Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন দিগন্তে যোগাযোগ ব্যবস্থা

সুকান্ত দাস
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৩

দক্ষ নাবিকের হাতে যদি কোনো জাহাজের দায়িত্ব থাকে তাহলে মাঝ সমুদ্রে যতই ভয়ংকর তুফান উঠুক না কেনো জাহাজ দিক হারায় না। পরিবারের কর্তা যদি দক্ষ হয় তাহলে পরিবারের সবাই সঠিক পথে চলে। তেমনি কোনো দেশের নেতৃত্বে যদি আপোষহীন, লোভহীন, সৎ, নির্ভীক মনোভাবাপন্ন কেউ থাকে তাহলে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। দেশ যখন এগিয়ে যাওয়ার বদলে পিছিয়ে পড়ছিলো ঠিক সেইরকম একটি সময় দেশের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু তনয়া বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

বর্তমান সরকারের সময়ে অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যাবস্থার অসামান্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দেশের সামর্থ্যের প্রতীক বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতু, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকায় দ্রুত গতির উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল, হাওড়ের মধ্যের সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম- কক্সবাজার রেললাইন,কর্ণফুলী টানেল সহ প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওয়ার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগ্রামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বদ্দারহাট ফ্লাইওভারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

দেশের যেসব জায়গায় আগে হেটে যাওয়াও কষ্টকর ছিলো সেসব জায়গায় এখন উন্নত রাস্তা হয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে।

তবে পদ্মা সেতু নির্মাণের যাত্রা সুখকর ছিলো না। অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে। ২০১০ সালে পরামর্শক সেতুর প্রাথমিক নকশা সম্পন্ন করে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়।

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি হয়। একই বছরের ১৮ মে জাইকার সঙ্গে সরকারের ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং ৬ জুন এডিবির সঙ্গে ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণচুক্তি হয়। ২০১১ সালের ১০ অক্টোবরে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক।

পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। ৮ জুলাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা সংসদে পেশ করেন তিনি। একজন অসীম সাহসী নেতার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত কীভাবে দেশের একটা অংশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে তা এই ঘটনা দেখলেই বোঝা যায়। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬.১৫ কিলোমিটার এ সেতু নির্মাণে ব্যায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু দক্ষিণ বঙ্গের ২১ টি জেলায় স্বর্ণযুগের সূচনা করেছে। বেকারত্ব কমে যাবে এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

ফেরি পারাপারে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করা লাগতো। এখন ১০ মিনিটের মধ্যে নদী পার হওয়া যায়।

কিছুদিন আগে উদ্বোধন হওয়া ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর রাজধানীর চিরায়ত যানজট কমে যাবে। তখন বাইরের জেলার কোনো বাস এবং ট্রাক ঢাকা শহরের মধ্যে না ঢুকে গন্তব্যে পৌঁছে যাবে খুবই কম সময়ের মধ্যে। কর্মঘণ্টা বেঁচে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এটা অনেক বড় একটি অর্জন।

মেট্রোরেল চালু হয়েছে। যেখানে যেতে আগে ২ ঘন্টা লাগতো সেই জায়গায় ১০ মিনিটে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ। মেট্রোরেলের সব লাইনের কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত হলে ঢাকার চেহারা বদলে যাবে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন সড়কে চলছে কর্মযজ্ঞ। কোথাও রাস্তার চারলেনের কাজ চলছে, কোথাও সেতু হচ্ছে। আগে খুলনা থেকে বরিশাল যেতে ৬-৭ ঘন্টা সময় লাগতো। এখন বেকুটিয়া ব্রিজ হয়ে সময় লাগে ৩-৪ ঘন্টার মতো।

নড়াইলে মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনবিশিষ্ট মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান সেতু।

বাংলাদেশকে একই নেটওয়ার্কের মধ্যে আনতে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেলযোগাযোগ স্থাপনের জন্য পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, তিস্তা সেতু, পায়রা সেতু, দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু সহ বহু সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ এবং পুনঃনির্মাণ করেছে, পাশাপাশি কাজও চলমান আছে। এছাড়া সংবাদ মাধ্যমের তথ্য মতে ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করেছে । ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ, ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করেছে বর্তমান সরকার।

কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে এটি। এর দৈর্ঘ ৩.৪৩ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই সুড়ঙ্গটি দেশের সর্বপ্রথম এবং দীর্ঘ সুড়ঙ্গ পথ। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে।

এরকম বহু সড়ক, মহাসড়ক নির্মিত হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। এই সকল কাজও একজন দক্ষ নেতার নেতৃত্বে হচ্ছে। বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক এটাই কাম্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

সারাবাংলা/এসবিডিই

মুক্তমত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন দিগন্তে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুকান্ত দাস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর