিয়া কাপে আফগানদের বিপক্ষে শান্তকে তিন থেকে চারে নিয়ে গেছে। আবার তৌহিদ হৃদয়কে চার থেকে তিনে এনেছে। যে সাকিব ১৯ বিশ্বকাপে তিন নম্বরে খেলে সফল হয়েছে সেই সাকিব এখন খেলছে পাঁচ নম্বরে। মুশফিকের চার নম্বর ছেঢ়ে দেওয়া আর ছয়ে যাওয়া নিয়েও গল্প আছে। রিয়াদের বাদ পড়া আর সাতে নিয়মিত পরিবর্তন হওয়াটা এখন আর নতুন কিছু নয়।

বিজ্ঞাপন

এভাবে যখন ব্যাটিং লাইনআপ সাজানো হয় তখন এই দোষ কার ঘাড়ের উপর চাপানো যায় সেটা নিয়েই আছে সন্দীহান। এবারের এশিয়া কাপে আমাদের পারফর্মেন্স কোনোভাবেই ভালো বলা যাবে না। অন্তত এশিয়া কাপের তিন ম্যাচ বিবেচনা করলে এটা বলা যাবে না। আমাদের দুটো ম্যাচেই দুশ রানের আগেই খেলা শেষ করতে হয়েছে। তাও আবার সবকটি উইকেট হারিয়ে হাতে ১০ ওভারের বেশি বল বাকি রেখে। এটা ভাবতেই কেমন জানি লাগে। অথচ আমরা না-কি ওয়ানডেতে সবচেয়ে ভালো করি।

পরিসংখ্যান দেখলে বলা যায়, গত এক দশকে নিজেদের বিশ্বের অন্যতম সেরা ওয়ানডে ক্রিকেট দলে পরিণত করেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে এখনও নিজেদের জায়গা করে নিতে পারলেও ৫০ ওভারের ফরম্যাটে টাইগাররা যে কোনো দলের জন্যই বিপজ্জনক এ কথা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে মাঠে। কিন্তু সেটা কোনো টুর্ণামেন্টে গেলে আমরা ধরে রাখতে পারি না। শেষ এশিয়া কাপে আমাদের যা তা অবস্থা ছিলো। এর আগের দুই এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। তারমধ্যে একটা টি-টুয়েন্টি আরেকটা ওয়ানডে। ২০১২ সালেও বাংলাদেশ একবার ফাইনালে উঠে। সেবার পাকিস্তানের সাথে ফাইনালে হৃদয় বিদারকভাবে হারলে পরের দুবার বাংলাদেশকে কাদিয়েছে ভারত।

বিজ্ঞাপন

এই তিনবারের দুবারই ওয়ানডে ফরম্যটে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলেছে। ওয়ানডে সুপার লিগেও বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে শেষ করেছে। কিন্তু দিনশেষে সফলতার ছোঁয়া থেকে প্রতিবারই দূরে থাকতে হয়। এবারের এশিয়া কাপ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে হওয়ায় ওয়ানডে ফরম্যটে হবে। সবমিলিয়ে দুটো ওয়ানডে টুর্ণামেন্ট খেলবে বাংলাদেশ। যার প্রথমটি এশিয়া কাপ দিয়ে শুরু করেছে। কিন্তু শুরুতেই যা অবস্থা তাতে এখন বিশ্বকাপ নিয়ে আশা কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। যাদের সাথে আর কিছুদিন পর আমাদের বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা হবে এই একই ফরম্যটে তাদের সাথেই আমরা হারছি লজ্জাজনকভাবে।

প্রতিবছরই কোনো না কোনো টুর্ণামেন্ট আসে আর এদেশের ক্রিকেট ভক্তরা হতাশ হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শুরুতেই হতাশ করেছে শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচ দিয়ে। এরপর আফগানদের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করে আরও একবার আশা জাগিয়েছে। আমরা তখন ধরে নিতেই পারি প্রথম ম্যাচটা আমাদের ভুল ছিলো তাই এমন হয়েছে। আর এক ম্যাচ ছন্দপতন হতেই পারে। কিন্তু সবশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে একইভাবে লজ্জাজনক হার দিয়ে শুরু করাটা বেশ ভয়ের। এটা আমাদের বিশ্বকাপের জন্য আশনীসংকেত। এই শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারতের সাথে যদি জিততে না পারি তাহলে কখনও বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখা যাবে না। বিশ্বকাপ দূরের কথা, এশিয়া কাপ জেতার স্বপ্নটাও ভুলে যেতে হবে।

আরেকটা অবাক করা বিষয় হচ্ছে, আমাদের ক্রিকেট ভক্ত থেকে শুরু করে ক্রিকে সংশ্লিষ্ট সকলের মুখে সবসময় বিশ্বকাপ নিয়ে আশার কথা শোনা যায়। যেন যত চিন্তা-ভাবনা সব বিশ্বকাপ নিয়ে। অথচ আমাদের প্রথম টার্গেট হওয়া উচিত ছিলো এশিয়া কাপ। এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্নটা হওয়া উচিত ছিলো বড়। কিন্তু আমরা সবসময় কথা বলতে দেখি বিশ্বকাপ নিয়ে।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরের ও নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প নাই। এই ম্যাচে না জিতলে এশিয়া কাপ থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা প্রচুর। আর জিতলেও পরের ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে অবশ্যই জিততে হবে। তবেই এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে পারবে বাংলাদেশ।

এই ফরম্যাটে আমরা ভালো খেলছি শেষ ৫/৭ বছরের বেশি। সুতরাং এই ফরম্যাটে আমাদের উচিত ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা। একইসাথে লড়াই করা। মাঠে ধৈর্য্য ধরে ব্যাটিং করা। ভুল না করা। সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি জরুরী সেটা হচ্ছে ব্যাটারদের দায়িত্ব নিয়ে খেলা। ব্যাটিংয়ে যদি বাংলাদেশ ভালো করে তাহলেই সাকিবের দল সফল হবে এশিয়া কাপে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সারাবাংলা/এজেডএস

আজহার মাহমুদ এলোমেলো ব্যাটিং আর কতকাল?

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর