Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের ভরসা আজ শেখ হাসিনা

খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:২৫

মুক্ত আকাশে, বিশুদ্ধ বাতাসে নায্য দু’ মুঠো আহারের জন্য বাংলার মানুষের সহস্র বছরের সংগ্রামের ইতিহাস। স্বাধীনতাকামী, মানুষের রক্ত মিশ্রিত এই বাংলার ভূখণ্ড সৃষ্টিকর্তার রহমতের বর্ষণে উর্বর মৃত্তিকা বারবার সবুজ প্রকৃতি সমৃদ্ধ করেছে খাদ্য ভান্ডার। প্রাচুর্যতা বাংলার মানুষকে মহান ও করেনি বা খ্রিষ্টের সম্মান ও দেয়নি। শত সংগ্রাম-লড়াইয়ের স্বার্থকতা এনে দিতে সৃষ্টিকর্তা দুর্ভাগা মানুষের মাঝে প্রেরণ করেন শেখ মুজিবকে। যিনি টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের শেখ মুজিবুর রহমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। সেখানেই ক্ষান্ত যাননি, নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন পূর্ব পাকিস্তানের বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের জাতির পিতা। সেই সাথে ঘাতক, শোষকদের হাত থেকে স্বাধীনতা এনে দেন বাংলার মানুষকে। সৃষ্টি করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে। বঙ্গবন্ধু শুধু স্বপ্ন দেখতেন না বাস্তবায়ন করে মানুষকেও স্বপ্ন দেখাতেন। বর্জ্রকন্ঠে, মায়াবী সুরে ‘ভায়েরা আমার’ ডাকে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলার অন্যতম ভিত্তি ছিল কৃষি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় সার আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে। আমরা কেন অন্যের কাছে খাদ্য ভিক্ষা চাইবো? আমাদের উর্বর জমি আছে আমাদের অবারিত প্রাকৃতিক সম্পদ, আমাদের পরিশ্রমী মানুষ, আমাদের গবেষণা সম্প্রসারণ কাজে সমন্বয় করে আমরা খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণতা অর্জন করবো। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার।” বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় আজ আমরা খাদ্যে স্বংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি।

স্বাধীনতার ঊষালগ্নে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে তিনি দেশে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। শুরু হয় কৃষিতে গ্রামীণ উন্নয়ন আর আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার। মওকুফ করেন ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনার দায়। প্রত্যাহার করেন লাখ লাখ কৃষি ঋণের সার্টিফিকেট মামলা; ভূমিহীন কৃষকের নামে বিতরণ করা হয় খাসজমি; দেশে প্রথম প্রবর্তন করা হয় কৃষি ঋণ ব্যবস্থার এবং ’৭৩ এর ৭নং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় কৃষি ব্যাংক; গঠন করা হয় কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার তহবিল। মানসম্মত বীজ, সারের কারখানা প্রতিষ্ঠা, সেচ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুকরণ, বালাইনাশক কারখানা তৈরি, বন্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বাঁধ নির্মাণ, কৃষির আধুনিক যান্ত্রিকীকরণ, সমন্বিত কৃষি বাস্তবায়ন, জমির প্রকৃতি বুঝে ফসল ফলানো, সময় মতো ফসল উৎপাদন, জরিপ করেই কেবল পরিকল্পনা গ্রহণ, রবি মৌসুমে বেশি করে ফসল ফলানোর তাগিদ, শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হওয়া, কৃষিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলাসহ কৃষি উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির অগণিত কার্যক্রম। ১৯৭২-৭৩ সালে ৫০০ কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ছিল এর মধ্যে ১০১ কোটি টাকা শুধু কৃষি উন্নয়নের জন্য রাখা হয়েছিল।

তাইতো যে বজ্র কণ্ঠে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা, সে কণ্ঠেই ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষিত হয়-কৃষিবিদদের আর্থসামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি তথা প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা। কৃষিবিদদের মর্যাদার স্বীকৃতির ঘোষণাই শুধু নয়, কৃষি গবেষণা ও শিক্ষায় মেধাবীদের আকর্ষণ করার লক্ষ্যে বৃত্তি বরাদ্দ বাড়ানো হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় একক ও বহুমুখী কৃষিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ’৭৩-এর ১০নং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। ধান ব্যতিরেকে বহুমুখী ফসল গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে। পুর্নগঠন করা হয় হর্টিকালচার বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, সিড সার্টিফিকেশন এজেন্সি, রাবার উন্নয়ন কার্যক্রম, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ গবেষণা সমন্বয়ের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল। সোনালি আঁশের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় পাট মন্ত্রণালয়।

সোনার বাংলাকে যাদের মেনে নিতে কষ্ট হতো সেসব ঘাতকদের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শুধু আমরা জাতির পিতাকে হারায়নি, হারিয়েছি বঙ্গবন্ধুর স্বপের বাংলাকে। তারপর থেকেই কৃষিতে নেমে আসে আধাঁরের ঘনঘটা। ১৯৯১-৯৬ আমলে সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কৃষকদের আন্দোলনের একপর্যায়ে বিএনপি সরকার আন্দোলন দমাতে কৃষকের বুকে গুলি করে। মারা যান ১৭ কৃষক, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সার কেলেঙ্কারীর কালো অধ্যায় নামে পরিচিত।

সেই কালো অধ্যায়কে ঘুচিয়ে, বঙ্গবন্ধুর মতোই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারের দাম হ্রাস ও পুর্নবিন্যাস করে জমিতে সুষম সার প্রয়োগের ব্যবস্থা করেন। কৃষকের সার প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করা, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা, সার- সেচ-ট্রাক্টর বা অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের কাছে যথাসম্ভব সহজলভ্য করার জন্য ভর্তুকি প্রদান করা হয়। কৃষি গবেষণার সাফল্যের কারণে কৃষিক্ষেত্রে উচ্চফলনশীল জাতের পাশাপাশি নানাপ্রকার কৃষি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। এসব প্রযুক্তির কোনো কোনোটা কৃষকের মাঠে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। দেশে ভুট্টার হাইব্রিড জাতসহ ধান ও সবজিরও হাইব্রিড জাত প্রবর্তন করা হয়। অন্যান্য ফসলের মধ্যে আমাদের দেশে আলুর অনেক জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয় তেলজাত ফসল, ডাল, মসলা ফসলেরও। ফসলের উন্নত জাতের বীজপ্রাপ্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন উন্নত কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করে দেশের খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করতে। বঙ্গবন্ধু কন্যার শাসনামলে দেশে আজ দানাশস্য উৎপাদন হচ্ছে চার গুণ। কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার যে ভিত্তি বঙ্গবন্ধু গড়ে গিয়েছিলেন, তাঁর সে ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে আজ কৃষিক্ষেত্রে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

পিতার দেখানো পথে, কৃষিবিদদের মর্যাদা নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে শেখ হাসিনা ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে জমি বরাদ্দসহ দিকনির্দেশনা দেন কৃষিবিদ ও কৃষকের মর্যাদার প্রতীক পেশাজীবী সংগঠনের প্রাণকেন্দ্র কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার দেয়া প্রণোদনায় দেশের বরেণ্য বিজ্ঞানীদের দ্বারাই উন্মোচিত হয় পাট ও ক্ষতিকর ছত্রাকের, ইলিশ, ভেড়ার জিনোম রহস্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহতী উদ্যোগ হতদরিদ্রের জন্য চালু হয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। তা বাস্তবায়নে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়া হচ্ছে। বছরের ৫ মাস দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার কার্যক্রম চালু করেছে সরকার। সবথেকে বড় সাফল্যের কথা বলতে গেলে অবশ্যই বলতে হবে সদ্য কোভিড-১৯ মহামারীতে খাদ্যের অভাবে একজন ব্যক্তিকেও মরতে হইনি। ঘাতক মহামারীর শুরু থেকে দক্ষতা ও কৃষিবান্ধব নেতৃত্ব এর প্রমান স্বরূপ এপ্রিল ২০২০ এ কৃষিখাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদান করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকণ্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে, ইলিশ উৎপাদনে ১ম, পাট রপ্তানিতে ১ম, ধান উৎপাদনে ৩য়, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম উৎপাদনে ৭ম, আলু উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম, চা উৎপাদনে ৯ম স্থানে বিশ্বপরিমণ্ডলে সমাদৃত।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দেয়া ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যেখানে বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করেও বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের গর্বিত দেশ। কৃষিতে তাক লাগানো এ সাফল্যের নেপথ্যের প্রেরণা আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা আর স্বাধীনতা অর্জনের মহানায়ক, ইতিহাসের রাখাল রাজা, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭৫ এর আগষ্ট মাসে এতিম হয়ে যাওয়া বাংলা তার পিতার সোনার বাংলার স্বপ্নকে আজ খুজে পায় শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশে। এতিম বাংলা তার পিতাকে খুজে পায় শেখ হাসিনার কর্মে।

লেখক: কৃষিবিদ ও সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ

সারাবাংলা/এসবিডিই

খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বাংলাদেশের ভরসা আজ শেখ হাসিনা মুক্তমত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর